অঞ্জন দত্তের কাছ থেকে শিখতে ইচ্ছে হয় কীভাবে বুড়ো না হয়ে বাঁচা যায়। এক মানুষ কীভাবে এত কিছু পারেন
অঞ্জন দত্ত সংগৃহীত
হাসান শাওন
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:২৯ পিএমআপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১১:২৯ পিএম
আজ ৬৮ তে পা রাখলেন অঞ্জন দত্ত। শুভ জন্মদিন, কিংবদন্তি!যখন তাকে নিয়ে অল্প কিছু কথা বলতে বসেছি, তখন বিকেল। অনেক কিছুর মতো এ বিকেল নিয়েও অঞ্জন গেয়েছেন-
“. . .সেই পৃথিবীতে বিকেলের রং হেমন্তে হলুদ সেই পৃথিবীতে পাশের বাড়ির কান্না শোনা যায় পৃথিবীটা বড়ই ছোট আমার জানালায় আমার জানলা দিয়ে আমার পৃথিবী সেই পৃথিবীতে বাঁচবো বলে যুদ্ধ করি রোজ একটুখানি বাঁচার জন্য হাজার আপোষ সেই পৃথিবীর নাম কলকাতা কী ভারত জানি না তুমি তোমার পৃথিবীর নামটা জানো কি? তুমি বলবে আমার বেনিয়াপুকুর তোমার বেহালা তুমি গণ্ডি কেটে দেখিয়ে দেবে পশ্চিমবাংলা হয়তো কেরালার আকাশ আরেকটু বেশি নীল তবুও সেটাও কী নয় আমার পৃথিবী?
আমার জানলা দিয়ে যায় না দেখা ইসলামাবাদ শুধু দেখি আমি রোজ আমার পাশের বাড়ির ছাদ একটা হলদে শাড়ি শুকোচ্ছে আজ মোজার রংটা নীল আজ পৃথিবীটা বড়ই রঙিন
কেউ জানলা খুলে অ্যালাবামায় বাংলা গান গায় কেউ পড়ছে কোরান বসে তার জাপানি জানালায়
তাই জানলা আমার মানে না আজ ধর্মের বিভেদ জানলা জাতীয়তাবাদের পরোয়া করে না জানলা আমার পূব না পশ্চিমের দিকে খোলা জানলা সে তো নিজেই জানে না . . .” -আমার জানলা দিয়ে, অঞ্জন দত্ত
এ তো গেলো গানের অঞ্জন। যিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন কবির সুমন দ্বারা। একটা গিটারেও গান সম্ভব। যদি পারি সুর ধরতে। আর মাথা খাটিয়ে লিখতে। বাংলা গানে জীবদ্দশায়ই কিংবদন্তি হয়েছেন এ করে।
এ সব্যসাচীর অন্য প্রতিভা তুলে না আনা বেঈমানি হবে। সাক্ষাৎকারে অঞ্জন বলে থাকেন, “অভিনেতা হতে চেয়েছি। অভিনয়ে ব্যর্থ হয়েই গানে আসি।”
কিন্তু পাওয়া যায় না কোনো ব্যর্থ অভিনেতা অঞ্জনের পরিচয়। উল্টো মৃণাল সেন থেকে বহু পরিচালকের সঙ্গে কাজে তিনি ভাস্বর। পুরস্কারও পেয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে সিনেমার অঞ্জন। সুস্পষ্ট করলে চলচ্চিত্র পরিচালক অঞ্জন দত্ত। বাংলা ছবিকে বিশ্বমানে নিতে হয় কীভাবে তা জানেন তিনি। সিনেমা হলে একই সঙ্গে সাধারণ এবং বোদ্ধা