আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু জনমানবহীন পাহাড়ি পথ। কিছুদূর পর পর দেখা মেলে ঝর্ণার। এমন নান্দনিক সৌন্দর্যের খৈয়াছড়া ঝর্ণা হতে পারে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ ভ্রমণকেন্দ্র। খৈয়াছড়ায় রয়েছে ৯টি মূলধাপ এবং কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ধাপ। একইসঙ্গে এখানে উপভোগ করা যাবে মাউন্টেন ক্লাইম্বিংয়ের অ্যাডভেঞ্চার আর ঝর্ণার সৌন্দর্য।
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার বড় তাকিয়ায় মায়াময় ও সবুজে ঘেরা পাহাড়ি ঝর্ণা খৈয়াছড়া পুরোপুরি জনমানবহীন এলাকায় অবস্থিত। এখানে প্রকৃতির নীরবতাকে আপনি উপভোগ করতে পারবেন একেবারে কাছ থেকে।
৯টি বিচ্ছিন্ন ধাপ এই ঝর্ণাকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। যা সাধারণতঃ দেশের অন্য কোনো ঝর্ণায় দেখা যায় না। তাই স্থানীয়রা একে নাম দিয়েছেন ‘‘ঝর্ণা রাণী’’। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিন দিনই বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা।
খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রবাহকাল সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। কারণ, জনমানবহীন এলাকা এবং পাহাড়ে ঝোপঝাড়ের আধিক্য থাকায় দীর্ঘদিন এটি ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। ২০১০ সালে সরকার এটিকে বারৈয়াঢালা ব্লক থেকে কুণ্ডের হাট (বড়তাকিয়া) ব্লকের জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত করে।
খৈয়াছড়া ঝর্ণার একটি ধাপ ঢাকা ট্রিবিউনযেভাবে যাবেন:
রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি চট্টগ্রামগামী বাসে মীরসরাইয়ের বড় তাকিয়া স্টেশন। ভাড়া ৪৮০ টাকা (নন এসি), ৭০০-১২০০ টাকা (এসি)।
অথবা, মহাখালী থেকে ফেনীর মহিপাল স্টেশন। ভাড়া ২৭০-৩০০ টাকা (নন এসি), ৪৫০-৭৫০ টাকা (এসি)। সেখান থেকে লোকাল বাসে মীরসরাইয়ের বড় তাকিয়া জনপ্রতি ৫০ টাকা।
বড় তাকিয়া থেকে খৈয়াছড়া সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ ভাড়া ১০০ টাকা (পাঁচজন যাওয়া যায়)।
খৈয়াছড়ায় বেড়ানোর জন্য অবশ্যই ট্র্যাকিং গাইডের সহায়তা নেওয়া উচিত। অনেকেই খরচ বাঁচানো অথবা অতি উৎসাহের বশে গাইড নিতে চান না। তবে এমন দুর্গম পাহাড়ি পথে গাইডের সহায়তা নেওয়াই উত্তম। গাইডের খরচও খুব বেশি না। পর্যটকদের সহায়তার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কয়েকজন গাইড নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। তারা পর্যটকদের সর্বাত্মক সহায়তা করে থাকেন। সারাদিনের জন্য একজন গাইড ৬০০-১০০০ টাকা খরচ নিয়ে থাকেন।
খৈয়াছড়ার ঝর্ণায় যাওয়ার পথে অনেকগুলো খাবার হোটেল আছে। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী সকাল, দুপুর ও বিকেলের খাবার পাওয়া যাবে।
খৈয়াছড়ার বিভিন্ন জায়গায় দেখা মেলে এমন আলো-আঁধারি ঢাকা ট্রিবিউনখৈয়াছড়ার পাহাড়ে ট্র্যাকিং করার ক্ষেত্রে সময়ের নির্দিষ্টতা রয়েছে। অবশ্যই সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতে হবে। সূর্যাস্তের পরে ট্র্যাকিংয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে।
সতর্কতা: খৈয়াছড়ার পথ কিছুটা দুর্গম হওয়ায় পথ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। পিচ্ছিল রাস্তায় পা ফসকে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কিছু জায়গায় জোঁক বাসা বাঁধে। এছাড়া, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে মাটি ক্ষয় শুরু হয়। এসব বিপদ এড়াতে গাইডের সহায়তা নেওয়া উচিত।
সচেতনতা: প্রায় চার কিলোমিটারের পাহাড়ি পথে ভ্রমণের সময় পর্যটকেরা সঙ্গে করে হালকা খাবার, পানির বোতল ইত্যাদি নিয়ে যান। অসেচতনতাবশতঃ খাবারের প্যাকেট, পানির খালি বোতল ইত্যাদি ফেলে রেখে আসেন অনেকেই। পথে কোনো টয়লেট না থাকায় পর্যটকদের যেমন অসুবিধায় পড়তে হয়, তেমনি যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। যতটা সম্ভব এসব ক্ষেত্রে আমাদেরই সচেতন হওয়া উচিত।