বাড়ি বানানোর সময়ে সবচেয়ে অবহেলিত অংশ কিন্তু বাথরুম। ধরুন আপনি মনের মাধুরী মিশিয়ে সুন্দর করে সাজালেন আপনার বাড়ি। লিভিংরুম থেকে বেডরুম, সবেরই রুচিসম্মত অন্দরসাজ। তবে বাথরুম নিয়ে একটু ভাবনা-চিন্তা না করলে পুরো বাড়ির সৌন্দর্যর সঙ্গে বাথরুমটা কিন্তু বেমানান রয়ে যাবে। বাথরুম যত ছোটই হোক, একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ডিজাইন করতে পারলে কিন্তু এটাই হয়ে উঠতে পারে আপনার একা সময় কাটানোর সেরা জায়গা!
১. প্রথমেই বাথরুমের ডিজাইন প্রসঙ্গ। প্রাথমিকভাবে দু’টো ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, লক্ষ্য রাখতে হবে প্রাকৃতিক আলো-হাওয়া ঢোকার যেন সামান্যতম অবকাশ থাকে। দ্বিতীয়ত, ভেজা আর শুকনো অংশ সবসময় আলাদা রাখুন।
২. বাথরুমে মূলত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থাকে, সিঙ্ক বা বেসিন, টয়লেট ও শাওয়ার এরিয়া। তবে এখানে ত্রিভুজ বানাবেন না, খরচ কমাতে চাইলে এই তিনটিকে রাখুন এক দেওয়াল বরাবর,। অর্থাৎ, একই লাইনে। প্লাম্বিংয়ের খরচ অনেকটা কমবে।
৩. সিঙ্ক বা বেসিন রাখুন দরজার কাছাকাছি, কারণ বাথরুম থেকে বেরনোর আগে এটাই আপনার শেষ “স্টপেজ”।
৪. পেডেস্টাল সিঙ্ক ব্যবহার করলে স্থান সঙ্কুলান হবে। এই সিঙ্কের ওপরে রাখুন বেশ বড় মাপের একটা আয়না।
৫. দাড়ি কামাতে বা প্রসাধনী লাগাতে যাতে অসুবিধে না হয় তার জন্য আয়নার সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন। আয়নার আর একটি কাজও রয়েছে। বড় আয়না লাগালে ছোট বাথরুমকেও কিছুটা বড় দেখাবে!
৬. সিঙ্ক লাগোয়া জায়গায় একটা ছোট্ট ক্যাবিনেট রাখতেই হবে। আয়নার পাশে সুন্দর কাচের ক্যাবিনেট বা বেসিনের নিচে ক্যাবিনেট রাখতে পারেন। এই ক্যাবিনেট টপে রাখতে পারেন শেভিং কিট বা প্রসাধনের টুকিটাকি। তবে ব্যবহার শেষে এসবকিছুর স্টোরেজ হল ক্যাবিনেটের ভেতরে। তাই ক্যাবিনেটে র্যাকের ব্যবস্থা রাখুন।
৭. দরজা থেকে দূরে রাখুন টয়লেট ও শাওয়ার এলাকা। বাথরুমের দরজা খুললেই কমোডটা নজরে এলে যদি সমস্যা হয় সিঙ্কের পাশে একটা ছোট পার্টিশন লাগাতে পারেন।
৮. টয়লেট এরিয়ার ওপরের দেওয়ালে গিজার ফিট করে নিন।
৯. এরপরেই থাকবে শাওয়ার এরিয়া। এই জায়গাটা অন্তত ইঞ্চিখানেক সিমেন্ট দিয়ে বাথরুম ফ্লোর গার্ড করে নিন। এতে গোসলের পানি এই এলাকার বাইরে যেতে পারবে না।
১০. বাথরুম বড় হলে বাথটাব রাখতে পারেন। লাগাতে পারেন শাওয়ার কার্টেন বা কাচের শাওয়ার কিউবিকলও। এতে গোসলের পানি একেবারেই বাইরে ছিটকে আসবে না।
১১. প্রয়োজনে টেলিফোন শাওয়ার হেড ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্যই এই এরিয়ায় সাবান-শ্যাম্পু-তেল রাখার জন্য একটা তাক থাকা প্রয়োজন। আর থাকবে একটা টাওয়েল রড। স্থানাভাবে এই রড দরজার গায়ে লাগাতে পারেন।
১২. অন্য দেওয়াল ফাঁকা তাই এখানেও ক্যাবিনেট লাগিয়ে নিতে পারেন। তাতে থাকবে পোশাক, টয়লেট্রিজ, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস।
১৩. যেহেতু বাথরুমে পানির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি, তাই ফ্লোর আর দেওয়াল ভিজে থাকলে সেখানে নোংরা ধরতে পারে। ফ্লোর ও দেওয়ালে অ্যান্টি-স্কিড সেরামিক টাইলস ব্যবহার করলে সহজে পরিষ্কার করা যাবে, পিছলও হবে না।
১৪. বাথরুমকে সুন্দর দেখাতে হলে ব্যবহার করুন রঙিন টাইলস। নীল ও সবুজ রং মন ভাল রাখবে। মোনোটনি ব্রেক করতে হলে হালকা ও গাঢ় রঙের টাইলস মিশিয়ে লাগান। এছাড়া টেক্সচার্ড ওয়াল তো আছেই।
১৫. মার্বেলের মেঝেও করতে পারেন, তবে সেটা মেনটেন করা একটু কষ্টসাধ্য।
১৬. বাথরুমে একটা এগজস্ট ফ্যান অবশ্যই রাখবেন। হাওয়া খেললে পানি শুকোবে তাড়াতাড়ি।
১৭. বেসিনের আকার, আয়তন, রঙেও নতুনত্ব আনতে পারেন। গোল, চৌকো, ওভাল নানা আকারের বেসিন পাওয়া যায়। সাদার বদলে হালকা গোলাপি বা টুকটুকে লাল বেসিনও মন্দ লাগবে না!
১৮. বাথরুমের সিলিংটা সাদা বা ক্রিম রঙের হলে ভাল হয়। এতে আলো প্রতিফলিত হবে।
১৯. সাধারণত অন্যান্য ঘরের চেয়ে বাথরুমের আকার ও জানলা ছোট হয়। তাই স্বাভাবিক আলো বেশি না ঢুকলে আর্টিফিশিয়াল লাইট ব্যবহার করুন। এমনিতে সিলিং লাইটই যথেষ্ট। তবে একটা উজ্জ্বল আলো যেন বাথরুমের জন্য বরাদ্দ থাকে!
২০. মনে রাখবেন, সঠিক স্থানে আলো লাগাতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আয়নার ঠিক ওপরেই একটা আলো লাগানো থাকে। এতে মুখ ভালো করে দেখা যায় না চোখ, নাক ও গালের নিচে ছায়া পড়ে। তাই আয়নার জন্য ভালো অপশন টাস্ক লাইটিং।