দর্শক কীভাবে আনতে হয়; এ মশলাও তার জানা। সে ধারাতেই এগোচ্ছেন সর্বশেষ ব্যোমকেশ হয়ে গত বছরের ওয়েব সিরিজ “ড্যানি ডিটেকটিভ ইনক” এ। সবার জন্য সিনেমা এ প্রতিজ্ঞা স্পষ্ট হয় তার কাজে। কলকাতার এখন দৃশ্যমান নিউ ওয়েভে অঞ্জন আছেন সামনের সারিতে। অঞ্জনের গান শুনে আরও অনেকের মতো আমি বড় হয়েছি। প্রথম তাকে স্বচক্ষে দেখি সম্ভবত ২০০১ সালে আর্মি স্টেডিয়ামের এক কনসার্টে। নচিকেতাও ছিলেন এ আয়োজনে। অঞ্জনের সঙ্গে আমরা বন্ধুরা গলা মিলিয়ে গেয়েছিলাম, “ম্যারিয়েন . . .ম্যারি ম্যারি য়েন . . .।”
প্রেমিকাকে আজীবনের জন্য পাইনি। প্রেম ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু মনে পড়ে কষ্টের টাকা দিয়ে সে নারীকে গিফট দেওয়া নিমা রহমানের সঙ্গে তার অনবদ্য চিঠি, কবিতা, গানের বুননে গড়া “গানে গানে ভালোবাসা” অ্যালবাম।
২০২০ সালে আমার বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ সিনেমা এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে অঞ্জন দত্ত এসেছিলেন। অনুষ্ঠানটি হয় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে। অডিটরিয়াম উপচে পড়ছিলো সেদিন। বলেছিলেন, দুই বাংলার সিনেমা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথা। আরো অনেক স্বপ্ন জানিয়েছিলেন সে বিকেলে। একটি গ্রুপ ছবিও আমাদের সঙ্গে তুলেছিলেন সেদিন। এক সময় ইচ্ছে হলো, “পৃথিবীর সব ববি রায়ের উদ্দেশে কিছু বলবেন কী? - এ প্রশ্ন অঞ্জনকে করতে। শিক্ষার্থীদের হৈ চৈ আর অঞ্জনকে পেয়ে মাতোয়ারা উল্লাসে প্রশ্নটি অব্যক্ত থেকে যায়।”
অঞ্জন দত্তের কাছ থেকে শিখতে ইচ্ছে হয় কীভাবে বুড়ো না হয়ে বাঁচা যায়। এক মানুষ কীভাবে এত কিছু পারেন?- তার উত্তর। কুরআন পড়ার ডাক দেন অঞ্জন। একদম গাঁজার টানে অঞ্জন ফিরে আসেন। দুই পেগ ওয়াইনে অঞ্জন। বউয়ের সাথে ক্যাচাল মেটাতে “ঝগড়া চলছে-চলবে”র অঞ্জন। গভীর রাতের শীৎকারে অঞ্জন। আঁধার কাটা ভোরে অঞ্জন। মধ্যবিত্তের টাউটামি জীবন স্বচক্ষে দেখতে অঞ্জন। “সুদিন আসবে বলে তাই ওরা আগুন জ্বেলে যায়” বিপ্লবে অঞ্জন। ভালো না লেগে পারা যায় না যখন বিদেশি গানের সুর মারা অঞ্জন তা স্বীকার করেন অবলীলায়। বাদ থাকে না কোনো প্রহর তাকে হীন।
তাই জন্মদিন প্রহরে উইশ করে তাকে বলতে ইচ্ছে হয়, “অঞ্জন দত্ত, আপনাকে জরুরি খুব জরুরি দরকার . . .”
