অস্কারপ্রাপ্তির জন্য ভারতজুড়ে হইচই হচ্ছে “আরআরআর” ছবির গানকে ঘিরে। কিন্তু পুরস্কার মঞ্চে এই ছবির আগেই ডাক পড়েছিল একটি ভারতীয় তথ্যচিত্রের। সেরার শিরোপা পেয়েছে “দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স”। এই তথ্যচিত্রের প্রযোজক গুনিত মোঙ্গা ও পরিচালক কার্তিকি গঞ্জালভেস মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অস্কার জয়ের পরে গুনিত টুইট করেন, “ভারতীয় প্রযোজনায় আমরা এইমাত্র প্রথমবার অস্কার পেলাম। দু'জন নারী এটা করেছেন। আমি শিহরিত।”
এই ছবির যারা কলাকুশলী তাদের একজন সঞ্চারী দাস মল্লিক। তথ্যচিত্রটি কয়েকজন মিলে সম্পাদনা করেছেন। এদের অন্যতম দক্ষিণ কলকাতার গলফগ্রিনের তরুণী। এই তামিল তথ্যচিত্রের কাহিনী একটি শাবক হাতি ও এক দম্পতির মধ্যের মধুর সম্পর্ক ঘিরে। প্রকৃতির অনাবিল ঘেরাটোপে মানুষ ও পশুর অনবদ্য গাঁথা হয়ে উঠেছে এটি।
এই প্রথম কোনো তথ্যচিত্রে কাজ করেছেন বর্তমানে মুম্বাই প্রবাসী সঞ্চারী। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন তিনি, পরে ঝোঁকেন মাস কমিউনিকেশনে। পড়াশোনা করেন সেন্ট জেভিয়ার্সে। এই সূত্রে ছবির জগতের সঙ্গে যোগাযোগ সঞ্চারীর। নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতেই চরম সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।
পাঁচ বছর ধরে শ্যুটিং হয়েছে তামিল এই তথ্যচিত্রের। ৫০০ ঘণ্টা থেকে সম্পাদনার পর ৪০ মিনিট পৌঁছেছে দর্শকের কাছে। অত্যন্ত কঠিন এই কাজ সম্পন্ন করেছেন প্রধান সম্পাদক সঞ্চারী ও তার সহযোগীরা।
তথ্যচিত্র পুরস্কৃত হওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া, “অসাধারণ মুহূর্ত। এই কৃতিত্ব ইউনিটের সকলের।”
এখন লস অ্যাঞ্জেলসে রয়েছেন তিনি। অস্কারের মঞ্চ এবার আলো করেছিলেন অনেক নারী তারকা। সেখানে না থেকেও তাদের সঙ্গে এক আসনে বসেছেন সঞ্চারী।
Apart from director #KartikiGonsalves & producer #GuneetMonga whose short documentary film '#TheElephantWhisperers' won the #Oscar, there is also a young woman behind the success, #SanchariDasMallick, who edited this film.
— DT Next (@dt_next) March 15, 2023
Read:https://t.co/LFX8hwawND#Oscars2023 #Oscars95
৯৫ তম অস্কারের মঞ্চে সঞ্চারী নয়, নজর ছিল আর এক বাঙালি শৌনক সেনের দিকে। পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের বিভাগে তার “অল দ্যাট ব্রিদস” মনোনয়ন পেয়েছিল। যদিও সেরার শিরোপা জিততে পারেনি এই ছবি। সেই হতাশা দূর হয়েছে “দ্য অ্যালিফ্যান্ট হুইস্পারার্স”-এর স্বীকৃতি লাভে।
ভারতীয় হিসেবেও এই স্বীকৃতি বিরল। “গান্ধী” ছবির পোশাক নির্দেশনার জন্য কস্টিউম ডিজাইনার ভানু আথাইয়া অস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৮৩ সালে সেই প্রথম কোনো ভারতীয়ের অস্কার লাভ। গত চার দশকে সঞ্চারী তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন।
সঞ্চারীর সাফল্যের শিকড় রয়েছে তার পরিবারে। ঠাকুরদা মনোজেন্দু ছিলেন ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই প্রতিষ্ঠান সত্যজিৎ রায়ের হাতে তৈরি বলা চলে। ১৯৯২ সালে জীবনকীর্তির জন্য অস্কার পেয়েছিলেন “পথের পাঁচালী”র স্রষ্টা। তার তিন দশক পর সঞ্চারীর সাফল্যে যেন ইতিহাসের সমাপতন।
সঞ্চারীর মূল অনুপ্রেরণা তার মা শুভা দাস মল্লিক নিজেও তথ্যচিত্র নির্মাতা। চলচ্চিত্রবিদ্যার অধ্যাপনা করেন। তিনি বলেন, “প্রথম তথ্যচিত্রে এটা আশাতীত সাফল্য। গোরায় বিশ্বাস করতে পারিনি। এর নেপথ্যে মেয়ের ভূমিকা আছে বলে ভাল লাগছে। ভারতীয় তথ্যচিত্র বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার জিতেছে, এটা এ দেশের তথ্যচিত্র নির্মাতাদের আগ্রহী করবে!”
অথচ পরিবারের ইচ্ছেয় কম্পিউটার সায়েন্স পড়তে হয়েছিল সঞ্চারীকে। শুভা বলেন, “ওর ভাল লাগছিল না কম্পিউটার নিয়ে পড়তে। সেটা দেখে আমরা স্ট্রিম পাল্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মাস কমিউনিকেশনে ভর্তি করি। সেটা ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, এখন বুঝতে পারি।”
জেভিয়ার্সে সঞ্চারীর শিক্ষক গোপালন মল্লিক এই সাফল্যে আপ্লুত। তিনি বলেন, “এত কম বয়সে এই সম্মান পেয়েছে যা অভাবনীয়। প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে সঞ্চারীর এই স্বীকৃতি নারী ক্ষমতায়নের দিকটিও উজ্জ্বল করেছে।”