গত কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সমর্থকদের ভালবাসা হৃদয় ছুঁয়েছে আর্জেন্টিনার মানুষের। খেলার ভালোবাসা এখন রূপ নিচ্ছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কে। এমনকি বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন গভীর হচ্ছে। তবে দিনশেষে সম্পর্কের সেতুবন্ধন হিসেবে ছিল ফুটবলই। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ছাড়াও খাবারের মধ্যে গরুর মাংসের প্রতি আবেশের দিক থেকে বাংলাদেশি এবং আর্জেন্টাইনদের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে।
গরুর মাংস এবং এ থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবারের জন্য আর্জেন্টিনা বেশ বিখ্যাত। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেসে হয়ত আমরা সবাই যেতে পারব না। কিন্তু সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া পাম্পাস স্টেকহাউসে আর্জেন্টিনার বিশ্বখ্যাত স্টেকের স্বাদ চেখে দেখতেই পারি। পাম্পাস স্টেকহাউস ঢাকার বনানীর আহমেদ টাওয়ারের ২৬ তলায় অবস্থিত। পাম্পাস স্টেকহাউসের মনোরম দৃশ্য এবং স্টেকের বিস্তৃত স্বাদ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
পরিবেশ
রুফটপ এই রেস্টুরেন্টে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সর্বপ্রথম যে জিনিসটি আপনার চোখে পড়বে ক্লাসিক সিগার হাতে আর্জেন্টাইন বিপ্লবী চে গুয়েভারার একটি ওয়াল টু ওয়াল ম্যুরাল। রেস্টুরেন্টটির ছাদে ক্ল্যাসিকালভাবে স্টেকহাউজ সাজানো হয়েছে। উষ্ণতা বজায় রাখতে পুরো জায়গাটিকে কাঠের বিম দ্বারা আবদ্ধ রাখা হয়েছে। মার্বেলের মেঝে থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে বড় বড় ঝাড়বাতি। বাইরের জায়গাটা বেশ বড় এবং খোলামেলা। পুরো ছাদের সীমানাজুড়ে থাকা গাছপালা রাতের বেলায় সবুজ আলোয় জীবন্ত হয়ে ওঠে।

খাবার
পাম্পাস স্টেকহাউসের খাবারগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসবে স্মোকড স্যামন কার্পাসি। এই খাবারটি মেয়োনিজ, রসুনের পেস্ট, দই এবং ভার্জিন অলিভ অয়েলের সঙ্গে প্যাপ্রিকা তেলে প্রস্তুত করা হয়। মাঝারি আঁচে রান্না করা সামান্য পোড়া স্যামনের ওপরে স্বাদের জন্য মেয়োনিজ দেওয়া হয়। স্যামনের মাঝে মেয়োনিজ একটি উজ্জ্বল লাল বিটরুট পিউরির উপরে ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করা হয়। মুখে দেওয়া মাত্রই নোনতা এবং সাইট্রাস স্বাদের স্যামন গলে যেতে বাধ্য।
গ্রিক সালাদে রয়েছে ভিনেগার, চেরি টমেটো, কালামতা জলপাই এবং কাটা লাল পেঁয়াজ। লেটুসের ওপর চেরি টমেটো ছড়িয়ে আছে। সেই সঙ্গে ওপরে ঝরা ফেটা পনিরের পাশাপাশি রয়েছে কালো জলপাই এবং লাল পেঁয়াজ। স্বাদ বাড়ানোর জন্য অনেক সময় ড্রেসিং যোগ করা হয়। তবে ড্রেসিং না থাকলেও টমেটো এবং পেঁয়াজ খাবারে স্বাস্থ্যকর দিক নিয়ে আসে।

যদি বিশেষ পানীয়ের প্রতি আপনার দুর্বলতা থাকে, তাহলে তাদের মকটেল বারের স্ট্রবেরি মার্গারিটা আপনার জন্য হতে পারে বাড়তি পাওনা। এই পানীয়টি মূলত স্ট্রবেরি, লাইম জুস, পুদিনা পাতা এবং হানি আইসের একটি চমৎকার মিশ্রণ। তবে স্ট্রবেরি এবং লাইম জুসের টক স্বাদই এই পানীয়ের মূল বিশেষত্ব। এই পানীয়ের একটি চুমুক তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে সতেজ করে তুলবে।

ডেজার্টের জন্য বেছে নিতে পারেন ব্যানানা ক্রেপ। এতে সাদা ক্রিম সহ গমের রুটি, কলার পুলেট, দারুচিনি স্টিক পাউডার, ভ্যানিলা এবং মোড়ানো রুটির ভিতরে ভরা চকোলেট সস থাকে। ব্যানানা ক্রেপে বেলজিয়ান স্বাদসমৃদ্ধ ভ্যানিলা এবং চকোলেট সস রয়েছে। ব্যানানা পুলেটে রয়েছে ভ্যানিলার নির্যাস, যা ক্রেপের সুস্বাদকে বাড়িয়ে তুলে।
পাম্পাস স্টেকহাউসে ৪০০ থেকে ৩,৭৫০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়।

চ্যালেঞ্জ
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে খোলা হলেও রেস্টুরেন্টটির বাড়তি প্রচারণা প্রয়োজন। পাম্পাস স্টেকহাউসের পরিচালক সালমান সজল বলেছেন, জমকালো উদ্বোধনের পরিবর্তে যেহেতু সাদামাটাভাবে আমরা যাত্রা শুরু করেছি, তাই মানুষের মাধ্যমে আমাদের রেস্টুরেন্টের আরও প্রচারণা প্রয়োজন।
গত ঈদুল আযহার পর থেকে তারা মাংস আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমান সময়ের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যবসার ধীরগতির কারণে তারা প্রিমিয়াম মানের স্থানীয় মাংস ব্যবহার করা শুরু করেছেন। সালমান সজল বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের কাছে মাংস আমদানির সুযোগ নেই।

তবে দ্রুত অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে খাবারের দাম এবং তালিকা তুলনামূলকভাবে যুক্তিসঙ্গত বলে উল্লেখ করে পাম্পাস স্টেকহাউসের পরিচালক বলেন, আমার মনে হয়, খাবারের তালিকা এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান যুক্তিসঙ্গত।
পাম্পাস স্টেকহাউসে উচ্চ মানের স্টেক সরবরাহ করে, যা রেস্টুরেন্টেটির ব্যবসার মূল উৎস। সেই সঙ্গে সবাইকে রেস্টুরেন্টের স্টেক চেখে দেখারও আহ্বান জানান সালমান সজল।
শেষ কথা
আপনি যদি ঢাকার একটি মনোরম দৃশ্য উপভোগের মাধ্যমে আর্জেন্টাইন গরুর মাংস নিয়ে হাইপ দেখতে চান, তাহলে এই রুফটপ রেস্টুরেন্টটি আপনার প্রত্যাশা পূরণ করবে।