ফ্রিল্যান্স লেখক ও সাংবাদিক হাসান শাওনের জন্ম, বেড়ে ওঠা রাজধানীর মিরপুরে। পড়াশোনা করেছেন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বাঙলা কলেজ, বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। ২০০৫ সাল থেকে তিনি লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কাজ করেছেন সমকাল, বণিক বার্তা, ক্যানভাস ম্যাগাজিন ও আজকের পত্রিকায়।
২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর হাসান শাওনের প্রথম বই “হুমায়ূনকে নিয়ে” প্রকাশিত হয়।
অঞ্জন দত্ত, আপনাকে জরুরি খুব জরুরি দরকার
অঞ্জন দত্তের কাছ থেকে শিখতে ইচ্ছে হয় কীভাবে বুড়ো না হয়ে বাঁচা যায়। এক মানুষ কীভাবে এত কিছু পারেন
আজ ৬৮ তে পা রাখলেন অঞ্জন দত্ত। শুভ জন্মদিন, কিংবদন্তি!যখন তাকে নিয়ে অল্প কিছু কথা বলতে বসেছি, তখন বিকেল। অনেক কিছুর মতো এ বিকেল নিয়েও অঞ্জন গেয়েছেন-
“. . .সেই পৃথিবীতে বিকেলের রং হেমন্তে হলুদ
সেই পৃথিবীতে পাশের বাড়ির কান্না শোনা যায়
পৃথিবীটা বড়ই ছোট আমার জানালায়
আমার জানলা দিয়ে আমার পৃথিবী
সেই পৃথিবীতে বাঁচবো বলে যুদ্ধ করি রোজ
একটুখানি বাঁচার জন্য হাজার আপোষ
সেই পৃথিবীর নাম কলকাতা কী ভারত জানি না
তুমি তোমার পৃথিবীর নামটা জানো কি?
তুমি বলবে আমার বেনিয়াপুকুর তোমার বেহালা
তুমি গণ্ডি কেটে দেখিয়ে দেবে পশ্চিমবাংলা
হয়তো কেরালার আকাশ আরেকটু বেশি নীল
তবুও সেটাও কী নয় আমার পৃথিবী?
আমার জানলা দিয়ে যায় না দেখা ইসলামাবাদ
শুধু দেখি আমি রোজ আমার পাশের বাড়ির ছাদ
একটা হলদে শাড়ি শুকোচ্ছে আজ
মোজার রংটা নীল
আজ পৃথিবীটা বড়ই রঙিন
কেউ জানলা খুলে অ্যালাবামায় বাংলা গান গায়
কেউ পড়ছে কোরান বসে তার জাপানি জানালায়
তাই জানলা আমার মানে না আজ ধর্মের বিভেদ
জানলা জাতীয়তাবাদের পরোয়া করে না
জানলা আমার পূব না পশ্চিমের দিকে খোলা
জানলা সে তো নিজেই জানে না . . .”
-আমার জানলা দিয়ে, অঞ্জন দত্ত
এ তো গেলো গানের অঞ্জন। যিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন কবির সুমন দ্বারা। একটা গিটারেও গান সম্ভব। যদি পারি সুর ধরতে। আর মাথা খাটিয়ে লিখতে। বাংলা গানে জীবদ্দশায়ই কিংবদন্তি হয়েছেন এ করে।
এ সব্যসাচীর অন্য প্রতিভা তুলে না আনা বেঈমানি হবে। সাক্ষাৎকারে অঞ্জন বলে থাকেন, “অভিনেতা হতে চেয়েছি। অভিনয়ে ব্যর্থ হয়েই গানে আসি।”
কিন্তু পাওয়া যায় না কোনো ব্যর্থ অভিনেতা অঞ্জনের পরিচয়। উল্টো মৃণাল সেন থেকে বহু পরিচালকের সঙ্গে কাজে তিনি ভাস্বর। পুরস্কারও পেয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে সিনেমার অঞ্জন। সুস্পষ্ট করলে চলচ্চিত্র পরিচালক অঞ্জন দত্ত।
