বিশ্বসাহিত্য যার কাছে ঋণী তেমন একজন লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি। ১৮৬৮ সালে আজকের দিনে রাশিয়ার নিঝনি নোভগরদ অঞ্চলে তার জন্ম।
শুভ জন্মদিন, ম্যাক্সিম গোর্কি!
আলেক্সিয়েই ম্যাক্সিমভিচ পেশকভ তার পারিবারিক নাম। ম্যাক্সিম তার পিতার পদবী। আর রুশ ভাষায় “গোর্কি” শব্দের অর্থ তিক্ত বা তেতো। এ নামেই তিনি অমর হয়ে আছেন। যার জীবন ও সৃষ্টি অনন্য অনুপ্রেরণার এক শক্তি।
অনেক গরিব পরিবারে জন্ম ম্যাক্সিম গোর্কির। খুব ছোটবেলায় হারান বাবা ও মাকে। এরপর তার ঠাঁই হয় দাদির কাছে। অর্থের অভাবে স্কুলে যাওয়া হয় না তার। নিজে নিজে শিখে হয়েছেন স্বশিক্ষিত। অর্থ উপার্জন করেছেন শ্রমিক হয়ে। হেঁটে হেঁটেই ঘুরে বেড়িয়েছেন জন্মভূমির বিশাল এলাকা। অপলক দেখেছেন প্রকৃতি আর নিম্নবর্গের মানুষের জীবন। ডিগ্রিহীন এ ব্যক্তিত্বের ছিল শুধু কাণ্ডজ্ঞান, স্বপ্ন আর সাহস। পাঁচবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন এ মহান।
প্রচণ্ড হতাশায় কিশোর বয়সে ম্যাক্সিম গোর্কি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এই মানুষটিই আবার জীবনে ফেরেন বিস্ময়করভাবে। নিচুতলার মানুষের জীবন তার সাহিত্যে খুব সরল ভাষায় প্রতিফলিত।
সাহিত্য সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পর্কে ম্যাক্সিম গোর্কি বলতেন, “আমার জীবনে সঞ্চিত মালমসলাকেই মুখ্যত কাজে লাগাই আমি সাহিত্যে।”
গোর্কির শক্তিময় সাহিত্য তৎকালীন শাসক রাশিয়ার জুলুমবাজ জারতন্ত্রের কাঠামোতে আঘাত হানে। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের বড় অনুপ্রেরক তিনি। এর নেতা লেনিন ছিলেন গোর্কির ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
বিপ্লবে অবদান রাখলেও দালাল দলবাজ ম্যাক্সিম গোর্কি কখনোই ছিলেন না। তিনি কমিউনিজমের নামে পার্টির কর্তৃত্ববাদ ও ভিন্নমত দমনের তীব্র সমালোচনা করতেন। আর তার এ ন্যায্য চাওয়াকে রাষ্ট্রকর্তারা সহ্য করেনি। ফলে লেনিনের মৃত্যুর পর দেশ ছাড়তে হয় গোর্কিকে।
আমরা যে ম্যাক্সিম গোর্কি পড়তে পারছি এর জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকতে হবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে। কারণ এ রুশ সাহিত্য বাংলায় অনুবাদে তিনিই প্রথম সক্রিয় হন। বিদ্রোহী নজরুল ছিলেন লেবার স্বরাজ পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র “লাঙল” পত্রিকার সম্পাদক। এ পত্রিকায় ১৯২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদে গোর্কির দুনিয়া কাপানো উপন্যাস “মা” ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
সমাজের যেকোনো ধরনের রূপান্তরে গোর্কির সাহিত্য পাঠ অনিবার্য। অন্তত তার “মা”, “আমার ছেলেবেলা”, “পৃথিবীর পথে”, “পৃথিবীর পাঠশালা”র মতো সাহিত্যকর্মগুলো। সময় পেরিয়ে এমন সৃষ্টি কালজয়ী হয়েছে।
ম্যাক্সিম গোর্কির মৃত্যু অনেকে অস্বাভাবিক মনে করেন। বহুজনের মত এমন যে, এ সত্য কথককে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তার নশ্বর দেহের প্রয়াণে কিছু আসে যায় না। সৃষ্টিগুণেই তিনি হয়ে আছেন আজকের দিন পর্যন্ত অমর।