একটা সময় গুটিকয়েক ফ্যাশন প্রিয় মানুষের ঘরে কুশন দেখা মিললেও এখন সচরাচর প্রায় সকলের ঘরেই শোভা মেলে। কারণ ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে কুশন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবার আরামের উপকরণ হিসেবেও কুশন বেশ চমৎকার। কিছুদিন আগে সোফা বা ঘর সাজানোর জন্য কুশন ব্যবহার করা হলেও এখন বেডরুম, ড্রয়িংরুম, লিভিংরুমসহ শিশুর ঘর ও বারান্দা সাজাতেও কুশনের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। রঙ-বেরঙয়ের কুশন সোফাকে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
অনলাইন শপ ফাহমিদাল'স বুটিক কালেকশনের কর্ণধার ফাহমিদা কবীর বলেন, “ড্রয়িংরুম হওয়া চাই দেখতে পরিপাটি। দেখলেই যেন মনটা ভালো হয়ে যায়। এছাড়া বাড়িতে কোন অতিথি এলেও প্রথমে বসে ড্রয়িংরুমে। তাই বসার সোফাটা চাই সৌন্দর্যে ভরপুর। সৌন্দর্য বৃদ্ধির সেই কাজটি করে কুশন ও কুশন কাভার।”
অনলাইন শপ তুলি'স কারেকশনের কর্ণধার শারমিন সুলতানা তুলি বলেন, “ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিভিন্ন আসবাবপত্রের জুড়ি নেই। এর মধ্যে অন্যতম একটি সোফাসেট। এর সৌন্দর্য ও আরামের জন্য সোফার সঙ্গে আবির্ভাব হলো কুশনের। কুশন দিয়েই ঘরের চেহারায় আনা যায় নতুনত্ব। শুধু সোফার সাথেই নয় শোবার ঘরের খাটেও এটি বেশ মানিয়ে যায়। তাছাড়া বসার ঘরে বা বেলকনিতে শতরঞ্জির সাথেও অনায়াসে কুশন ব্যবহারে ঘরের সৌন্দর্যবর্ধন করা যায় সহজেই।”
কেনার আগে করণীয়
কুশন কেনার আগে ঠিক করে নিন ঘরের কোন অংশে আপনি কুশন দিয়ে সাজাবেন। পাশাপাশি সোফা বা বিছানা অনুযায়ী কুশনের মাপ বুঝে নিন। আবার একই মাপের অনেক কুশন না কিনে বিভিন্ন মাপের কিনতে পারেন। অন্যদিকে কাভার কেনার সময় ঘরের দেয়াল, পর্দা এসবের রংয়ের সঙ্গে মানানসই কুশন কাভার কিনতে চেষ্টা করুন।
যত ধরনের কুশন
বিভিন্ন ধরনের কুশনের মধ্যে গোলাকার, চারকোনা, ত্রিকোণ, তারকা ও হৃদয়াকৃতির কুশন রয়েছে। এছাড়া পাখি, মাছ, প্রাণী আকৃতির কুশনও ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে আজকাল।
ডিজাইনার শারমিন সুলতানা তুলি বলেন, “কুশন ঘরভেদে বা কোথায় রাখা হবে সেটির ভিত্তিতে বিভিন্ন সাইজের নেওয়া যেতে পারে। যেমন- গোল, ত্রিকোণ, চৌকোণ, জ্যামিতিকের পাশাপাশি একফালি তরমুজ, স্ট্রবেরি আকারের কুশনও নেওয়া যেতে পারে।”
কাভারে নকশার রাজ্যত্ব
কুশন কাভারে ব্লক প্রিন্ট, বাটিক, স্ক্রিন প্রিন্ট টাইডাই, হ্যান্ডপেইন্ট ও অ্যাপলিকের নানা নকশার চল রয়েছে। শারমিন সুলতানা তুলি বলেন, “কুশন কাভারে রেখেছি বিভিন্ন ধরনের ফুল, পাতা, প্রজাপতি, পেঁচা ইত্যাদি। এটা মূলত ক্রেতার পছন্দের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়।”
যেমন রঙ প্রাধান্য
রং বাছাইয়ের বিষয়ে শারমিন সুলতানা তুলি বলেন, “কুশন কাভারের রং বাছাই নির্ভর করে সোফার ওপর। সোফা যদি এক রঙের রেক্সিনের হয় তাহলে বিভিন্ন রঙের কুশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া গরমের সময় গাঢ় রং ও গরমের তীব্রতা কম হলে অপেক্ষাকৃত হালকা রং ব্যবহার করা যেতে পারে।”
যে কাপড় প্রাধান্য
কুশন কাভারের কাপড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় সিল্ক, ধুপিয়ান বা টিস্যু কাপড়। তবে এগুলো সাজসজ্জায় চমক আনলেও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং আরামদায়ক নয়। এক্ষেত্রে খাদি, খেস বা মোটা সুতি কাপড় বাছাই করতে পারেন। এছাড়া একরঙা কাপড় ব্যবহারই ভালো হবে। কেননা একরঙা কাপড়ে পেইন্ট, ব্লক, সুতার কাজ বা অ্যাপ্লিকের কাজ ফুটিয়ে তোলা যায় অনায়াসে।
বসার ঘরের কুশন
মাঝারি আকারের বসার ঘরে বেত, কাঠ বা বাঁশের তৈরি সোফা থাকলে দেশজ নকশার কুশন কাভার বেশি ভালো লাগে। গ্রামীণ চেক, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, হ্যান্ডপেইন্ট, কাঁথা স্টিচ বা অ্যাপ্লিক বাছাই করতে পারেন।
শোবার ঘরের কুশন
শোয়ার ঘরে বালিশের সামনে কুশন রাখা যায় কিংবা বালিশ ছাড়াই শুধু কুশন ব্যবহার করা যায়। ভালো মানের দেশিয় সুতি কাপড় কিংবা চায়নিজ বা জাপানিজ কাপড়ের কুশন ব্যবহার করতে পারেন। একটু হালকা রঙের কাপড়ই এই ঘরের জন্য ভালো।
শিশুর ঘরের কুশন
শিশুর ঘরে কুশন কাভার রাখলে ওদের মানসিকতার দিকে লক্ষ্য রেখে বেছে নিন। প্রজাপতি, টেডি বিয়ার বা বিভিন্ন ধরনের কার্টুন, পাখি ও ফুটবলের নকশায় তৈরি কুশন কভার শিশুর ঘরে রাখতে পারেন। এই ঘরের জন্য একটু গাঢ় রঙের কাপড় বেছে নিন। তাহলে সহজে নোংরা হবে না।
কুশনের ব্যবহার সম্পর্কে যা জানা জরুরি
হ্যান্ডপেইন্টের কুশন কাভার বেশিক্ষণ ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না; ওয়াশিং মেশিনে দেওয়া ব্যবহার করে পরিষ্কার করবেন না। সিনথেটিক কভারে সাবানের বদলে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। সুতির কাপড় হলে শ্যাম্পুর সঙ্গে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।
বিডস, কাচ বা অ্যাপ্লিকের কাজ থাকলে ড্রাই ওয়াশ করুন।
বালিশ কিংবা কোলবালিশ হিসেবে কুশন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে কুশনের আকৃতি নষ্ট হবে না।
কুশন কভার তৈরির সময় সামান্য একটু জায়গা ছেড়ে রাখুন। যাতে করে কভার পরিবর্তনের সময় কভার ছিঁড়ে না যায়।