বাংলা ছবিকে বিশ্বমানে নিতে হয় কীভাবে তা জানেন তিনি। সিনেমা হলে একই সঙ্গে সাধারণ এবং বোদ্ধা দর্শক কীভাবে আনতে হয়; এ মশলাও তার জানা। সে ধারাতেই এগোচ্ছেন সর্বশেষ ব্যোমকেশ হয়ে গত বছরের ওয়েব সিরিজ “ড্যানি ডিটেকটিভ ইনক” এ। সবার জন্য সিনেমা এ প্রতিজ্ঞা স্পষ্ট হয় তার কাজে। কলকাতার এখন দৃশ্যমান নিউ ওয়েভে অঞ্জন আছেন সামনের সারিতে।
অঞ্জনের গান শুনে আরও অনেকের মতো আমি বড় হয়েছি। প্রথম তাকে স্বচক্ষে দেখি সম্ভবত ২০০১ সালে আর্মি স্টেডিয়ামের এক কনসার্টে। নচিকেতাও ছিলেন এ আয়োজনে। অঞ্জনের সঙ্গে আমরা বন্ধুরা গলা মিলিয়ে গেয়েছিলাম, “ম্যারিয়েন . . .ম্যারি ম্যারি য়েন . . .।”
প্রেমিকাকে আজীবনের জন্য পাইনি। প্রেম ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু মনে পড়ে কষ্টের টাকা দিয়ে সে নারীকে গিফট দেওয়া নিমা রহমানের সঙ্গে তার অনবদ্য চিঠি, কবিতা, গানের বুননে গড়া “গানে গানে ভালোবাসা” অ্যালবাম।
২০২০ সালে আমার বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ সিনেমা এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে অঞ্জন দত্ত এসেছিলেন। অনুষ্ঠানটি হয় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে। অডিটরিয়াম উপচে পড়ছিলো সেদিন। বলেছিলেন, দুই বাংলার সিনেমা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথা। আরো অনেক স্বপ্ন জানিয়েছিলেন সে বিকেলে। একটি গ্রুপ ছবিও আমাদের সঙ্গে তুলেছিলেন সেদিন। এক সময় ইচ্ছে হলো, “পৃথিবীর সব ববি রায়ের উদ্দেশে কিছু বলবেন কী? - এ প্রশ্ন অঞ্জনকে করতে। শিক্ষার্থীদের হৈ চৈ আর অঞ্জনকে পেয়ে মাতোয়ারা উল্লাসে প্রশ্নটি অব্যক্ত থেকে যায়।”
অঞ্জন দত্তের কাছ থেকে শিখতে ইচ্ছে হয় কীভাবে বুড়ো না হয়ে বাঁচা যায়। এক মানুষ কীভাবে এত কিছু পারেন?- তার উত্তর। কুরআন পড়ার ডাক দেন অঞ্জন। একদম গাঁজার টানে অঞ্জন ফিরে আসেন। দুই পেগ ওয়াইনে অঞ্জন। বউয়ের সাথে ক্যাচাল মেটাতে “ঝগড়া চলছে-চলবে”র অঞ্জন। গভীর রাতের শীৎকারে অঞ্জন। আঁধার কাটা ভোরে অঞ্জন। মধ্যবিত্তের টাউটামি জীবন স্বচক্ষে দেখতে অঞ্জন। “সুদিন আসবে বলে তাই ওরা আগুন জ্বেলে যায়” বিপ্লবে অঞ্জন। ভালো না লেগে পারা যায় না যখন বিদেশি গানের সুর মারা অঞ্জন তা স্বীকার করেন অবলীলায়। বাদ থাকে না কোনো প্রহর তাকে হীন।
তাই জন্মদিন প্রহরে উইশ করে তাকে বলতে ইচ্ছে হয়, “অঞ্জন দত্ত, আপনাকে জরুরি খুব জরুরি দরকার . . .”
ফ্রিল্যান্স লেখক ও সাংবাদিক হাসান শাওনের জন্ম, বেড়ে ওঠা রাজধানীর মিরপুরে। পড়াশোনা করেছেন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বাঙলা কলেজ, বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। ২০০৫ সাল থেকে তিনি লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কাজ করেছেন সমকাল, বণিক বার্তা, ক্যানভাস ম্যাগাজিন ও আজকের পত্রিকায়।
২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর হাসান শাওনের প্রথম বই “হুমায়ূনকে নিয়ে” প্রকাশিত হয়।
বিষয়: