ছোট্ট এ বইটি হাতে নিয়ে হয়তো দ্রুত পড়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু বইয়ের প্রতিটি ভাঁজে, প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে আছে গুরুভার ইতিহাস, আবেগ আর শিশুর চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপঞ্জি। বইটি পড়ে পাঠক মনে যে তৃষ্ণার উদ্ভব হবে তার ভার বহন করতে হবে দীর্ঘকাল, অন্তরের ভেতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেমে নতুন আস্তরণ লাগবে তাতে সন্দেহ নেই। পাঠকমাত্রই শিহরিত হবেন। একজন শিশুর চোখে কেমন ছিল সেই উত্তাল দিন, শিশুর সারল্যেই বর্ণনা করেছেন ডা. এজাজ
নির্ধারিত সময়ের আট মিনিট দেরীতে আমি যখন হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের গেইটে পৌঁছাই, ডাক্তার মোহাম্মদ এজাজ হোসেন সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। মোবাইলে ফোন করতেই হাসিমুখে হাত উঁচু করেন তিনি, সেই আমাদের প্রথম দেখা-পরিচয়।
খুব অনানুষ্ঠানিক গল্প-আলাপচারিতা হয়। করোনাভাইরাসের দিনগুলোর সামাজিক দূরত্ব ভুলে প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যায় সময়, প্রসঙ্গ সমাজ, রাজনীতি, রাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় অনন্যা প্রকাশনী থেকে “একাত্তর ও আমার শৈশব” নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছে ডা. এজাজের। ধ্রুব এষের প্রচ্ছদে বইটির দাম রাখা হয়েছে মাত্র ১৫০ টাকা। এটিই তার প্রথম বই, তবে মেলা শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইটির প্রথম মুদ্রণ। আমাদের গল্পের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে সেই বই, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী।
মুক্তিযুদ্ধ এক আবেগের নাম, বাঙালির বীরত্বের মুকুটসরূপ। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জন্মেছি, তারা অনেকেই মা-বাবা, দাদা-দাদী বা নানা-নানীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। লেখকের মতে, এমন একটা সময় আসবে যখন “উনিশশো একাত্তর“কে নিজের চোখে দেখা কোনো মানুষ স্বাভাবিক নিয়মেই আর বেঁচে থাকবে না কিন্তু বই বেঁচে থাকবে। হয়তো সেই সময় কোনো পাঠক এই বই পড়ে উনিশশো একাত্তরকে দেখবে লেখকের চোখে।
ছোট্ট এ বইটি হাতে নিয়ে হয়তো দ্রুত পড়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু বইয়ের প্রতিটি ভাঁজে, প্রতিটি শব্দে লুকিয়ে আছে আছে গুরুভার ইতিহাস, আবেগ আর শিশুর চোখে দেখা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপঞ্জি। বইটি পড়ে পাঠক মনে যে তৃষ্ণার উদ্ভব হবে তার ভার বহন করতে হবে দীর্ঘকাল, অন্তরের ভেতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেমে নতুন আস্তরণ লাগবে তাতে সন্দেহ নেই। পাঠকমাত্রই শিহরিত হবেন। একজন শিশুর চোখে কেমন ছিল সেই উত্তাল দিন, শিশুর সারল্যেই বর্ণনা করেছেন ডা. এজাজ।
বইটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোনো নাটক-গল্প-উপন্যাস নয়। খাঁটি দিনলিপি, আত্মজীবনীও বলা যেতে পারে। যে আত্মজীবনীর বর্ণনা মাত্র নয় মাসের, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস। শুরুটা হয়েছে সাত বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে আরিনার হাত ধরে। ছুটির দিনের এক দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ডাক্তার এজাজ। পাশে বসা মেয়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ জমে ওঠে তার। বাবা-মেয়ের আলাপে উঠে আসে, জাতীয় পাখি লাল সবুজের টিয়া না হয়ে কেন দোয়েল, অথবা কাঁঠালের বদলে লাল সবুজের তরমুজ কেন আমাদের জাতীয় ফল নয়? শিশুমনের কৌতূহলে আলাপচারিতা এগিয়ে যায়, একে একে মনে পড়ে শিহরণ জাগানো মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবহুল দিনগুলো।
যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন ডা. এজাজের বয়স ছয় বছর, ক্লাস ওয়ানে পড়তেন তিনি। অত অল্প বয়সে কঠিনতম রাজনীতির সেসব দিনগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তার বোঝার কথা নয়। সেই সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন শিশুর ভাষায়। তিনি লিখেছেন, “দেশে চারপাশে এতকিছু ঘটে যাচ্ছে, সবাই যে কী রকম অস্থির সময় পার করেছে, আমরা যারা সে সময় ছোট, তারা এসবের তেমন কিছু জানি না বা বুঝি না।”
২৫ মার্চের আগেই ডা. এজাজ গিয়েছিলেন চিকিৎসক নানার কর্মস্থল বাগেরহাটে। চারপাশের খোলা প্রকৃতি, শৈশবের দুরন্তপনা, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের শেষ অংশ মুখস্ত বলে অন্যদের প্রিয়পাত্র থেকে আরও প্রিয় হয়ে ওঠার ভেতরেই দিন যাচ্ছিল শিশু এজাজের। এরইমধ্যে একদিন পাকিস্তানি মিলিটারির সঙ্গে দেখা হয় তার। ডাক্তার এজাজ লিখেছেন, “দুইজন মিলিটারি নানাভাইয়ের ডাক্তারখানায় আর একজন মিলিটারি একেবারে বাসার বারান্দায় চলে আসে। দুই পাল্লা ভিড়ানো কাঠের দরজার ফাঁক দিয়ে নিজ চোখে এই প্রথম আমি মিলিটারি দেখি। খাকি হলদেটে পোশাক, মাথায় জলপাই রঙের হেলমেট, হেলমেটের ওপর জালের মত দঁড়ির কাজ, কালো বুট জুতা পরা বন্দুক হাতে বড় মোচওয়ালা মিলিটারি বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসা, নানাভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছে। বাসায় সবাই চুপ, দমবন্ধ অবস্থা। কিছু সময় কথা বলার পর মিলিটারি পানি খেতে চায়।” (পৃষ্ঠা ৩০)।
চোখের সামনে প্রথম দেখা মিলিটারি শিশু এজাজের মনোজগতেও বিরাট প্রভাব ফেলে। সেও বুঝতে পারে মিলিটারি খুব খারাপ, যখন যা খুশি তাই করতে পারে। এই বুঝতে পারার বিষয়টি খুব সহজ ভাষায় লিপিবদ্ধ করেছেন ডা. এজাজ, “হঠাৎ করেই যেন বড় হয়ে গেলাম আমি। এভাবেই মনে হয় যুদ্ধের মাঝে বেড়ে ওঠা শিশুরা এরকম হঠাৎ করে বড় হয়ে যায়।, মনে গেঁথে যায় অনেক কিছু।”
ডা. এজাজকে নানাবাড়িতে রেখে ঢাকার গোড়ানে কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছিলেন তার বাবা। ২৫ মার্চের পর সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কেউ কারও খোঁজ জানতে পারেননি। দীর্ঘদিন পর লঞ্চ যোগাযোগ চালু হলে মা ও চাচার সঙ্গে ঢাকায় রওনা হয় শিশু এজাজ। তখনই ঘটে যায় এক দুঃসাহসী ঘটনা। যা ছিল স্বাধীনতার পক্ষে এক শিশুরও স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অংশগ্রহণের জলন্ত উদাহরণ।
ডা. এজাজ লিখেছেন, “লঞ্চে মিলিটারি, তিনচারজন খাকি পোশাকধারী মিলিটারি বন্দুক হাতে পাহারায়। আমি চাচার সাথে সারা লঞ্চে হেঁটে বেড়াই, কখনও আবারও কোথায়ও গিয়ে বসি। আমি চাচার হাত ধরা, আমাদের সামনে দুইজন মিলিটারি, হঠাৎ করে আমি মিলিটারি দুইজনের সামনে আপন মনে বঙ্গবন্ধুর সেই বিখ্যাত ভাষণ আমি যেটুকু জানি বলা শুরু করি, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকেদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল- প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’।” (পৃষ্ঠা ৩৪)।
