ভারতীয়দের মতো বাংলাদেশিরাও বলিউডের সিনেমার নিয়মিত দর্শক। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোয় সাধারণত বলিউডের সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহে বলিউড সিনেমা মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। মূলত শাহরুখ খানের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত “পাঠান” সিনেমা নিয়েই এই আলোচনার সূত্রপাত।
এফডিসি কেন্দ্রিক সংগঠনগুলোও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) এফডিসিতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-সদস্য বৈঠকে অংশ নিয়ে ভারতীয় তথা হিন্দি সিনেমা আমদানির বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই আলোচনা ইতিবাচক বলেই আভাস দিলেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য, চিত্রনায়ক রিয়াজ।
দেশের বন্ধ থাকা প্রেক্ষাগৃহ সচল করতে এবং হল সংখ্যা বাড়াতে ভারত থেকে হিন্দি ছবি আমদানি করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রদর্শনের পক্ষে রয়েছেন রিয়াজ। তিনি বলেন, আমি নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত হিন্দি ছবি চালানোর পক্ষে। এটা করতে পারলে হল সচল হবে। ফলে অনেক প্রযোজক নতুন নতুন সিনেমা বানাতে ফিরে আসবেন।
বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোর বৈঠকের সারাংশ জানিয়ে এ অভিনেতা বলেন, বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিলো হল বাড়ানো। আমাদের ১,২০০ হল কমতে কমতে এখন ৫০-৬০টিতে এসে ঠেকেছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো একটা হলও থাকবে না। আমাদের সব সমিতির কথা হচ্ছে, এখন আপাতত হল বাঁচাতে হবে। মানুষকে হলে আনার অভ্যাস করাতে হবে। এ জন্য দেশের বাইরের ভালো ভালো কন্টেন্ট এনে হলেও হল সচল করতে হবে। তাই সব সমিতি মিলে নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত হিন্দি ছবি চালানোর পক্ষে। এটা নিয়েই শিগগিরই সমিতিগুলো সম্মিলিত সিদ্ধান্ত জানাবে।
দর্শক এবং ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির বড় অংশ হিন্দি ছবি আমদানির পক্ষে হলেও কিছু মানুষ এটিকে হুমকি বা ক্ষতি হিসেবেই দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে, বলিউডের মতো প্রভাবশালী ইন্ডাস্ট্রির ছবি যদি এ দেশে মুক্তি পেলে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রি একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।
তাদের নিয়ে রিয়াজ বলেন, যারা ওই কথা বলছেন, তারা সবাই তাদের ব্যক্তিগত মতামত দিচ্ছেন। তাদের ব্যক্তিগত মতামত নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। তবে আমি মনে করি, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ। এখন দর্শক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দর্শকরা জানে কাদের কারণে হল বন্ধ হয়েছে। এখন যদি তারাই হল বন্ধের কথা বলে, চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রি ধ্বংসের কথা বলে, তাহলে সেটা হাস্যকর লাগে।
শুধু “পাঠান” কিংবা হিন্দি সিনেমাই না, বাইরের দেশের ভালো চলচ্চিত্রগুলোই দেশের প্রেক্ষাগৃহে আনার পক্ষে অবস্থান নিয়ে রিয়াজ বলেন, আমি এমন কিছু চাই, যেন করে আমাদের সিনেমা হল বাঁচে। প্রযোজক যেন না বলেন, ‘একটা বাংলা ছবি চালিয়েছি, কিন্তু দুপুরের শোতে মাত্র ২ জন দর্শক। কীভাবে টাকা তুলবো? আামাকে তো হলটা বন্ধ করে দিতে হবে'।
ভারতের ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয় সিনেমাটির প্রদর্শনী। প্রদর্শনী শুরু হওয়ার পর দর্শক-সমালোচক দুই মহলেই দারুণ প্রশংসিত হয়েছে সিনেমাটি। ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মসের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে বিশ্বের শতাধিক দেশে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পেয়েছে “পাঠান”। ছবিটি হিন্দির পাশাপাশি তামিল ও তেলেগু ভাষায়ও মুক্তি পেয়েছে। সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ও আদিত্য চোপড়া প্রযোজিত “পাঠান” চলচ্চিত্রে শাহরুখের সঙ্গে দেখা যাবে জন আব্রাহাম ও দীপিকা পাড়ুকোনকেও। পাশাপাশি বিভিন্ন চরিত্রে আছেন ডিম্পল কাপাডিয়া, আশুতোষ রানা, গৌতম রোড়ে, মনিশ ওয়াদওয়া প্রমুখ। এছাড়া, স্পাই ইউনিভার্সের অংশ হিসেবে টাইগার ভূমিকায় ক্যামিও চরিত্রে দেখা যাবে সালমান খানকেও।
সাফটা চুক্তির আওতায় সম্প্রতি বলিউডের “পাঠান” দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন পরিবেশক ও প্রযোজনা সংস্থা “অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট”।
কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে নিকট ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে “পাঠান” সিনেমা মুক্তির সম্ভাবনা নেই। গত মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। বিষয়টি ঝুলে থাকলেও আমদানিকারকেরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোও দেশে হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির বলিউডের সিনেমায় আপত্তি নেই, তবে লাভের ভাগ চায় সংগঠনটি।