কাজখস্তানের ছোট্ট একটি গ্রাম কালাচি। ১৬০ জন বাসিন্দার গ্রামটিতে হঠাৎ করেই একদিন দেখা দেয় অদ্ভুত একটি "রোগ"। গ্রামের বৃদ্ধ, শিশু, যুবক, যুবতী সবাই হঠাৎ করেই আক্রান্ত হয়েছিলেন এই রোগে।
আর রোগটি হচ্ছে "ঘুম রোগ"। গ্রামের ১৬০ জন বাসিন্দার সবাই টানা তিন বছর ধরে রোগটিতে কমবেশি আক্রান্ত ছিলেন। কোনো কোনো সময় এমন হয়েছে যে, টানা ছয় দিনও ঘুমিয়েছেন তারা। কারও আবার এরপরও ঘুম ভাঙতো না।
এরপর যখন তারা জাগতেন, দেখতে পেতেন অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে যৌন চাহিদা। কেউ বা সারাক্ষণ দেখতেন অদ্ভুত সব দৃশ্য। সেই সাথে ছিল মাথা ঘোরা ও খাবারে অনীহার মতো নানান শারীরিক সমস্যা।
২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে এই সমস্যা চলেছে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর।
বিশ্বের সামনে কালাচি গ্রামের অদ্ভুত এই ঘুম রোগের কথা প্রথম আসে ২০১৪ সালে। শুরু হয়ে যায় গ্রামের ঘুমকাতুদের ওপর গবেষণা।
বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত এই এই রোগের নাম দেন ‘‘স্লিপি হলো’’। সেই সাথে খুঁজতে থাকেন এই রোগের কারণ। আর কারণ খুঁজতে যেয়েই বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ সব তথ্য।
জানা যায়, কালাচি গ্রামের কাছেই এক সময় ছিল ইউরেনিয়ামের খনি। আর সেই খনির বিষাক্ত সব পদার্থ মিশে পানি ও বায়ু দূষণের ফলে ঘটিয়েছে এমন অদ্ভুত ঘটনা। এমনকি কালাচি’র বাতাসে স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় ১০ গুণ বেশি কার্বন মনোক্সাইড পাওয়া যায়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে, কাজাখস্তান প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে গবেষণার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে কারণ হিসাবে “বাতাসে অত্যধিক মাত্রায় কার্বন মনোক্সাইডের” উপস্থিতিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর গ্রামের বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১২০টি পরিবার কালাচি গ্রামে আবারও ফিরে এসেছে। বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন।