রমজান মাসে রোজা রাখার অজুহাতে অনেকেই দীর্ঘক্ষণ যাবত অযথা অলস সময় কাটান। এটি শুধু সময় অপচয় নয়, বরং শরীরের ওপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। এমনকি যারা অফিসে বা বাসায় দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে কাজ করেন বিষয়টি তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে অলসতা যে একদিনে তৈরি হয় তা নয়, বরং দিন দিন কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাসের মাধ্যমে অলসতা আমাদের পেয়ে বসে। একসময় জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। যা আমাদের শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি মানসিক শক্তিও কমিয়ে দেয়।
তাই চলুন দেখে নেওয়া যাক যে অভ্যাসগুলো আমাদের অলস বানিয়ে দিচ্ছে।
ঘুম থেকে দেরি করে ওঠা
রমজান মাসে অনেকে সেহরি খেয়ে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন। আবার অনেকেই তো ঠিক করে রাখেন যে সেহরি খেয়েই ঘুমাবেন। ঘুম থেকে দেরি করে ওঠলে অলসতার সঙ্গেই আসলে দিনের শুরুটা হয়। এতে দেহঘড়িরও ছন্দপতন হয়। এছাড়া দেরিতে ঘুম থেকে ওঠলে কাজ করার সময় কমে যায়, দিনভর বিষণ্ন লাগে। শরীর দুর্বল মনে হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একবার স্ক্রল করতে শুরু করলে অবচেতনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়। অনেকেই রমজানে সময় কাটানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিলস দেখতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই অতিরিক্ত ব্যবহার একসময় অভ্যাসে রূপ নেয় এবং কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিনকে দিন অলস করে তোলে।
কালক্ষেপণ
রমজানে অনেকেই হেলায় দিন পার করে দেন। তাদের মতে, কোনোভাবে সময় কাটিয়ে ইফতার পর্যন্ত গেলেই হবে। ফলে নিয়মিত পড়ার টেবিল, আলমারির কাপড় গোছানো কিংবা ক্লাসের পড়া- এমন সব কাজ করতেই হবে জানার পরও করছি করব করে ফেলে রাখার অভ্যাস অনেকের। একেই বলে কালক্ষেপণ। এভাবে কালক্ষেপণ করতে করতে একসময় অনেক কাজ জমে যায়। কিন্তু তখন আর কাজ করতে ইচ্ছা করে না, কাজের প্রতি স্পৃহা মরে যায়।
সারাদিন বসে থাকা
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস কিংবা বাড়ি- কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটানা বসে থাকা উচিত নয়। এতে কর্মদক্ষতা ও কাজ করার স্পৃহা কমে যায়। তাই একটানা বসে না থেকে মাঝে মধ্যে বিরতি নিয়ে একটু হাঁটাচলা করা উচিত। এতে আপনার দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং সতেজ বোধ করবেন।
কায়িক শ্রম না করা
রমজানে অনেকেই অলস জীবনযাপন শুরু করেন। একবার এটি পেয়ে বসলে এর থেকে বের হওয়া খুব কঠিন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কায়িক পরিশ্রম না করলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে, শরীর ও মনকে অলস করে তোলে। তাই প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে।
ভাজাপোড়া খাওয়ার আসক্তি
অনেকেই রমজানে ভাজাপোড়া খেতে ভালোবাসেন। এতে থাকা অতিরিক্ত তেল–চর্বি দেহের জন্য ক্ষতিকর। খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই অলসতা থেকে বাঁচতে স্লো ফুডে (স্থানীয় ও নিজস্ব খাবার) অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে সতেজ ফলমূলের দিকে ঝুঁকতে হবে।
পূর্বপরিকল্পনা না থাকা
পরিকল্পনা ছাড়া সহজ কিছুও অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অলসতার অন্তহীন চক্র থেকে বের হতে কোনো কাজ করার আগে তার স্পষ্ট পরিকল্পনা রাখতে হবে।