বাবা-মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর।
বুধবার (১৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠের পাশে কবরস্থানে তার দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। এরআগে সকাল পৌনে ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের হিমঘর থেকে তার মরদেহ নগরীর সিটি চার্চে নেওয়া হয়। সেখানে ধর্মীয় আচার শেষে ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। পৌনে ১০টার দিকে শিল্পীর কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার ভক্তরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১১ টায় দাফনের জন্য নগরীর কালেক্টরেট মাঠের পাশে কবরস্থানে আনা হয় তার মরদেহ।
এন্ড্রু কিশোরের বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস জানান, সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রস্তুতি না থাকা এবং করোনাভাইরাসের কারণে তা আর করা হচ্ছে না। সিটি চার্চে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছু সময় রাখা হয়। এরপর রাজশাহীর সার্কিট হাউস ও কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে খ্রিষ্ট্রীয় কবরস্থানে তার পছন্দ করা জায়গাতে সমাহিত করা হয় তাকে। এই কবরস্থানেই সমাহিত হয়েছেন শিল্পীর বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মা মিনু বাড়ৈ। জায়গাটি তিনি আগেই দেখিয়ে দিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি।
রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া তুমুল জনপ্রিয় প্লেব্যাক সম্রাট খ্যাত এন্ড্রু কিশোর প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতা এ শিল্পী অনেকদিন ধরেই ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চিকিৎসার পরও দ্বিতীয়দফায় তার দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধে। ফলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। তাই শিল্পীর ইচ্ছায় গত ১১ জুন তাকে দেশে আনা হয়। এরপর থেকে রাজশাহীতে তিনি বোনের বাসায় ছিলেন। গত ৬ জুলাই সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এ কণ্ঠশিল্পী।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিল্পীর স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আহ্বান জানিয়েছে রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও। ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খোকন এই কর্মসূচির কথা জানান।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার ঘোষ জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বড় আয়োজনে এই কিংবদন্তিতে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ নেই। তাই মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দেশবাসীকেও তিনি এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।