বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারিতে এপর্যন্ত সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখের বেশি মানুষ। যদিও এই মহামারিতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কম।
এবিষয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-ইউসিএল ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন শিশুদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা এবং তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে পরিচালিত পুরো বিশ্বের ৬৩৩২টি গবেষণা মূল্যায়ন করে দেখেছে।
এসব গবেষণা মূল্যায়নের পর যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তা হলো, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে প্রাপ্তবয়স্ক কোনও ব্যক্তির তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৬% কম। এছাড়া, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও মারাত্মক অসুস্থ হওয়া বা মারা যাওয়ার ঝুঁকি শিশুদের কম থাকে।
শিশুদের থেকে কি করোনাভাইরাস ছড়ায়?
এবিষয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-ইউসিএল ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন যে তথ্য দেয় তাতে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৩১টি ক্লাস্টারের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা যায় যে, মাত্র তিনটি ক্লাস্টারে সংক্রমণ শিশুদের থেকে হয়েছে। অর্থাৎ শিশুদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর হার ১০%।
গবেষকরা মনে করেন, যেহেতু শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলক কম তাই তাদের থেকে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তুলনামূলক কম। তারা মনে করেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত শিশুদের থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি কতটা তা দু’টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
প্রথমটি হচ্ছে, শিশুর হাঁচি-কাশির মতো উপসর্গ বেশি থাকলে তার থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকবে। আর উপসর্গ মৃদু থাকলে বা কম থাকলে ঝুঁকি কিছুটা কম থাকবে। কারণ এতে ড্রপলেটস নির্গত হওয়ার বিষয়টি জড়িত থাকে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কন্টাক্ট টাইম বা সংস্পর্শে আসার সময় কতটা। অর্থাৎ তার মতে, যদি কোভিড-১৯ আক্রান্ত কোন শিশু দীর্ঘ সময় ধরে বয়স্ক কারো সংস্পর্শে থাকে তাহলে ঝুঁকির মাত্রাটা এমনিতেই বেড়ে যাবে।
তবে সব মিলিয়ে শিশুদের থেকে বড়দের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি খুব বেশি না বলেই মনে করেন গবেষকরা।
শিশুদের সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর উপায়
শিশুদের থেকে বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ ও ভাইরোলজিস্টরা।
১. শিশুদের আলাদা রাখা
শিশুরা যেহেতু সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়ে খুব বেশি কিছু বোঝে না তাই পরিবারের অন্য সদস্য বিশেষ করে যারা বয়স্ক ও যাদের অন্য কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তাদেরকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে দরজা বন্ধ রাখতে হবে যাতে শিশুরা কাছে আসতে না পারে।
২. বাইরে থেকে এসে সরাসরি শিশুদের সংস্পর্শে না যাওয়া
বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু বন্ধ তাই শিশুদের বাইরে যাওয়ার মাত্রাও কম। তাই সেক্ষেত্রে তাদেরকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য যারা বাইরে যান তাদের থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। সম্পূর্ণভাবে ভাইরাস মুক্ত না হয়ে বা বাইরে থেকে এসে শিশুদের সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না।
৩. আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে আইসোলেশন করা
শিশুরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে তাদেরকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে আলাদা ইউনিট বা ব্যবস্থা করা যেতে পারে যেখানে শুধু শিশুদেরই আইসোলেশনে রাখা হবে। এক্ষেত্রে সব শিশুদের মধ্যে উপসর্গ থাকবে বলে তারা নিজেরা নিজেদের জন্য ঝুঁকি হিসেবে আবির্ভূত হবে না।
৪. পরিবারের অন্য সদস্যদের মাস্ক পরা
যেহেতু শিশুদের সব সময় মাস্ক পরিয়ে রাখা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অন্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে বয়স্কদের আলাদা করে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. শিশুদের সচেতন করা
কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হলে শিশুদের মধ্যেও সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
এক্ষেত্রে, যেসব পরিবারে কোভিড-১৯ রোগী রয়েছে সেসব পরিবারের বাচ্চাদের কিছুকিছু অভ্যাস গল্পের মতো করে বুঝিয়ে বলতে হবে। যেমন- শরীরের কোথায় কোথায় হাত দেওয়া যাবে না, কোনও কিছু যেন-তেনভাবে ফেলে রাখা যাবে না, কোথায় যাওয়া যাবে না ইত্যাদি।