পরীমণি ও শরিফুল রাজ দম্পতি চলচ্চিত্র জগতের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের সিনেমাও উন্মুক্ত। প্রায়ই সংসারের বিভিন্ন বিষয়ে খবরের শিরোনামে আসেন তারা। ক্ষণে ক্ষণে বদলায় তাদের সম্পর্কের রং। একবার এক হওয়ার খবর ছড়াচ্ছে, তো পরক্ষণেই সেই সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ছবি পোস্ট করেন পরীমণি। সেখানে দেখা যায়, ক্যানোলা লাগানো দুটি হাত। আরেক চিত্রনায়িকা তমা মির্জাকে ট্যাগ করে বোঝালেন, হাত দুটি তাদের দুজনের। পরে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জ্বরে ভুগছেন পরীমণি। শুক্রবার সকাল থেকে জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন এ চিত্রনায়িকা।
এদিকে, পরীমণির ক্যানোলা লাগানো হাতের ছবি আপলোডের কিছুক্ষণ পরই প্রকাশ্যে আসে নায়ক রাজের একটি ছবি। সেখানে তাকে রক্তাক্ত মাথা নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। জানা যায়, মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রাজ। মুহূর্তেই তৈরি হয় রহস্যময় পরিস্থিতি। ঠিক কীভাবে, কোথায় এমন রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটেছে, তা অস্পষ্টই থেকে যায়।
সাংবাদিকরা দুজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে কেউই সাড়া দেননি।
সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ-পরীর পুনর্মিলনীর একদিনের মাথায় সময়ের সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফীর কার্যালয়ে রাজ-পরীর তুমুল ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তা গুরুতর রূপ নেয়। রক্তাক্ত হন রাজ। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন পরীমণি, সঙ্গে বন্ধু তমা মির্জাও! গুঞ্জন রয়েছে, রাজ-পরীর হাতাহাতি থামাতে গিয়ে আহত হন স্বয়ং তমাও! ফলে তিনজনই একই রাতে হাসপাতালে ভর্তি হন।
রাজ-পরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তমা মির্জা। তমার কাগজপত্র বলছে, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও মাথা ব্যথার কারণে শুক্রবার রাত ১০টায় হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
এ প্রসঙ্গে এই চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বলেন, “প্রথম কথা হচ্ছে কেউ কারও হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কি চেকইন দেয়? আমি কিন্তু হাসপাতালে ঢুকেই সেটা দিয়েছি। দ্বিতীয়ত, আমি সেই মেয়ে, যে স্বামীর হাতের মার খেয়ে ঘর ছেড়েছি। সেটার প্রকাশ্য প্রতিবাদ করার জন্য যা যা করা দরকার করেছি। তো সেই মেয়েটিকে অন্য কারও জামাই এসে মেরে চলে যাবে, আর আমি চুপচাপ হাসপাতালে শুয়ে কাঁদব- সেটা তো কল্পনাই করতে পারি না। ফলে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, রাজ-পরীর মারামারির যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সেটার আশেপাশেও আমি ছিলাম না। ইভেন ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজ-পরী বাসা থেকে বেরিয়ে আমাকে ফোনও করেছে দেখা করার জন্য। আমি বলেছি, আমার জ্বর। আজ দেখা হবে না। এরপর পরী বলল, ‘ওকে বাসায় বিশ্রাম নাও। আগামীকাল দেখতে আসবো। এর মধ্যে কী হলো, আমি আর জানি না।”
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তমার হাত ধরে পরীমণি একই হাসপাতালে চেকইন দিয়েছেন। সেটিতে সন্দেহের যোগসূত্র প্রমাণ করে নাকি জানতে চাইলে তমা বলেন, “বলছি সেটাও। তো শুক্রবার সন্ধ্যার পর জ্বরের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমি ১০টার দিকে হাসপাতালে যাই। ভর্তি হই। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সবাই জানেন, আমার অ্যাজমাটিক প্রবলেম রয়েছে। কিডনিতেও সমস্যা রয়েছে। ফলে শরীরে যাই হোক, তখন এগুলো জেগে ওঠে। তো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আমি ওষুধ খেয়ে তো অচেতন অবস্থা। হঠাৎ আম্মু ডেকে ওঠালো, বললো পরী এসেছে। উঠে দেখি পরী হুইল চেয়ারে। সঙ্গে রাজ্য-চয়নিকা বৌদি, নাচের দুটো ছেলেসহ বেশ কয়েকজন আমার কেবিনে। পরী বললো, ওর জ্বর এসেছে। তাই চলে এসেছে। এরপর কাশতে কাশতে গল্প করলাম, সেটাই শেষ।”
