স্বামী মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়লে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে লাকি বেগমের। তিন সন্তানকে নিয়ে যেন অকূল পাথারে ভাসছিলেন তিনি।
তিন বেলা খাবার জোটাতে বাধ্য হয়েই লোকের বাড়িতে কাজ নেন তিনি। আশা ছিল, তিন সন্তানের মধ্যে অন্তত একজনকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার।
কিন্তু স্বামীর চিকিৎসার খরচ, ঋণের বোঝা এসব যেন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে লাকি বেগমের ঘাড়ে। সংসারের টানাটানি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে বাচ্চাদের পড়াশোনা তখন রীতিমতো বিলাসিতা! একটু বেড়ে উঠলেই সামর্থ্য অনুযায়ী ওদেরকে ধরতে হবে সংসারের হাল।
এমনই সংকটময় পরিস্থিতিতে কিছুটা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তাদের পুলিশ কর্মকর্তা বাড়িওয়ালা। পড়াশোনার আগ্রহ দেখে ২০০৪ সালে লাকীর বড়ছেলে ইয়াসিনকে তিনি ভর্তি করে দেন ঝালকাঠীর সরকারি শিশু পরিবারে। সেখানে থাকা, খাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনারও সুযোগ পায় ইয়াসিন।
প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত সবগুলো শ্রেণিতে ভাল ফলাফল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন ইয়াসিন। মায়ের স্বপ্ন পূরণের বড় একটি ধাপ সম্পন্ন হয়।
তার ভাষায়, “আমার পথচলাটা মসৃণ ছিল না। ২০০৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আমি শিশু পরিবারে ছিলাম। সেখানকার সব খরচ সরকার বহন করে কিন্তু পড়াশোনার সুবিধার্থে আমাকে কিছু কাজও করতে হতো।”
বইয়ের পড়া বোঝা এবং অন্যদেরকে বোঝাতে বিশেষ দক্ষতা ছিল ইয়াসিনের।
“তাই ক্লাস সেভেনে থাকতেই আমি সিক্সের শিক্ষার্থীদেরকে বাড়িতে পড়াতাম”, যোগ করেন তিনি।
টিউশনি করে কিছু টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। যার বেশিরভাগই তিনি খরচ করেন বোনের বিয়েতে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর জীবন যেন আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। থাকার জায়গা নেই, আয়ের উৎস নেই। বাস্তবতা অনেক বেশি নির্মম হয়ে ধরা দেয় ইয়াসিনের সামনে।
তবে, এরই মাঝে একটুখানি আশার আলো খুঁজে পান তিনি। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর বিনিময়ে যাত্রাবাড়ির একটি মাদ্রাসা তাকে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে রাজি হয়।
পড়ানো আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে করতে নিজের পড়াশোনার সময় মেলেনা ইয়াসিনের। সুযোগ মেলেনা আরেকটু ভাল কিছু খুঁজে বের করারও।
এতদূর এসে ফিরে যেতে নারাজ ইয়াসিন। পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান তিনি। তবে এজন্য সমাজের সামর্থ্যবানদের সহযোগিতা তার প্রয়োজন।
ইয়াসিনের সহায়তায় এগিয়ে আসতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৬১৬৩৭৩৭৫০ এবং ০১৭৯৬৩৭৩৭৫০ এই নম্বর দু'টিতে।