কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ হ্রাস করতে সক্ষম এমন কোনো ভ্যাকসিনের নাম প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে গবেষণায়। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফল নিরীক্ষণের পর এমন তথ্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক বলেন, "গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলটি দুর্দান্ত। ফলাফলে দেখা যায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিস্তার কমাতে পারে। ভ্যাকসিনগুলোই এই মহামারি থেকে বেরিয়ে আসার পথ।"
যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ দশমিক ৬ লাখ মানুষকে প্রথম কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষার ফলে দেখা গেছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে "যথেষ্ট" প্রভাব ফেলতে পারে।
বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাট বলেন, "যেহেতু টিকা দেওয়া প্রতিটি ব্যক্তি অপ্রত্যক্ষভাবে অন্যান্য লোকদেরও রক্ষা করতে পারবে তাই ভ্যাকসিন সংক্রান্ত এই সর্বশেষ বিশ্লেষণ মহামারি থেকে বেরিয়ে আসতে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।"
ভ্যাকসিনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণায় অ্যাসিম্পটোমেটিক সংক্রমণের প্রভাব পরিমাপ করা হয়েছে। গবেষণায় সংক্রমণের প্রভাব লক্ষ্য করে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটির একটি ডোজ তিন মাসের জন্য ৭৬ শতাংশ সুরক্ষা সরবরাহ করেছে।
তিন মাস সময়কালে কোনো সমস্যা না হওয়ায় গবেষকরা বলেছেন, গবেষণার ফল প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে চার থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানকে সমর্থন করে। ১২ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
আর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর দেখা যায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের সুরক্ষা স্তরটি ৮২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে।
প্রায় ১২ সপ্তাহের জন্য দ্বিতীয় ডোজটি বিলম্ব করেছে যুক্তরাজ্য। ফলে যতটা সম্ভব লোকজনকে প্রথম ডোজ দেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া গেছে।
এর লক্ষ্য হলো বিপুল সংখ্যক লোককে কিছুটা সুরক্ষা দিয়ে আরও বেশি প্রাণ বাঁচানো। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়াই ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এই কাজের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, "বুস্টার শটটি বিলম্বিত করার জন্য যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে গবেষণার ফল সমর্থন করেছে।"
"এটি আমাদের আশ্বস্ত করে যে লোকেরা ভ্যাকসিনের এক ডোজ পেয়ে ২২দিন পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকে।"
যদিও অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ব্যবহার ফরাসি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ করেছে। কেন না তারা মনে করেন, এটি কেবল ৬৫ বছরের কম বয়সীদের দেওয়া উচিত।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক বলেন, "বিজ্ঞানীরা সরাসরি ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের দিকে নজর দিয়েছিলেন এবং অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি সমস্ত বয়সের মানুষের জন্য কাজ করে বলে একটি উচ্চ মাত্রার আত্মবিশ্বাস রয়েছে।”
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের পাশাপাশি, ফাইজার বা বায়োএনটেক ভ্যাকসিনটিও যুক্তরাজ্য জুড়ে চালু করা হচ্ছে। তবে ফাইজার ভ্যাকসিন এবং মডার্নার ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলো অনুমোদিত হলেও এখনও ব্যবহার করা হয়নি। কারণ, সংক্রমণ রোধে এদের কোনো সম্ভাব্য প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিবিসির স্বাস্থ্য সংবাদদাতা জেমস গ্যালাঘার বলেন, "বিভিন্ন ভ্যাকসিন ভাইরাসের একই অংশকে লক্ষ্য করে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাই যদি কোনো ভ্যাকসিন সংক্রমণ হ্রাস করতে পারে তবে অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলোর ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা রয়েছে।"
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, করোনভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী ১৬ হাজার ৮৪০ জন, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ২৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৯০ দশমিক ৬ লাখ মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটি পেয়েছিল আর ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৬জন দ্বিতীয় ডোজটিও নিয়েছে।
পরীক্ষায় আরও পাওয়া গেছে, ২৮ দিনের মধ্যে ১ হাজার ৪৪৯ জন মারা গেছেন এবং ৯০ শতাংশ রোগীর দেহে প্রাথমিক সংক্রমণের ছয় মাস পরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্কের করা এই সমীক্ষাটি, সংক্রমিত ১ হাজার ৯৯৯ জনকে নিয়ে করা হয় যা বিশ্বের বৃহত্তম ফলো-আপ স্টাডিজ।