উপমহাদেশের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় পাকিস্তানি সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি তেমন বড় জায়গা নয়। মুক্তির পর যেমন দীর্ঘ সময় ধরে এ ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা চলে না, তেমনি আয়ের অঙ্কের দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। তবে ২০২২ সালে এসে নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হলো পাকিস্তানের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি।
গত ১৩ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল “দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট”। মুক্তির পর থেকেই সিনেমাটি দারুণ দর্শক জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি মুক্তির ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও সিনেমাটিকে ঘিরে দর্শকদের আগ্রহ-উদ্দীপনায় কোনো ভাটা পড়েনি। পাকিস্তানি সিনেমার ক্ষেত্রে এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না বললেই চলে।
তবে “দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট” সিনেমাটি ইতিহাস গড়েছে আয়ের দিক থেকে। মুক্তির ১০ দিনের মাথায় সিনেমাটি ১০০ কোটি রুপি উপার্জন করে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম ছবি হিসেবে শত কোটি রুপি আয়ের কীর্তি গড়ল পাঞ্জাবি ভাষায় নির্মিত সিনেমাটি।
সিনেমাটির আয়ের কথা জেনে যেমন অনেকের চক্ষু চড়কগাছ, তেমনি সিনেমাটির দৃশ্যধারনের কাজ শুরু করার সময় বাজেটের কথা শুনেও অনেকের চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। যখন সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়, তখন এর সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছিল ৫০ কোটি রুপি। পরবর্তীতে মুক্তির আগে সিনেমাটির বাজেট গিয়ে ঠেকে ৭০ কোটি রুপিতে।
“দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট” সিনেমাটি যে নতুন ইতিহাস গড়তে পারে, তার আভাস মিলেছিল শুরুর দিকেই। মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই শুধু পাকিস্তান থেকেই সিনেমাটির আয় ছিল রেকর্ড ১১ কোটি ৩০ লাখ রুপি। এর আগে কিন্তু কোনো পাকিস্তানি চলচ্চিত্র এই রেকর্ডের অধিকারী ছিল না। ১১ কোটি ২৫ লাখ রুপি আয় করে রেকর্ডটি ছিল সালমান খান অভিনীত বলিউড সিনেমা “ সুলতান-এর দখলে।

শুধু পাকিস্তানেই না, পাকিস্তানের বাইরেও “দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট” ছবিটি দারুণ সাড়া ফেলেছে। দিওয়ালি উপলক্ষে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দুই বলিউড সিনেমা রাম সেতু এবং থ্যাংক গড-এর কোনোটাই এই পাকিস্তানি সিনেমার কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রেক্ষাগৃহে দুই বলিউড সিনেমা এবং দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট চলচ্চিত্রের আয়ের পার্থক্যও চোখে লাগার মতো।
বিশ্বের ২৩টি দেশের ৪০০ হলে একযোগে মুক্তি পাওয়া “দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট” চলচ্চিত্রটি দেশ-বিদেশ মিলিয়ে গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১১৫ কোটি রুপি আয় করেছে। কেবলমাত্র পাকিস্তান থেকেই সিনেমাটির উপার্জন ছিল ৩৩ কোটি রুপি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের বাইরে থেকে ৮২ কোটি রুপি আয় করে সিনেমাটি। চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের ধারণা, এই সিনেমার মাধ্যমে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির পুনর্জন্ম হয়েছে।
পাঞ্জাবের এক গ্রামের পটভূমিতে গড়ে উঠেছে “দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট” সিনেমার গল্প। এই চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অর্থাৎ মওলা জাট চরিত্রে অভিনয় করেছেন পাকিস্তানি গায়ক-অভিনেতা ফাওয়াদ খান। সিনেমার জন্য দেড় মাসে প্রায় ৩০ কেজি ওজন বাড়িয়েছেন ফাওয়াদ। কিন্তু সেই ভাঙাগড়ার মধ্যে যেতে গিয়ে এই অভিনেতার কিডনির স্বাভাবিক কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই না, ডায়াবেটিস রোগে ভোগা ফাওয়াদকে হাসপাতালেও ভর্তি হয়ে তিন মাস লেগেছিল সুস্থ হতে
এছাড়া, বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে হামজা আলী আব্বাসী, মাহিরা খান, হুমাইমা মালিক, গহর রশিদ প্রমুখকে। অ্যাকশন, ড্রামা, ফ্যান্টাসি ঘরানার সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন বিলাল লাশহারি। বলে রাখা ভালো, “দ্য লেজেন্ড অব মওলা জাট” তার নির্মিত দ্বিতীয় সিনেমা। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা “ওয়ার” মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। তৎকালীন সময়ে সেটি পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আয়কারী সিনেমায় পরিণত হয়েছিল।