নগরজীবনে এখন সবুজের দেখা পাওয়া বেশ দুষ্কর। দিন দিন কমে যাচ্ছে সবুজের ছোঁয়া। কিছুদিন আগেও দু-চারটা গাছ নেই এমন কোনো বাড়ি ছিল না। সময় দ্রুতই পাল্টাচ্ছে। এখন বড় বড় অট্টালিকার কবলে দেশ। অথচ শহরের অধিকাংশ বাড়ির ছাদগুলো এখনও ফাঁকা পড়ে আছে। এই ছাদগুলোকে অনায়াসেই সবুজ করা যায়। আর তাতে নগরীর প্রতিটি বাড়ির ছাদ হয়ে উঠতে পারে একখণ্ড সবুজ বাগান।
শহরের পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের ছাদ ও ব্যালকনি বাগানের ভূমিকা অপরিসীম। বিষমুক্ত টাটকা ফলমূল, শাক-সবজির স্বাদ আস্বাদনের জন্য ছাদে বাগানের কোনো বিকল্প নেই। গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছ-পালার মাধ্যমে সবুজায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রুফ গার্ডেন সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। অবকাঠামো তৈরিতে যে পরিমাষ জমি নষ্ট হচ্ছে তা কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে রুফ গার্ডেনিং বা ছাদ বাগানের মাধ্যমে।
বাড়ির ছাদে বাগান করতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে চলে আসে তা হলো ছাদ নষ্ট হওয়া। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েই ছাদ বাগান করতে হবে। ছাদে স্থায়ী বাগান করতে হলে প্রথমেই দুই ইঞ্চি পুরু করে অতিরিক্ত একটি ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশিং দিতে হবে। ছাদের উপর ভবিষ্যতে আরও ছাদ দেওয়ার সম্ভাবনা থাকলে স্থায়ী বেড না করে টব বা ড্রামে বাগান করাই উত্তম। টব বা ড্রাম যেকোনো সময় স্থানান্তর সম্ভব বলে ছাদ পরিষ্কার থাকে এবং নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। টব বা ড্রামটিকে ছাদের মেঝে থেকে সামান্য উপরে বসালে পানি জমে থাকে না, ড্রামের নিচে পরিষ্কার করতেও সুবিধা হয়। নতুন বাগান করার ক্ষেত্রে ছোট ছোট টব দিয়েই শুরু করা ভালো। ছোট টবের জন্য উপযোগী ফল গাছ যেমন- লেবু , ডালিম , কামরাঙ্গা, করমচা, সফেদা, মিশরীয় ডুমুর, চেরি ফল, কমলা, বারোমাসি আমড়া, আতা ইত্যাদি। যা খুব সহজেই ছাদে চাষ সম্ভব।
মাঝারি আকারের উপযোগী গাছ যেমন- থাই মিষ্টি তেঁতুল, পেয়ারা, জামরুল, আঙুর, বাতাবি লেবু, আম, অরবরই, আমলকি, মালটা ইত্যাদি। আর বড় টবের উপযোগী গাছ যেমন- যেকোনো কূল জাতীয় গাছ, জলপাই, কদবেল, বেল, বারোমাসি কাঁঠাল, জাম, পেঁপে, কলা ইত্যাদি। টবের গাছে প্রতিবছর ফল পেতে হলে বছরে একবার আংশিক মাটি পরিবর্তন করতে হবে। যদি গাছটি ছোট টবে হয় তাহলে বড় টবে নিতে হবে। আর যদি টবের সাইজ ১৬ ইঞ্চি থেকে ২০ ইঞ্চি বা তার চেয়ে বড় কোনো টব বা হাফ ড্রাম হয় তবে টব পরিবর্তন করতে হবে না। শুধু টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করলেই চলবে এবং এটি ধারাবাহিক ভাবে প্রতিবছর করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী কাজটি করা গেলে প্রতি বছর এসব গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে।
ছাদে খুব অল্প পরিশ্রমে যে সব শাক-সবজির চাষ করা যায় তা হলো- করলা, টমেটো, করলা, ঢেঁড়শ, চিচিংগা, ঝিঙা, পুঁই শাক, চালকুমড়া, কলমি শাক, মূলা, কাঁচামরিচ, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা, কচু, ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রুকলি, গাজর, ডাটা, লাল শাক ইত্যাদি।
এভাবে ছাদ বাগানের মাধ্যমে পরিবারের চাহিদা পূরণ সম্ভব। সঙ্গে শহরে অপ্রাপ্য সবুজের একটু হলেও ফিরিয়ে আনা যায়। সেই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষায় স্বার্থক উদ্যোগও হতে পারে এটি।