শুরুটা ভারতীয় রিয়েলিটি শো ‘‘সারেগামাপা’’তে। গাইতেন বিখ্যাতদের গান। দ্রুত আসে পরিচিতি, সঙ্গে শ্রোতাদের ভালোবাসা। কিন্তু খ্যাতি অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। সেখানেই চরম ব্যর্থতা। একে একে বিতর্কিত কাজকর্ম। কখনো জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য। কখনো আবার কিংবদন্তী শিল্পীকে আক্রমণ। কখনো আবার বৃদ্ধকে আঘাত করা, পারিবারিক বিবাদ, মাদক নিয়ে তুলকালাম। নিমিষেই তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা রূপ নেয় ঘৃণায়।
মানুষটির নাম মাঈনুল আহসান নোবেল। যেন বিতর্কের বরপুত্র তিনি। বিতর্কের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া নোবেল ফের জন্ম দিয়েছেন আরেক বিতর্কের। এবার তার কু-কথার শিকার স্বয়ং কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সবখানে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে কোথায় থামবেন নোবেল?
বিশ্বকবিকে নিয়ে নোবেলের অভব্যতা
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যচর্চা বয়কটের আহ্বান জানিয়ে এই উঠতি গায়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর রাবীন্দ্রিক সাহিত্যচর্চা অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে বয়কট করা হোক। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল! বিদ্রোহী কবি; যখন আমাদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ছিলেন। রোজ রোজ ব্রিটিশদের কাছে কারাবন্দি হতেন। কনডেম সেলে টর্চারের শিকার হচ্ছিলেন। তখন ব্রিটিশদের চাটুকারিতা করে সো-কল্ড বিশ্বকবি বিন্দাস আমাদের বাপ-দাদার রক্ত চুষে খাচ্ছিল।”
এর আগেও তিনি কবিগুরুর সাহিত্য নিয়ে কু মন্তব্য করেছিলেন।

নোবেলের এই বক্তব্য প্রচার হওয়ার পরই দুই বাংলায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। শুরু হয় সমালোচনা। আসে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়াও।
নোবেলের কথার ঘৃণায় জেমস
২০২১ সালের মে মাসে ঈদুল ফিতরের আগের রাতে হঠাৎ তেঁতে ওঠেন নোবেল। দুইদিনে ফেসবুকে পোস্ট করেন ১৭টি স্ট্যাটাস। যার মধ্যে ১৪টিই নগরবাউল জেমসকে উদ্দেশ্য করে। তার মধ্যে বেশিরভাগই আপত্তিকর মন্তব্যে ঠাসা।
বান্দরবানে মাদকসেবনের ছবি প্রকাশ্যে
২০২১ সালের আগস্টে বান্দরবানে এক এক নারীর সঙ্গে বসে মাদকসেবনের ছবি প্রকাশ করেন নোবেল। ওই নারীর সঙ্গে রুমা বাস স্টেশন এলাকার গার্ডেন সিটি নামের আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন তিনি। হোটেলে ওই নারীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন নোবেল।
ওই বছরের ২৬ আগস্ট বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদকসেবন করতে দেখেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে “উদ্ভট আচরণের” অভিযোগ আনেন। সেবারই মধ্যরাতে মদ্যপ অবস্থায় হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন তিনি। তাকে শান্ত করতে ব্যর্থ হয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলের অন্য আরেক অতিথি থামানোর চেষ্টা করলে নোবেল তাকে লাঞ্ছিত করেন।

রাত ৩টা নাগাদ গার্ডেন সিটি আবাসিক হোটেলের মালিক মো. জাফর বাধ্য হয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ এসে নোবেলকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। পরদিন ভোরে থামে নোবেলের তাণ্ডব।
ঘরের খবর বাইরে
শুরুটা ২০২১-এর জুনে। নোবেল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সন্তান চলেছি। পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বাধে মনোমালিন্য। এরপর নোবেল ও তার স্ত্রী সালসাবিল একের পর এক পাল্টা পোস্ট, ভিডিও দিতে থাকেন ফেসবুকে। সালসাবিল একপর্যায়ে দাবি করেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই আলাদা থাকছেন এবং নোবেল মিথ্যাচার করছেন। এরপর নোবেল তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাগত “সন্তান হত্যা’’র অভিযোগ আনেন।
এ প্রসঙ্গে সালসাবিল বলেন, “নোবেল মানসিকভাবে চরম অসুস্থ। চরম মাদকাসক্ত, নারীনেশাসহ আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করতো; এসবের প্রমাণ আমার কাছে আছে। এসব কারণে তাকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বিচ্ছেদের জন্য নোবেল বরাবর কাগজ পাঠান সালসাবিল।
আপত্তিকর ছবি ফাঁস
২০১৯ সালের ২২ আগস্ট একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিশাল পোস্টসহ নোবেলের একাধিক আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হয়। সেইসঙ্গে নোবেলের বিরুদ্ধে প্রেম ও সর্বস্ব লুটের অভিযোগ আনা হয় ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে।
পোস্টদাতা নিজেকে “কিশোরী” পরিচয়ে “বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের” অভিযোগ আনেন।
গান চুরির অভিযোগ
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নোবেল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে “দেশ” শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করেন। গানটির কথা ও সুর নিজের বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে, নোবেলের বিরুদ্ধে গানটি চুরির অভিযোগ আনে ব্যান্ডদল “অ্যাবাউট ডার্ক”। ২০১৮ সালেও নোবেল এই গানটি নিজের দাবি করে প্রকাশ করেন। তখন অবশ্য সমালোচনার মুখে অনলাইন থেকে গানটি সরিয়ে নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে নোবেল ক্ষমা চান বলেও জানান ব্যান্ডটির সদস্য পূর্ণ।

সঙ্গীতজগত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য
গত ১৯ মে দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে প্রায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন নোবেল। তার দাবি, গত ১০ বছরে এ দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতেই পারেনি। ফেসবুক পেজে নোবেল বিখ্যাত গায়কদের বিশ্রী ভাষায় আক্রমণ করেন। এতে সমালোচনার ঝড় উঠলে নোবেল জানান, এসবই তার পরবর্তী একটি গানের প্রচারণার জন্য করা। কাউকে আঘাত দেওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটাক্ষ
কয়েকদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেন নোবেল। এমন পোস্টেও যথারীতি সমালোচনার মুখে পড়েন নোবেল। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খবর আসে।
বিতর্কের মুখে পড়ে গত ২৪ মে এ শিল্পী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান।
এতকিছুর পরও সমালোচনার আবর্ত থেকে বের হতে পারছেন না নোবেল। ফেসবুকে ঔদ্ধতপূর্ণ পোস্ট আর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বারবার সমালোচনার পাত্র হচ্ছেন তিনি।