যতদিন যাচ্ছে ডায়াবেটিস করাল থাবা বাড়াচ্ছে শিশু ও তরুণদের দিকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, এজন্য বর্তমান লাইফস্টাইল অনেকাংশেই দায়ী। পড়াশোনার চাপ, খেলাধুলোর জায়গার অভাব, সব মিলিয়ে শিশুদের জন্য অতি জরুরি এক্সারসাইজও এখন প্রায় হয় না বললেই চলে। তারসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রবণতা, বাড়ছে ওবিসিটি। এরফলে আরও বেশি করে শিশুরা পড়ছে ডায়াবেটিসের কবলে। ঠিক সময়ে ধরা পড়ে চিকিৎসা শুরু না হলে ওই সমস্যা নিয়েই বড় হতে থাকবে শিশুটি। আর এর থেকেই পরবর্তীতে চোখ, নার্ভ, দাঁত, ত্বক, হার্ট ও কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ ও প্রকারভেদ
শিশুদের ডায়াবেটিস মূলত দু’রকম হয়- টাইপ ১ ও টাইপ ২।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস মেলিটাসকে আগে জুভেনাইল ডায়াবেটিস বলা হত। হঠাৎ স্বাস্থ্যের অবনতি বা ইনফেকশনের পরে অনেকসময় এই ধরনের ডায়াবিটিসের প্রভাব লক্ষ করা যায়। সাধারণত এটি খুবই অল্প বয়সে হয়। দু’বছরের বাচ্চাও টাইপ ১ ডায়াবেটিসের শিকার বতে পারে। তবে এর আগে বা পরেও হতে পারে। বাচ্চার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে, বাচ্চা ক্লান্ত বোধ করে, পেটব্যথা-বমি হয়, ওজন কমে যেতে পারে, ঘনঘন পানি তেষ্টা পায়, বারবার ইউরিন পাস করে। অনেক সময় লক্ষণ দেখে বাবা-মা বুঝতেও পারেন না বাচ্চার ডায়াবেটিস হয়েছে।
তাই এই লক্ষণগুলো দেখলে তখনই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় না, বা তৈরি হলেও তা শরীর ব্যবহার করতে পারে না।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসও আজকাল বাচ্চাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদতে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াবেটিস, যা এখন শিশুদেরও হচ্ছে। এর লক্ষণ কিন্তু অত শীঘ্র লক্ষ্য করা যায় না। তবে সাধারণত এই ডায়াবেটিসের রোগীরা ওবিসিটি’তে ভোগে, খিদে বেড়ে যায়, বারবার ইউরিন হয়, আলট্রাসাউন্ড করলে ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা দেখা যায়।
পরিবারে ডায়াবেটিসের হিস্ট্রি থাকলে এই সমস্যা বেশি করে দেখা যায়। সঙ্গে আছে স্ট্রেস, ফাস্ট ফুড খাওয়া আর ব্যয়াম না করার প্রভাব। তবে এক্ষেত্রে জন্মের পর প্রথম ১,০০০ দিনের ডায়েটটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিসের জিনগুলো ম্যানিফেস্ট করবে কিনা তা এই সময়ে ডায়েটের ওপরে অনেকটা নির্ভর করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসেও শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারলেও তা শরীর ব্যবহার করতে পারে না।
চিকিৎসা
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই পারেন ছোটদের ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করতে। যেহেতু বাচ্চাটিকে বহুদিন এই অসুখের প্রভাব ভোগ করতে হয়, তাই জটিলতা তৈরি হওয়ার সুযোগও বেশি থাকে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ইনসুলিন দেওয়া ছাড়া সেভাবে কোনও চিকিৎসা নেই। তবে ইনসুলিন দিলেই বাচ্চা ভাল হয়ে যাবে এমন নয়। দিনে কতবার কত পরিমাণে ইনসুলিন লাগবে তা নির্ভর করে রোগীর ওপর। বেশি বা কম ইনসুলিন দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বাচ্চার খেতে অসুবিধে হলে বা জ্বর হলেও কিন্তু ইনসুলিন চালিয়ে যেতে হবে। ইনসুলিন পেন আজকাল বাজারে যথেষ্ট সহজলভ্য। ডাক্তার মনে করলে অবশ্যই ইনসুলিন পাম্পের ব্যবস্থা করবেন। বাড়িতে মেশিন কিনে এবং বাইরেও ব্লাড টেস্ট করিয়ে নিয়মিত গ্লুকোজ মনিটরিং-ও অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিতভাবে চোখ ও পায়ের পরীক্ষা করা দরকার।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস ঠেকাতে নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা খুব দরকার। ফাস্ট ফুড বাদ দিতে হবে, খাবারে রাখতে হবে প্রচুর ফল ও শাকসবজি। বেশি চিনিযুক্ত খাবার একটু কম খেলেই ভাল। খেলেও এমন খাবার খেতে হবে যাতে হঠাৎ করে সুগার না বাড়ে। রোগীর পরিবার ও রোগীকে ব্লাড সুগারের সমস্যা সংক্রান্ত সমস্ত জিনিস বুঝিয়ে দেওয়া বিশেষজ্ঞরই দায়িত্ব। পাশাপাশি নিয়ম মেনে চললে শিশুটি একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।