Tuesday, May 20, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

বাইরে খাওয়া বা কেনাকাটার আগে কিছু সর্তকতা

সিঁড়ি, প্রবেশ ও জরুরি বহির্গমন পথ, উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক তার, এবং সিলিন্ডার তাৎক্ষণিকভাবে ভবন সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারে

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৮ পিএম

কারও জন্য বিনোদন, কারও কাছে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটানো, কারও বা জীবিকার একমাত্র গন্তব্য। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে এই কর্মযজ্ঞই পরিণত হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞে। এই ডিস্টোপিয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর জন্য। নিয়মবহির্ভূত ভবনের নকশা, পরিচালনা সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতার এবং দুর্নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমতাবস্থায় ভবনে প্রবেশের সময় জীবন বাঁচানোর জন্য সাবধান হতে হবে ভোক্তা শ্রেণীকেই। চলুন, দেখে নেওয়া যাক রেস্টুরেন্ট বা শপিংমলে প্রবেশের সময় কোন বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।

ফায়ার সার্ভিসের মতে, ২০২৩ সালে সারাদেশে মার্কেটসহ নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৫,৩৭৪টির মধ্যে ৪২৪টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে আবার ৫৮টি শপিং মল, যেগুলোর মধ্যে নয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, ১৪টি মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ, এবং ৩৫টি রয়েছে সাধারণ ঝুঁকিতে।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে বিগত কয়েক দশক ধরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে অসহায় ঢাকাবাসী। সমস্যাযুক্ত ভবনগুলো নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলছে মামলা। প্রায়ই পিছিয়ে যাচ্ছে ভবন নিরীক্ষণের দিনক্ষণ। যথারীতি নিয়ম মেনে নির্মাণ বিধিতে আসছে পরিবর্তন। কিন্তু থেমে নেই সাধারণ মানুষের মৃত্যু। বরং বিষয়টি এখন এমন এক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এর সঠিক সুরাহা করতে লেগে যাবে অনেকটা সময়। কেননা ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো এক নিমেষে ভেঙে ফেলা বা সঠিক নকশা দিয়ে আদ্যোপান্ত বদলে ফেলা সম্ভব নয়।

রেস্টুরেন্টে ভরা ভবন বা অতিকায় শপিংমলে যাওয়াটা জীবনের চেয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ- এখন সেই হিসেব-নিকেশের সময় এসেছে। সব চাহিদার বিসর্জন দিয়ে হলেও সেই মৃত্যুকূপগুলো থেকে দূরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। আর অগত্যা যদি যেতেই হয়, তবে সেক্ষেত্রে অবলম্বন করা উচিত আপোষহীন সতর্কতা।

রেস্টুরেন্ট-শপিংমলে দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়

সাতমসজিদ রোডের ‘ইম্পেরিয়াল আমিন আহমেদ সেন্টার’ ভবনটি ১৩ তলার। এই ভবনে রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান আছে অন্তত ২০টি/মেহেদি হাসান রনি/ঢাকা ট্রিবিউন

ভবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ

আগুন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য খোলামেলা জায়গা নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভেতরের প্রতিটি দরজা প্রবেশের জন্য সহায়ক হতে হবে। এমনকি জানালার বাইরের স্থানগুলোতেও কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা থাকা চলবে না। পেছনের দরজা বা অন্য প্রবেশ পথগুলো ময়লা-আবর্জনা বা বাতিল জিনিসের স্তূপে বন্ধ আছে কি-না তা দেখতে হবে।

বহিরাগতরা খুব সহজেই ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি বা লিফট ধরতে পারছে কি-না তা খেয়াল করতে হবে। ঠিক একইভাবে দেখতে হবে ভেতরের লোকেরা বাইরে বেরতে যেয়ে কোনো বিড়ম্বনায় পড়ছে কি-না। বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে প্রায় দেখা যায় জরুরি ডেলিভারিগুলোর কারণে প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বহুতল ভবনে উপরের তলা থেকে ফেলা ময়লা নিচের তলার জানালার সামনে স্তূপ হয়ে থাকে।

সিঁড়ির প্রশস্ততা ও পর্যাপ্ততা

কোনো আবাসিক ভবন যদি ছয় তলার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী সেখানে চলাচলের জন্য দু’টি সিঁড়ি থাকতে হবে। একটি সবসময় চলাচলের জন্য, আর অন্যটি জরুরি অবস্থায় নিরাপদ দূরত্বে সরে পড়ার জন্য। সেজন্য একে বলা হয় জরুরি বহির্গমন পথ।

