আপনার কাছে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা কী? আপনার জীবনে কী এমন কেউ আছে যার সঙ্গে আপনি সমস্ত সুখ দুঃখ ভাগ করতে পারেন? আপনি কি যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারেন? আপনি কি কখনও তার কাছে কিছু গোপন করেন?
এগুলো শুধু সাধারণ কোনো প্রশ্নই নয়, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রশ্নগুলো উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সুস্থ এবং দীর্ঘজীবনের চাবিকাঠি।
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিষয়টির পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। তবে আরও বহুযুগ আগে অ্যারিস্টটল তার নৈতিক চরিত্র এবং আচরণ নিয়ে গবেষণায় বন্ধুত্বের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন।
অ্যারিস্টটল বন্ধুত্বের তিনটি ভিত্তির কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলো- লোভ, তৃপ্তি, এবং নীতি।
যখন অর্থ ও ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, তার ভিত হয় লোভ। ব্যাবসায়িক সম্পর্ককে এর মধ্যে ধরা যেতে পারে।
তৃপ্তির ওপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বে সাধারণত একসঙ্গে খেলা দেখা, আড্ডা দেওয়া বা ঘুরতে যাওয়ার মতো বিষয় থাকে।
অ্যরিস্টটেলের মতে সবার সেরা হলো, নীতি নির্ভর বন্ধুত্ব। কারণ এতে আবেগ ও সহমর্মিতা থাকে। স্বভাবতই মানুষের জীবনে এই বন্ধুত্বের প্রভাব অপরিসীম।
এটা জানা কথা যে, আমাদের গোটা জীবনের জন্য বন্ধু দরকার। সুস্থ এবং সফল হলে আমাদের বন্ধু সঙ্গ ভালো লাগে। কিন্তু দুঃসময়ে আমাদের বন্ধু প্রয়োজন হয়। আর বার্ধক্যে তাদের সহায়তা লাগে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন গবেষণায় একজন ভরসাযোগ্য বন্ধুর উপস্থিতির সঙ্গে ব্যক্তির মানসিক সুস্থতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভরসাযোগ্য বন্ধু না থাকলে অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েরা মাদকের মতো নেতিবাচক বিষয়ে আকৃষ্ট হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ভরসাযোগ্য সঙ্গী থাকলে ব্যক্তির বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগ, হাঁপানি ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। ভরসা করার মতো বন্ধু থাকলে ব্যক্তির মধ্যে মধ্যে হতাশার চেয়ে বেশি দৃঢ় মানসিকতা দেখা যায়।
কোনো কোনো গবেষণায় তো ইতিবাচক বন্ধুত্বের প্রভাবে চার থেকে পাঁচ বছর আয়ু বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর উপস্থিতি আমাদের সহানুভূতি ও পরামর্শর সুযোগ করে দেয়। ফলে আমরা দৈনন্দিন জীবনে নিশ্চিন্তে যেকোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। পরোক্ষ প্রভাবে, কাউকে মনের সমস্ত কষ্ট খুলে বলতে পারার জন্যে দুশ্চিন্তা, ধূমপান, অতিরিক্ত আহার, মাদক সেবন, এবং বিভিন্ন অস্বাস্থকর জীবনযাত্রা থেকে দূরে থাকা যায়। বর্তমানে এই গতিময় বিশ্বে দুশ্চিন্তার শেষ নেই, ফলে একজন বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুর উপস্থিতি খুবই প্রয়োজনীয়।
বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মন্ত্র
মন খুলে কথা বলুন। আপনার ভাবাবেগ সঠিকভাবে প্রকাশ না পেলে কারও পক্ষেই আপনাকে সাহায্য করা সম্ভব নয়। “কদিন ধরে মনটা খারাপ” বলার চেয়ে “চাকরিটা নিয়ে হতাশায় ভুগছি”, বলা অনেক ভাল।
আত্মতুষ্টিতে ভুগবেন না। সুন্দর বক্তা হওয়ার আগে একজন শান্ত শ্রোতা হতে শিখুন। আপানার বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির জীবনে কি চলছে তা সম্পর্কেও খোঁজ রাখুন।
বন্ধু যেন যেন ক্লান্ত না হয়ে পড়েন। সমস্ত দুশ্চিন্তা তার মাথায় চাপিয়ে দেবেন না।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ আপনার বন্ধু আপনার চিকিৎসক নন। নিজের সুবিধা অনুযায়ী তাকে ধন্যবাদ জানানোর পন্থা বেছে নিন।
বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলুন। নিজের ভুল থেকে কিছু শিখছেন কি-না তা তার থেকে জেনে নিন। তার পরামর্শগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
যেকোনো সম্পর্কেরই একটা ভারসাম্য প্রয়োজন। কাজেই সুখ-দুঃখের কথা জানানোর একটি মাত্রা বজায় রাখুন।
সূত্র: মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট অবলম্বনে