বাল্যবিবাহ দেশের কন্যাশিশুদের কাছে অভিশাপের নাম। করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশে বেড়েছে বাল্যবিবাহের হার। একই সাথে বেড়েছে হাজারো স্বপ্ন ভঙ্গের আহাজারি।
শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার আগে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নওটিকা-আরিপপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লিখে গিয়েছিলেন তেমনই এক স্বপ্ন ভঙ্গের কথা।
সে সময় নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মেয়েটির স্বপ্ন ছিল নীল দিগন্তে উড়ে বেড়ানোর। পাইলট হয়ে নিজের এই স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিতে চেয়েছিল তার কিশোরী মন। কিন্তু বাল্যবিবাহের কারণেল চুরমার হয়ে গেছে তার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের ঠিক কিছুক্ষণ আগে বড় বোনের পুরনো খাতায় দুই লাইনের আক্ষেপের কথাটি লিখে যায় ওই শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তার ছোট ভাই লেখাটি নিয়ে নওটিকা-আরিপপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা দুলারী খাতুনের কাছে নিয়ে যায়।
আক্ষেপ করে দুলারী খাতুন জানান, খাতায় লেখা ছিল “হতে চেয়েছিলাম পাইলট, কিছুই হলো না। বিয়ে হয়ে গেল।” ছোট্ট মেয়েটির সারাজীবনের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার আহাজারি এই কথাগুলো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবিরুজ্জামান জানান, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ে এত বড় স্বপ্ন দেখতে পারে, প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। তবে শিশুদের মনোজগত সম্পর্কে আমাদের ধারণা এখনও যথেষ্ট নয়।
দুলারী খাতুন আরও জানান, গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ কন্যাশিশুই বাল্যবিবাহের শিকার। কেউ কখনো মুখ ফুটে আপত্তি করতে না পারলেও এই লেখাটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। এটি একধরনের প্রতিবাদ।
গত ৪ জুন প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ১০ বছর আগে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় বিয়ে হয়েছিল তার। ১০ বছর আগের স্বপ্ন হারিয়ে গেছে তার।
বর্তমানে তিনি দুই সন্তানের জননী। তিনি জানান, আট বছরের বড় ছেলেকে তিনজন প্রাইভেট টিচার দিয়েছেন। বাড়িতে নিজেই পড়া দেখিয়ে দেন। শ্বশুর-শাশুড়িও অত্যন্ত ভালো মানুষ। পাইলট হবার সেই স্বপ্নের কথা মনে না থাকলেও এখন তার সব স্বপ্ন দুই ছেলেকে ঘিরে।