তবে যেগুলো বাণিজ্যিক ভবন, সেখানে লোকসংখ্যার ভিত্তিতে সিঁড়ির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এক তলা বাণিজ্যিক বিল্ডিং-এর জন্যও লোকসংখ্যা ৩০০-এর মধ্যে হলে, সেখানে সিঁড়ি দিতে হবে প্রতি ২৩ মিটার পরপর।

প্রশস্ত প্রবেশদ্বার

শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, বা হাসপাতালের মত ভবনগুলো প্রায় সব সময়ই অধিক লোক সমাগম থাকে। এগুলোর ঢোকার জায়গা বা প্রধান ফটক তিন মিটারের (প্রায় ১০ ফুট) বেশি হতে হবে। অন্যথায় সংকীর্ণ প্রবেশপথের অতিকায় স্থাপনায় প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

জরুরি বহির্গমন পথ এবং ফায়ার এক্সিট লাইট

একটি ভবনে প্রশস্ত প্রবেশপথ যতটা প্রয়োজন তার থেকেও বেশি প্রয়োজন জরুরি বহির্গমন পথ। এ পথে দুর্ঘটনার সময় আত্মরক্ষার জন্য দ্রুত বের হওয়া যায়। এর আরও একটি নাম আছে, আর তা হচ্ছে অগ্নি নির্গমন পথ।

আবাসিক ভবন ছাড়া অন্য যেকোনো ভবনের প্রতি তলায় এই পথ থাকা জরুরি। এগুলোর নির্দেশকগুলো স্পষ্ট এবং সহজে দেখা যায় এমন জায়গায় থাকতে হয়। এই সিঁড়ি পথে বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও আলো দেওয়ার জন্য লাইটের ব্যবস্থা রাখা হয়, যাকে বলা হয় ফায়ার এক্সিট লাইট।

পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রাদি

বিএনবিসি (জাতীয় বিল্ডিং কোড) বিধি অনুযায়ী, সাত তলার চেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার ডিটেক্টর, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম, স্মোক ডিটেক্টর, এবং ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকা বাধ্যতামূলক।

ধোয়া ও ফায়ার অ্যালার্ম

এই সতর্ক করা ডিভাইসগুলো অগ্নি নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। কোথাও ধোঁয়া বা আগুন ধরে গেলে এগুলো সঙ্গে সঙ্গেই বিকট শব্দে বেজে উঠে। এতে করে ভবনের প্রত্যেক তলার বাসিন্দারা সতর্ক হয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসতে পারে।

ত্রুটিহীন ফায়ার এক্সটিংগুইশার

এই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটিতে উচ্চচাপে তরল কার্বন ডাই-অক্সাইড সংরক্ষিত থাকে। আগুন নেভানোর সময় স্প্রে করার মাধ্যমে এই কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করলে আগুনকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে ভবনটিতে এই যন্ত্র শুধু থাকলেই হবে না, দেখতে হবে তা ঠিক কোন জায়গায় কিভাবে রাখা আছে।

অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসরুমের মত হালকা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রতি ৭৫ ফুটে একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকাটা যথেষ্ট।

তবে যে ভবনে রেস্টুরেন্ট বেশি, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই দুইয়ের অধিক রান্নাঘর থাকে। সেই সঙ্গে থাকে চর্বি এবং তেলের মত দাহ্য বস্তু থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপাদনের সম্ভাবনা। তাই এই জায়গাগুলোর প্রতি ৩০ ফুটে একটি করে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বসানো উচিত। এগুলোর উপস্থিতির জন্য হলুদ-লাল রঙ দিয়ে জেব্রা ক্রসিং চিহ্ন খুঁজতে হবে।

সম্ভব হলে সেগুলো ত্রুটিহীন অবস্থায় আছে কি-না তাও নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যেতে পারে। কেননা ত্রুটিপূর্ণ ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্প্রে করার সময় বিস্ফারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। খালি চোখে চটজলদি দেখে নেওয়া যেতে পারে এগুলোর সিলিন্ডারের গায়ে কোনো ক্ষয় বা ফাটল আছে কি-না। এছাড়া হোশ পাইপটির দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিলে চিড় বা লিক চোখে পড়তে পারে।

দেয়াল থেকে বৈদ্যুতিক তার বেরিয়ে থাকা

বর্তমানে প্রায় সব ভবনেই বৈদ্যুতিক কেবল ও তারগুলো দেয়ালের ভেতরে মোটা পাইপ দিয়ে টানা হয়। এগুলোকে বলা হয় ডাক্ট লাইন। অনেক ভবনে দেয়ালে অযাচিত ছোট ছোট গর্তে ক্যাবলগুলো উন্মুক্ত দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় দেয়ালের গর্ত বা ফুটো থেকে বেরিয়ে থাকা ছেঁড়া তার। এই ক্যাবল হোল বা গর্ত দিয়ে ধোঁয়া এবং আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা ভবনে। তাছাড়া তারগুলো কোনোভাবে শরীরের সংস্পর্শে আসাটাও বিপজ্জনক।

