৫০ এর দশকে থিয়েটারে ঋদ্ধ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার সিনেপাড়ায় ঘুরতেন। স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। একের পর এক পরিচালকদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। নিজের ওপর আস্থা হারাননি সৌমিত্র। নিজের ওপর আস্থা হারালে শিল্পীর আত্মা মরে যায় এ বোধ তার ছিল
সংগৃহীত
হাসান শাওন
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৩৪ এএমআপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৩৪ এএম
১৯৩৫ সালের আজকের দিন ১৯ জানুয়ারি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জন্মেছিলেন।
শুভ জন্মদিন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়!
মর্তের ভালোবাসা পৌঁছে দিন আপনার প্রিয় মানিক'দাকে। মৃণাল'দাসহ আরো অনেককে পাবেন সেখানে। মঙ্গলআলোয় উদ্ভাসিত হোক আপনার অনন্তলোক। শুভ দিনে এর বেশি আর কী প্রার্থনা করতে পারি?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষ ছিলেন আমাদের জনপদ কুষ্টিয়ার। একে পরিচিত করানোর দায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি কর্তাদের বোধে কোনো দিন আসবে বলে মনেহয় না। তেমন শাসকগোষ্ঠী আমাদের বিধিতে নেই।
একের পর এক প্রত্যাখ্যান কি জীবনকে পূর্ণ করে? এর উত্তর "হ্যাঁ" করেছেন একজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৫০ এর দশকে থিয়েটারে ঋদ্ধ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার সিনেপাড়ায় ঘুরতেন। স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। একের পর এক পরিচালকদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। নিজের ওপর আস্থা হারাননি সৌমিত্র। নিজের ওপর আস্থা হারালে শিল্পীর আত্মা মরে যায় এ বোধ তার ছিল।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে আবিস্কার করেন একমাত্র জহুরি মানিক’দা খ্যাত সত্যজিৎ রায়। যেন পাজরে পাজর জোড়া লাগে। শক্তিমান অভিনেতা আর অপার প্রতিভাধর পরিচালকের যুগল বন্দিতে বাংলা চলচ্চিত্র ডানা মেলে পৌঁছে নতুন উচ্চতায়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিরই কেন্দ্রিয় চরিত্র সৌমিত্র। সত্যজিৎ এর মানসপুত্র হিসেবে খ্যাত হন তিনি। অন্য অনেক মাধ্যমের মতো সিনেমাও যে গুরুবাদী শিল্প তার প্রামাণ্য ঋণ রাখেন সৌমিত্র। সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণের পর তাকে নিয়ে বই লিখেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এর নাম "মানিক'দার সঙ্গে"। এটি ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে "দা মাস্টার এন্ড আই" নামে।
সত্যজিৎ অনন্তলোকে পাড়ি দেওয়ার পর সৌমিত্র বহু বছর বহু চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। কিন্তু বাঙালি তাকে মনে রাখে সত্যজিৎ অঙ্কিত নামেই। কারো কাছে তিনি অপু, কারো কাছে ফেলুদা। বেশি করে মনে পড়ে তার জুলুমবাজ রাজত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লবী উচ্চারণ "দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।" আহা! এ উচ্চারণের কী অভাব এখন!
বছর, দশক, যুগ পেরিয়ে যায় কিন্তু বাঙালির ভালোবাসার ভিত্তি জুড়ে একাত্ম হয়ে থাকেন মানিক আর সৌমিত্র। নতুন চিত্রভাষার নতুন নির্মাতার নতুন ছবি আসা থেমে নেই। সত্যজিৎ, সৌমিত্র জুটির ফ্যানবেইজ এতে পড়ে না এতটুকু তলানিতে। বরং এখানের নির্মাতারা নতুনভাবে নানা কায়দায় সত্যজিৎ, সৌমিত্র ধারায় ফিরে আসছেন। হৃদয়ের কিছু তো আর গিলে ফেলা যায় না। তা ধারণ করতে হয় মননে, মগজে।
কলকাতা সিটি কলেজে পড়াকালে কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে তার পরিচয়। সেই থেকে তার জীবনের পণ অভিনয়। ৩শ’র বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। কিন্তু ভুলে যাননি থিয়েটার। শেষ জীবনেও এর সঙ্গে যুক্ততা ছিল তার। অজস্র টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন আমৃত্যু। কিন্তু "টাইম নেই" বলে সেলিব্রেটি স্টারডম দেখাননি কখনো আলো ছায়া আর সরাসরি দর্শকের সামনে পরিবেশিত শিল্প মঞ্চ নাটককে। নাটক লিখেছেন, পরিচালনাও করেছেন।
অনবদ্য কবিতা লিখতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আবৃত্তিতে ছিলেন স্বকীয়। কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। কণ্ঠ দিয়েছেন বহু পরিবেশনায়। ৮৫ বছরের জীবনে রুচি সম্মত শিল্পের এক অনন্য ব্যক্তিরূপী প্রতিষ্ঠান হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
তার চলে যাওয়ার পর যেন সব শূন্য। লাগে অপুহীন সারাবেলা।
ফ্রিল্যান্স লেখক ও সাংবাদিক হাসান শাওনের জন্ম, বেড়ে ওঠা রাজধানীর মিরপুরে। পড়াশোনা করেছেন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বাঙলা কলেজ, বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। ২০০৫ সাল থেকে তিনি লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কাজ করেছেন সমকাল, বণিক বার্তা, ক্যানভাস ম্যাগাজিন ও আজকের পত্রিকায়।
২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর হাসান শাওনের প্রথম বই “হুমায়ূনকে নিয়ে” প্রকাশিত হয়।
অম্লান সৌমিত্রের জন্মদিন
৫০ এর দশকে থিয়েটারে ঋদ্ধ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার সিনেপাড়ায় ঘুরতেন। স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। একের পর এক পরিচালকদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। নিজের ওপর আস্থা হারাননি সৌমিত্র। নিজের ওপর আস্থা হারালে শিল্পীর আত্মা মরে যায় এ বোধ তার ছিল
১৯৩৫ সালের আজকের দিন ১৯ জানুয়ারি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জন্মেছিলেন।
শুভ জন্মদিন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়!
মর্তের ভালোবাসা পৌঁছে দিন আপনার প্রিয় মানিক'দাকে। মৃণাল'দাসহ আরো অনেককে পাবেন সেখানে। মঙ্গলআলোয় উদ্ভাসিত হোক আপনার অনন্তলোক। শুভ দিনে এর বেশি আর কী প্রার্থনা করতে পারি?
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পূর্বপুরুষ ছিলেন আমাদের জনপদ কুষ্টিয়ার। একে পরিচিত করানোর দায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি কর্তাদের বোধে কোনো দিন আসবে বলে মনেহয় না। তেমন শাসকগোষ্ঠী আমাদের বিধিতে নেই।
একের পর এক প্রত্যাখ্যান কি জীবনকে পূর্ণ করে? এর উত্তর "হ্যাঁ" করেছেন একজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৫০ এর দশকে থিয়েটারে ঋদ্ধ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার সিনেপাড়ায় ঘুরতেন। স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। একের পর এক পরিচালকদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হন তিনি। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। নিজের ওপর আস্থা হারাননি সৌমিত্র। নিজের ওপর আস্থা হারালে শিল্পীর আত্মা মরে যায় এ বোধ তার ছিল।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে আবিস্কার করেন একমাত্র জহুরি মানিক’দা খ্যাত সত্যজিৎ রায়। যেন পাজরে পাজর জোড়া লাগে। শক্তিমান অভিনেতা আর অপার প্রতিভাধর পরিচালকের যুগল বন্দিতে বাংলা চলচ্চিত্র ডানা মেলে পৌঁছে নতুন উচ্চতায়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিরই কেন্দ্রিয় চরিত্র সৌমিত্র। সত্যজিৎ এর মানসপুত্র হিসেবে খ্যাত হন তিনি। অন্য অনেক মাধ্যমের মতো সিনেমাও যে গুরুবাদী শিল্প তার প্রামাণ্য ঋণ রাখেন সৌমিত্র। সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণের পর তাকে নিয়ে বই লিখেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এর নাম "মানিক'দার সঙ্গে"। এটি ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে "দা মাস্টার এন্ড আই" নামে।
সত্যজিৎ অনন্তলোকে পাড়ি দেওয়ার পর সৌমিত্র বহু বছর বহু চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। কিন্তু বাঙালি তাকে মনে রাখে সত্যজিৎ অঙ্কিত নামেই। কারো কাছে তিনি অপু, কারো কাছে ফেলুদা। বেশি করে মনে পড়ে তার জুলুমবাজ রাজত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লবী উচ্চারণ "দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।" আহা! এ উচ্চারণের কী অভাব এখন!
বছর, দশক, যুগ পেরিয়ে যায় কিন্তু বাঙালির ভালোবাসার ভিত্তি জুড়ে একাত্ম হয়ে থাকেন মানিক আর সৌমিত্র। নতুন চিত্রভাষার নতুন নির্মাতার নতুন ছবি আসা থেমে নেই। সত্যজিৎ, সৌমিত্র জুটির ফ্যানবেইজ এতে পড়ে না এতটুকু তলানিতে। বরং এখানের নির্মাতারা নতুনভাবে নানা কায়দায় সত্যজিৎ, সৌমিত্র ধারায় ফিরে আসছেন। হৃদয়ের কিছু তো আর গিলে ফেলা যায় না। তা ধারণ করতে হয় মননে, মগজে।
কলকাতা সিটি কলেজে পড়াকালে কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে তার পরিচয়। সেই থেকে তার জীবনের পণ অভিনয়। ৩শ’র বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। কিন্তু ভুলে যাননি থিয়েটার। শেষ জীবনেও এর সঙ্গে যুক্ততা ছিল তার। অজস্র টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন আমৃত্যু। কিন্তু "টাইম নেই" বলে সেলিব্রেটি স্টারডম দেখাননি কখনো আলো ছায়া আর সরাসরি দর্শকের সামনে পরিবেশিত শিল্প মঞ্চ নাটককে। নাটক লিখেছেন, পরিচালনাও করেছেন।
অনবদ্য কবিতা লিখতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আবৃত্তিতে ছিলেন স্বকীয়। কাজ করেছেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। কণ্ঠ দিয়েছেন বহু পরিবেশনায়। ৮৫ বছরের জীবনে রুচি সম্মত শিল্পের এক অনন্য ব্যক্তিরূপী প্রতিষ্ঠান হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
তার চলে যাওয়ার পর যেন সব শূন্য। লাগে অপুহীন সারাবেলা।
ফ্রিল্যান্স লেখক ও সাংবাদিক হাসান শাওনের জন্ম, বেড়ে ওঠা রাজধানীর মিরপুরে। পড়াশোনা করেছেন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বাঙলা কলেজ, বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। ২০০৫ সাল থেকে তিনি লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কাজ করেছেন সমকাল, বণিক বার্তা, ক্যানভাস ম্যাগাজিন ও আজকের পত্রিকায়।
২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর হাসান শাওনের প্রথম বই “হুমায়ূনকে নিয়ে” প্রকাশিত হয়।
বিষয়: