এ বছর পুরো মৌসুমজুড়ে তীব্র গরমে পুড়ছে সারাদেশ। বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মানুষের প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। তীব্র এই গরমে তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখতে পানি পানের বিকল্প নেই।
তাই গরমে বেড়েছে বিভিন্ন পানীয়র চাহিদা। এই তালিকায় লেবুর শরবত, ডাবের পানি এবং আখের রসের চাহিদা সবচেয়ে এগিয়ে।
চলতি পথে ক্লান্ত শরীর যখন ঘেমে-নেয়ে একাকার তখন এক গ্লাস আখের রস কিংবা ডাবের পানি যেন অমৃত।
তবে ডাবের পানি নিশ্চিন্তে পান করলেও রাস্তার পাশে বিক্রি করা আখের রস স্বাস্থ্যসম্মত কি-না, তা নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতন অনেকের মনেই সন্দেহ থেকে যায়। তবে, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে পিষে বের করা আখের রস পান করা নিয়ে কেউ দ্বিধায় ভোগেন না।
কিন্ত যেটি নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি দ্বিধায় থাকেন; তা হলো- আখের রস নাকি ডাবের পানি, কোনটি পান করা বেশি উপকারী?
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, আখের রসে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ়, পটাশিয়াম, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং সহজপাচ্য ফাইবার। এই পানীয়ের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা। যা ক্লান্ত শরীরে তৎক্ষণাৎ চনমনে ভাব এনে দিতে পারে। বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা করেন, তাদের জন্য আখের রস বিশেষ প্রয়োজন। ২৫০ মিলিমিটার আখের রসে ক্যালোরির পরিমাণ ১৮৩। শর্করার পরিমাণ প্রায় ৫০ গ্রাম।
তবে এত গুণ থাকা সত্ত্বেও রোজ আখের রস খাওয়া ঠিক হবে না। যাদের রক্তে শর্করা বাড়তির দিকে তারা তো বটেই, সঙ্গে যাদের স্থূলতাজনিত সমস্যা রয়েছে বা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাদেরও নিয়মিত আখের রস খেতে নিষেধ করেন পুষ্টিবিদরা। এছাড়া, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আখের রস না খাওয়াই ভালো।
অন্যদিকে, শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে কিংবা শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে পুষ্টিবিদরা ডাবের পানি পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোক, অতিরিক্ত ক্লান্তি কিংবা দুর্বলতা কাটাতে এই পানি অতুলনীয়। ২৫০ মিলিলিটার ডাবের পনিতে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ৪৬। প্রাকৃতিক শর্করা রয়েছে ১০ গ্রামের মতো। তাই শক্তির জোগান বা এনার্জি দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাবের পানির চেয়ে আখের রসই ভালো বলে মত অধিকাংশ পুষ্টিবিদের।
তবে, ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে যাদের রক্তচাপ এমনিতেই কম তাদের এই পানীয় বেশি না পান করাই ভালো। কিডনির সমস্যা থাকলেও ডাবের পানি বেশি পান করা যায় না। ডায়াবিটিস রোগীরাও যে নিয়মিত নিশ্চিন্তে এই পানি পান করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
পাশাপাশি, এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, ডাবের পানি বা আখের রস কিন্তু সাধারণ পানির বিকল্প হতে পারে না।