সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে দেশে দেশে বদলেছে অপরাধের ধরন। আর সেই সঙ্গে পাল্টিয়েছে এর তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থা। আধুনিক সময়ে আমরা যেমন তদন্ত ব্যবস্থা দেখে আসছি সহস্র বছর আগে তা হয়তো অনেক ভিন্ন ছিল, যা দেখে আঁতকে উঠতে হবে। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই উঠে আসবে প্রাচীন মিশরের নাম।
৩ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরে অপরাধ তদন্ত ও বিচারে বেশ কিছু নিয়ম ছিল। মিশরীয়রা এর বিস্তারিত বর্ণনাও রেখে গেছে। এর আলোকে তাদের কয়েকটি তদন্ত পদ্ধতি তুলে ধরেছে লিস্টভার্স ডটকম।
বানর নিয়ে ঘুরতেন নিরাপত্তারক্ষীরা
প্রাচীন মিশরের প্রহরীদের পাশাপাশি পশুপাখিদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। প্রহরীরা সাধারণত নিজেদের সঙ্গে কুকুর রাখতেন। তবে প্রাচীন মিশরে খোদাই করা বিভিন্ন ছবিতে প্রহরীদের সঙ্গে বানরও থাকতে দেখা গেছে। এমন একটি ছবিতে দেখা যায়, এক অপরাধীর পা ধরে রেখেছে বানর।
অপরাধস্থল তদন্তে ছিল বিশেষ বাহিনী
সেকালে মিশরে তদন্তকর্মগুলো বেশ পরিপূর্ণ ছিলো। অপরাধ সংঘটনের স্থান পরিদর্শন করা হতো আলাদা তদন্তকারীদের দিয়ে। অনুমাননির্ভর ধারণা থেকে নয়, বরং তারা সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার, সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, এমনকি তাদের পূর্ব-অপরাধের ইতিহাস আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতো।
মুখ না খুললে বেদম প্রহার
অপরাধী বা সাক্ষীরা স্বীকারোক্তি না দেওয়া পর্যন্ত বেদম মারধরের শিকার হতেন মিশরে। সাধারণত, সত্য না জানা পর্যন্ত একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে প্রহার করা হতো। কেউ অপরাধ অস্বীকার করলে তার ওপরও চলতো নির্যাতন।
সাক্ষ্যের সঙ্গে তুলনা করা হতো প্রমাণের
শারীরিক নির্যাতনের ফলে অভিযুক্তরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে এমন আশঙ্কা ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের। তাই তারা ঘটনাস্থল তদন্তে প্রচুর সময় ব্যয় করতো। অভিযুক্ত ও সাক্ষীর বক্তব্যের সঙ্গে যদি ঘটনাস্থলের বর্ণনা মিলতো, তাহলে বুঝে নিতো সঠিক ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছে তারা।
মিথ্যা বলার শাস্তি জানানো হতো সাক্ষীদের
সাক্ষ্যদানের সময় মিথ্যা বলার ও ধোঁকা দেওয়ার খুবই কঠিন ছিলো প্রাচীন মিশরে। এ ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গচ্ছেদ করা হতো। আর কীভাবে এই শাস্তি দেওয়া হবে তাও জানিয়ে দেওয়া হতো।
ছিল ব্যাপক দুর্নীতিও
বেশ কঠোর ছিল প্রাচীন মিশরের আইন ও তদন্তব্যবস্থা। একইসঙ্গে এমন অনেক প্রমাণ মিলেছে যে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে আদালত তা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতো না। দূর্নীতি ও ঘুষের দাপট ছিলো প্রচণ্ড। এমন ধনী কোনো অপরাধি বিচারককে কয়েকটা স্বর্ণের মোহর ঘুষ দিয়েও খালাস পেয়ে যেতেন বলে জানা গেছে।
পরকীয়ার কঠোর শাস্তি
প্রাচীন মিশরে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে ঠকালে মারাত্মক শাস্তি পেতে হতো। অনেক ক্ষেত্রে এজন্য মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতো। তবে নারীদের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রাটা ছিল বেশি। যদি কোনো নারী স্বামীকে ঠকানোর দায়ে অপরাধী হতেন তার নাক কেটে ফেলা হতো বা জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হতো। পুরুষদের এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড না হলেও ১ হাজার বেত্রাঘাত ও বিচ্ছেদের আদেশ দেওয়া হতো।
নিরপরাধ প্রমাণিত হলেও রয়ে যেত অপরাধী তকমা
প্রাচীন মিশরে বেশিরভাগ আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হতো। হাতেগোনা কয়েকজন যদিও বা ছাড়া পেতো কিন্তু রেকর্ডবইয়ে আজীবন “অপরাধী” হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকতো।
মূর্তির সিদ্ধান্তই সব
মিশরীয় সভ্যতার শেষ কয়েক শতকের দিকে দেবতা আমুনের পুরোহিত আইন ও বিচার বিষয়ক সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। সে সময় আমুনের একটি মূর্তির মাধ্যমে বিচার করা হতো। বিচারের সময় মূর্তির কাছে জানতে চাওয়া হতো কী করা উচিত। সেক্ষেত্রে মূর্তিটি সামনে গেলে “হ্যাঁ” এবং পেছনে গেলে উত্তর “না” ধরা হতো। বলা বাহুল্য, মূর্তি নাড়ানোর কাজটা মানুষকে দিয়েই করানো হত।