তবে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তমা জানান, সেদিন রাতে ক্যানোলা হাতে তাদের দুই হাতের ছবি ফেসবুকে পোস্ট না করলে, তাকে মার খাওয়ার গল্পটা শুনতে হতো না। তমা মির্জার ভাষ্যে, এটা পরী ঠিক করেনি। কিন্তু পুনর্মিলনীর এক দিনের মাথায় রাজ-পরী দম্পতির মধ্যে কেন এমন রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটলো জানতে চাইলে তমা বলেন, “প্রথমত পরী আমাকে এ বিষয়ে কিছুই শেয়ার করেনি। হতে পারে আমার শরীর খুবই খারাপ, তাই। হতে পারে, বলার মতো কিছুই ঘটেনি। তবে আমি পরীকে যতটুকু এখন দেখছি, সে তার রাজ্য ছাড়া পৃথিবীর আর কিছুর সঙ্গে নেই। না শুটিং, না মডেলিং, না আড্ডা। তার পুরো দুনিটাই এখন রাজ্য। ওর সুখটাই পরীর সুখ। ফলে পরীর মিলন বলেন আর বিরহ বলেন, তার সবটাই রাজ্যকে ঘিরে আবর্তিত।
তিনি আরও বলেন, “আমার মনে হয়, পরী বরাবরই চেয়েছে তার রাজ্য যেন ব্রোকেন ফ্যামিলি বিলং না করে। তার ছেলেটা যেন বাবার আদর থেকে বঞ্চিত না হয়। সে জন্য পরী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তারই প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পেলাম ১৬ আগস্ট গানবাংলার অফিসে। কিন্তু সেটাও কাজ করলো না সম্ভবত। এখানে আমি পরীর কোনো দায় দেখছি না। নিশ্চয়ই এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাতে, যেটা পরী প্রত্যাশা করেনি।”
উল্লেখ্য, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের “গুণিন” সিনেমার শুটিংয়ে চিত্রনায়ক শরিফুল রাজ ও চিত্রনায়িকা পরীমণির প্রথম দেখা। আর সেই সাক্ষাতের এক সপ্তাহের মাথায় ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর তারা গোপনে বিয়ে করেন। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি সেই খবর প্রকাশ্যে আনেন তারা। একই দিনে সন্তান ধারণের বার্তাটিও দেন এ দম্পতি। এরপর ২২ জানুয়ারি তারা পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে সারেন। একই বছরের ১০ আগস্ট তাদের ঘর আলো করে আসে পুত্রসন্তান শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য।
গত ২০ মে পরীমণিকে রেখে বাসা থেকে বেরিয়ে যান রাজ। ২৯ মে রাতে রাজের ফেসবুক আইডি থেকে রাজ ও তিন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত কিছু ছবি ও ভিডিও ফাঁস হয়। এরপর থেকে দুইজনের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। ঘটনার পর স্বামী ও চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের সঙ্গে সংসারে টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পরীমণি। তিনি জানান, রাজের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও এক ছাদের নিচে থাকতে পারেননি তিনি। রাজের কাছ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিভোর্স চেয়েছিলেন এ ঢালিউড অভিনেত্রী। জবাবে রাজও জানিয়েছিলেন, তাদের সংসার থাকছে না, এটা চূড়ান্ত। তার আর কিছু বলার নেই। এরপর মাঝে রাজ-পরীর কয়েক দফা পুনর্মিলনী এবং সর্বশেষ রক্তারক্তি কাণ্ড।
চলচ্চিত্র দম্পতিদের নিয়ে এর আগেও ঢালিউডে কম চর্চা না হলেও রাজ-পরীর মতো আলোচনা আর কোনো জুটিকে নিয়ে হয়নি। এটা যেমন তাদের ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি সামগ্রিক ইন্ডাস্ট্রির জন্যও অশুভ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চয়নিকা চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, রেদওয়ান রনি, রায়হান রাফী, কৌশিক হোসেন তাপস প্রমুখ ব্যক্তিদের মতো কাছের মানুষরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজ-পরীর সংসারে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কখনো শরিফুল রাজের অনিয়ন্ত্রিত জীবন, আবার কখনো পরীমণির অতিসন্দেহের কারণে এই সংসারের সুতো আর টানটান হচ্ছে না।