আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চিনি একটি বহুল ব্যবহৃত বস্তু। তবে চিনির ক্ষতিকারক প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমরা এর যথোপযুক্ত বিকল্প খুঁজে আসছি। উদাহরণস্বরূপ ২০১৫ সালে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে যখন স্টেভিয়া অনুমোদন পেয়েছিল, তখন স্বাভাবিকভাবেই মিষ্টিপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি ছিল না। কারণ তারা নির্ভাবনায় প্রিয় পেস্ট্রি এবং মিষ্টিজাত পণ্য খেতে পারে। তবে স্টিভিয়া কি সত্যিই চিনির উপযুক্ত বিকল্প?
স্টেভিয়া কী?
স্টেভিয়া হল একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মানো স্টেভিয়া রেবাউডিয়ানা গাছের পাতা থেকে পাওয়া যায়। কৃত্রিমভাবে উত্পাদিত হয় না বলে স্টেভিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। স্টেভিয়ায় স্টিভিওসাইড এবং রিবাউডিওসাইডের মতো মিষ্টি যৌগ রয়েছে।
বেদা কিউরের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ বিকাশ চাওলা বলেন, মিষ্টি স্বাদ এবং উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য শত শত বছর ধরে স্টেভিয়ার পাতা ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথমে স্টেভিয়ার পাতা সংগ্রহ করে শুকানো হয় এবং পরবর্তীতে গরম পানিতে ভেজানো হয়। স্টেভিয়া পাতার স্টেভিওল গ্লাইকোসাইড নামক মিষ্টি উপাদান থেকে নির্যাস তৈরির জন্য মিশ্রণটি ফিল্টারিং করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে যা পাওয়া যায়, সেটিকে ডেক্সট্রোজ বা মাল্টোডেক্সট্রিনের মতো বিভিন্ন ধরণের অ্যাডিটিভের সঙ্গে মেশানো হয়। এসব অ্যাডিটিভ রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি সেসব উপাদান খাবারে সহজভাবে মিশে যেতে ভূমিকা রাখে।
তবে চিনির চেয়ে অত্যধিক মিষ্টি হলেও স্টেভিয়ায় ক্যালরি এবং শর্করা নেই। ফলে ওজন কমানোর জন্য চিনির ভালো বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়া ব্যবহার করা যায়। তবে উদ্ভিদভিত্তিক হওয়ার পরেও স্টেভিয়া এখনও একটি উচ্চ পরিমার্জিত পণ্য বলেই অভিমত বিকাশ চাওলার।
বিকাশ চাওলা বলেন, স্টেভিয়ায় অ্যাসপার্টেম, সেকারিন, সুক্রলস বা কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় কোনো পদার্থ নেই। স্টেভিয়ায় কোনো কার্বোহাইড্রেট কিংবা ক্যালরি নেই। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি চিনির সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক বিকল্প।
তিনি আরও বলেন, স্টেভিয়ায় রয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বিনষ্টকারী প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান। স্টেভিয়া মানুষের দেহের অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। হাইপারটেনশন রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধেও স্টেভিয়া ভালো কাজ করে।
অনেক ডায়াবেটিস রোগীই চিনির বিকল্প হিসেবে স্টেভিয়া ব্যবহার করে থাকেন। কারণ রক্তে গ্লুকোজ বা কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা না বাড়িয়ে স্টেভিয়া খাবারকে মিষ্টি করে থাকে। তাছাড়া, এতে কোনো ক্যালরিও নেই।
তবে তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত স্টেভিয়া খাওয়াও অনুচিত। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতো সংস্থাগুলোর দ্বারা নির্ধারিত এডিআইয়ের (গ্রহণযোগ্য দৈনিক খাওয়া) মান অনুযায়ীই স্টেভিয়া খাওয়া ভালো। শরীরের ওজন এক কেজি কমানোর জন্য প্রতিদিন ৩ মিলিগ্রাম স্টেভিয়া খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ আমেরিকান এবং জাপানিরা স্টেভিয়া পাতাকে মিষ্টি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এ কারণে সরাসরি স্টেভিয়া পাতা ব্যবহারে এখন পর্যন্ত মার্কিন এফডিএ অনুমতি দেয়নি। এছাড়া, স্টেভিয়ার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা যাচাইয়ের জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।