Thursday, March 20, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

‘গণভোট’ চেয়ে ইসি রাশেদাকে হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ

হিরো আলম বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেন। অনেক এমপি তো স্বশিক্ষিত। সংসদে ঠিকমতো স্পিকার উচ্চারণ করতে পারেন না। আপনাদের এতো যোগ্যতা থাকলে দেশের এই অবস্থা কেন’

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩০ এএম

নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বগুড়া-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। তিনি বলেছেন, “আপনাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, বুকের পাটা থাকলে গণভোট দিন। জনগণ সব বাটপারি প্রমাণ করে দেবে। যদি একতারা প্রতীক হেরে যায়, আমি নাকে খত দেবো, জীবনে কখনও নির্বাচনে যাবো না।”

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ নির্বাচনী এলাকা বগুড়ার কাহালু সদরের স্টেশন বাজারে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন হিরো আলম। এর আগে বগুড়া-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে ফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।

তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা বলেন, “ফল পাল্টানোর অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। ফল শতভাগ সঠিক।”

শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে কাহালু সদরের স্টেশন বাজারে ভোটারদের উদ্দেশ্যে হিরো আলম বলেন, “গতকাল নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রার্থীরা এসব কথা বলেনই যে, ভোট সুষ্ঠু হয়নি, কারচুপি হয়েছে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। নন্দীগ্রাম উপজেলায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে নাকি আমার কোনো এজেন্ট ছিল না। ফল পাল্টানোর যে অভিযোগ করেছি, তার নাকি ভিত্তি নেই, সাক্ষ্যপ্রমাণও নেই।”

এমন বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হিরো আলম বলেন, “ক্ষমতায় আছেন তো অনেক বড় বড় কথা বলেন। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, ফল বাতিল করে গণভোট দেন। একতারা প্রতীকে হিরো আলম, মশাল প্রতীকে তানসেন (এ কে এম রেজাউল করিম) প্রার্থী থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা দেন। আপনারা সব নির্বাচন কমিশনার মাঠে আসেন। মশাল নাকি একতারা; কে বেশি জনপ্রিয় প্রমাণ করতে গণভোট দেন। যদি একতারা হেরে যায়, আমি নাকে খত দেবো, জীবনে কখনও নির্বাচনে যাবো না। জনগণ ভোট দিয়েছেন কি দেননি; ফল চুরি করেছেন কি করেননি, সেটি আমি প্রমাণ করে দেখাবো।”

হিরো আলম বলেন, “আপনি মাঠে এসে অভিযোগের তদন্ত না করে ঢাকা থেকেই হুট করে মন্তব্য করলেন। আপনি নন্দীগ্রামে এসে দেখেছিলেন, আমার এজেন্ট ছিল না? এজেন্ট ছিল, কিন্তু ফলের কাগজ দেওয়া হয়নি। ভোট নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ ছিল না, এখনও নেই। ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটে হেরে যাইনি। ফল চুরি করেছেন। এ কারণে ফলে হেরেছি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার অভিযোগ সঠিক হবে।”

ভোটাররা তার হেরে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না দাবি করে হিরো আলম বলেন, “আমার এমপি হওয়া নিয়ে, সংসদে যাওয়া নিয়ে অনেকের ঘুম হারাম, মাথা কামড়ায়। একজন এমপির কাজ কী? সংসদে কথা বলা। আমি কি কথা বলতে পারি না? আমার চেহারা নিয়ে এত আপত্তি কেন? এত নাটক কেন? সেখানে কেন ভালো চেহারার লোক লাগবে? আমাকে সংসদে নিয়ে গিয়ে কি অভিনয় করাবেন? আমি আপনাদের মতো ভালো কথা বলতে পারি না। বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি, এজন্য আপনাদের বাঁধে। আপনাদের মা-বাবা আছে জন্য পড়ালেখা করতে পেরেছেন, শিক্ষিত হয়েছেন। স্পিকার হয়েছেন, মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন, কমিশনার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। আমাদের মতো নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা হলে এটা হতে পারতেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেন। অনেক এমপি তো স্বশিক্ষিত। সংসদে ঠিকমতো স্পিকার উচ্চারণ করতে পারেন না। আপনাদের এত যোগ্যতা থাকলে দেশের এই অবস্থা কেন? কেন জনগণ আপনাদের ধিক্কার দিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভোটাররা বলছেন আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। এ জন্য নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছি। বিশ্রাম নিয়ে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আদালতে রিট করবো। সেখানে আমার পক্ষে ফল আসবে বলে আশা করছি।”

এর আগে বুধবার রাতে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমি অশিক্ষিত, আমি এমপি নির্বাচিত হলে আমাকে স্যার ডাকতে হবে। দেশের সম্মান যেতো; তাই ওসব সাহেবরা আমার ফল পাল্টে দিয়েছেন। নন্দীগ্রামের ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯টির ফল ঘোষণা করা হয়। পরে বাকি ১০ কেন্দ্রের ফল আলাদা ঘোষণা না করে মোট ফল ঘোষণা করেছে। ওই ১০ কেন্দ্রের ফল কারচুপি হয়েছে।”

সব বুথে এজেন্ট থাকলেও প্রিসাইডিং অফিসার তাদের ফলের কপি দেয়নি উল্লেখ করে হিরো আলম বলেন, “অথচ ইসি বললেন আমার নাকি এজেন্ট ছিল না। এটা মিথ্যা কথা।”

১ ফেব্রুয়ারি বুধবার দিনভর ইভিএমে ভোটগ্রহণ শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন। বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জেলা জাসদের সহ-সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন জয়ী হয়েছেন। ১১২ কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪০৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। নির্বাচনে মোট জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিন লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ ভোটারের মধ্যে ৭৮ হাজার ৫৭০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোট পড়েছে ২৩.৯২%।

   

About

Popular Links

x