পলিসিস্টিক ওভারি নামক এ রোগটি সাধারণত কিশোরী ও নারীদের হয়ে থাকে। নারীদেহে এন্ড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষ হরমোন এর আধিক্যের কারণে বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে মেয়েদের বন্ধ , অনিয়মিত মাসিক, জরায়ু ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রকমের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কিন্তু, এ পলিসিস্টিক ওভারি কী? পলিসিস্টিক ওভারি হলো নারীদের জরায়ুতে হওয়া কিছু সিস্ট। যা দেখতে ছোট ছোট পানি ভরা থলির মত, আর একাধিক সিস্টকে একত্রে বলা হয়ে থাকে পলিসিসিস্ট।
নারীদের ওভারি যে রিপ্রোডাক্টিভ অরগ্যানগুলোর মধ্যে অন্যতম তা তো আমরা জানি। পলিসিস্টিক ওভারির ফলে এ ছোট ছোট সিস্টগুলো ওভারি বা ডিম্বাশয়কে ঘিরে থাকে। যার ফলে ওভারির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
কীভাবে বুঝবেন আপনারও পলিসিস্টিক ওভারি রয়েছে? কিশোরী বা অল্প বয়সী মেয়েদের কিছু শারীরিক পরিবর্তন দেখেই ধারণা করা যেতে পারে। যেমন-
১. অনিয়মিত মাসিক
২. মাসিকের সময়ে অতিরিক্ত রক্তস্রাব
৩. মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরুষালি)
৪. ব্রন মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে
৫. তলপেটে ব্যথা
৬. মখমলের মতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়)
৭. বন্ধ্যাত্ব
এমনকি এ রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে বেড়ে যায়। পলিসিস্টিক ওভারি একটি জিনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বয়ে হয়ে থাকে। জিনগত ত্রুটির কারণেই কিশোরী বয়সেই দেহের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, অনিয়মিত জীবনযাপন ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ করা এ রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পলিসিস্টিক ওভারিতখনই দেখা দেয়, যখন ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করে। তাই এটি একটি হরমোনজনিত সমস্যা। সেক্ষেত্রে, অধিকাংশ রোগীর দেহে ইনস্যুলিন রেজিস্ট্রেন্স থাকে এবং তাদের বাহ্যিক গঠন স্থূলকায় হয়ে থাকে।
কিন্তু, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্তরা চাইলেই, এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। একটু কঠিন হলেও, নিয়মিত জীবনযাপন,পরিমিত খাবার খাওয়া ও ব্যায়ামের মাধ্যমেই পিসিওএসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের রোগীর খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কম থাকবে। সেক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি (আলু বাদে), রঙিন ফলমূল ও আমিষজাতীয় খাদ্য প্রাধান্য পাবে।
প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন নারী পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। এছাড়াও এ রোগের লক্ষণগুলো অন্যান্য রোগের লক্ষণের চাইতেও জটিল হওয়ায় অনেক নারীই তা দ্রুত বুঝে উঠতে পারেন না। তাই, আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত এবং এরূপ শারীরিক অসংগতি দেখা গেলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তা না হলে, এ রোগের সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। এমনকি নারীর প্রজননক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।