সিলিন্ডার রাখার জায়গা

অগ্নিকাণ্ডের খুব স্বাভাবিক কারণগুলোর একটি হচ্ছে সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগা। তাই ঘরে বা রান্নাঘরে না রেখে ভবনের নিচে সব সিলিন্ডার একসঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। একই কাজ করা যায় বাণিজ্যিক ভবনগুলোতেও। তবে সেই জায়গাটি এমন হতে হবে যেন বাতাসের চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। তাহলে সিলিন্ডার লিক হলেও নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় গ্যাস জমে বিস্ফোরণের কারণ হতে পারবে না।

জায়গাটি পরিদর্শনের সময় খেয়াল করতে হবে প্রতিটি সিলিন্ডার গ্রিলের খাঁচা দিয়ে আবদ্ধ করা আছে কি-না। একটু সন্ধানী দৃষ্টি দিলে আশেপাশে কোনো বিদ্যুতের লাইন বা দাহ্য পদার্থ আছে কি-না তাও চোখে পড়ে যেতে পারে।

ভবনের ভেতরে উপযুক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা

যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের সময় নকশার গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত থাকে উপযুক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। ভেন্টিলেশন বলতে ভবনের ভেতরে বাতাসের অবাধ চলাচলকে বোঝানো হয়। এর উপর সামগ্রিকভাবে ভেতরের তাপমাত্রা নির্ভরশীল।

ফ্লোরগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর সময় দুর্গন্ধ এলে বা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ অনুভূত হলে বুঝতে হবে ভেন্টিলেশন অবস্থা ভালো নয়। বিল্ডিংয়ে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের অভাব হলে আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ঘরের ভেতরে আদর্শ আর্দ্রতার মাত্রা ৩০ থেকে ৫০%-এর মধ্যে। এই সীমার বাইরে যাওয়া মানেই ঘরটি বাসযোগ্য নয়।

এছাড়া ঘরের দেয়াল ও ছাতে অত্যধিক ধূলিকণা জমতে দেখা যাবে। এটি মূলত বাইরের গাড়ির নির্গমন, ধুলোবালি, বর্জ্য, এমনকি সুগন্ধি থেকেও হতে পারে। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা উপযুক্ত না হওয়ায় দূষকগুলো ভেতরে এসে ঠিকভাবে বাইরে বেরুতে পারছে না।

ভবনের ডিজাইন ও উদ্দেশ্য পরিবর্তনের রেকর্ড

নির্মাণের সময় প্রাথমিকভাবে আবাসিক ভবন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবর্তন করে বাণিজ্যিক করা হয়েছে। এতে করে স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হয়। কেননা বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট বানানো হলে তা আগের গ্যাসের লাইন ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। এরপর আবার দৃষ্টিনন্দনের জন্য কাঁচ বসালে ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যা অগ্নি-নিরাপত্তার অন্তরায়। তাই ভবনে প্রবেশের আগে নিরাপত্তার স্বার্থে তার অতীতের রেকর্ড জেনে নেওয়া উত্তম।

ভবন ব্যবহারের অনুমোদনপত্র এবং হালনাগাদ করা ফায়ার লাইসেন্স

কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ভবনের প্রতিটি নিরাপত্তার খুঁটিনাটি যাচাই করা জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত দুষ্কর। তবে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণির জন্য রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রদত্ত ভবন ব্যবহারের সনদ দেখাটাই শ্রেয়। এর পাশাপাশি প্রতি বছর নবায়ন করা ফায়ার লাইসেন্সটিও দেখতে হবে। এই দু’টি নথি প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানালে বা দেখাতে ব্যর্থ হলে, সেই ভবন নিশ্চিন্তে এড়িয়ে চলা যেতে পারে।

শেষাংশ

পরিশেষে, রেস্টুরেন্ট কিংবা শপিংমলে দুর্ঘটনা এড়াতে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো যাচাই করা বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ। সিঁড়ি, প্রবেশ ও জরুরি বহির্গমন পথ, উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক তার, এবং সিলিন্ডার পরিদর্শন তাৎক্ষণিকভাবে ভবন সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারে। তবে এই সময় সাপেক্ষ ও জটিল কাজটির বিপরীতে সর্বাধিক সহজসাধ্য আইনগত নথি যাচাই। ইতিবাচক দিক থেকে ভবন ব্যবহারের সনদ প্রদর্শন কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের সহায়ক হতে পারে। কেননা ভোক্তা সেখানেই যাবেন, যেখানে তার জীবনের নিরাপত্তা আছে।

   

About

Popular Links

x