মিলিটারিরা বাংলা তেমন না বুঝলেও “জয় বাংলা” বুঝতে পারত। জয় বাংলা সে সময় মুক্তিকামী মানুষের স্লোগান, স্বাধীনতার স্লোগান। এমন পরিস্থিতিতে লঞ্চের যাত্রীরা আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় একেবারে চুপসে যায়।
‘একাত্তর ও আমার শৈশব’ বইয়ের ফ্ল্যাপ। সৌজন্য
ঢাকায় ফেরার পর শিশু এজাজ তার বন্ধু বাচ্চুসহ অন্যান্য শিশুরা পরিবর্তিত জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কখনও বড়দের নিষেধ অমান্য করে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ঢাকার অজানার উদ্দেশে বেড়িয়ে পড়া, কখনও দু’দল শিশু ভাগ হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী খেলার উত্তেজনা, বাসায় মিলিটারির তল্লাশির ভয়ার্ত মুহুর্ত, রাত হলেই পাকিস্তানি অবস্থানে ক্র্যাক প্লাটুনের হামলা, বোমা-গুলির শব্দ, হানাদার কর্তৃক বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া, বিপদের আশঙ্কায় রাতের অন্ধকারে পালিয়ে প্রথমে বাবার বন্ধুর বাসায় পরে ধানমন্ডিতে এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেওয়ার ঘটনার সাবলীল বর্ণনা রয়েছে এই দিনলিপিতে।
এছাড়া যুদ্ধ বিমানের ডগফাইট, বোমাবর্ষণ, সাইরেনের শব্দ, বোমাবর্ষণের আশঙ্কায় বাঙ্কার খোঁড়ার ঘটনা, গাড়ি করে বেড়াতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মুখোমুখি হওয়া, রাস্তায় ডাস্টবিনের ধারে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ লাশ, ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা ইত্যাদির যেন নিখুঁত স্কেচ আঁকা হয়েছে একাত্তর ও আমার শৈশবে।
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে দিনও এগিয়ে যায়। একদিন বিজয় অর্জন করে আমাদের বীরেরা। যে বিজয় প্রত্যক্ষ করাকে নিজেকে বড় ভাগ্যবান বলে অভিহিত করেছেন ডা. এজাজ। তার ভাষায়, “আসে সেই দিন, বহু প্রতীক্ষার পর আসলো কাঙ্খিত বিজয়ের দিন। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনের কথা, ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ । দুপুর গড়িয়ে বিকেল, খবর আসলো পাকিস্তানবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। অনেকের সাথে আমিও দোতলা বাড়ির ছাদে চলে গেলাম । মনে হচ্ছিল বাসা ছেড়ে সব লোক রাস্তায় নেমে এসেছে, বাঁধভাঙা জনস্রোত। যুদ্ধ করে ছিনিয়ে নিয়ে আসা বীরের জাতি। দেশ এখন স্বাধীন। সবার চোখে মুখে উপচে পড়া উচ্ছ্বাস । স্বাধীন দেশের মাটিতে গড়াগড়ি করতে দেখলাম অনেককেই। কিভাবে আনন্দ প্রকাশ করবে মানুষ বুঝতে পারছে না। বুকের মাঝে চেপে বসা জগদ্দল পাথরটা সরে গেছে। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত গলি থেকে রাজপথ। বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত চারপাশ। শহরে মুক্তিযোদ্ধারা বীরের বেশে ঢুকতে শুরু করেছে। পায়ে হেঁটে, জীপে, লরিতে, খোলা ট্রাকে মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকছে। রাস্তায় সেইসব যানবাহন ঘিরে উল্লসিত জনতা। সকল বয়সের নারী পুরুষ জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অভিবাদন জানাচ্ছে। যাঁরা রাস্তায় নেমে আসতে পারেননি বিশেষ করে মহিলা, শিশু আর বৃদ্ধরা বাড়ির ছাদে, খোলা জানালায়, বাসার গেটে দাঁড়ানো । এতদিন সযত্নে রাখা স্বাধীন দেশের পতাকা নাড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন অনেকে। খোলা ট্রাকে এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধা তাঁর বন্দুক উঁচু করে ফাঁকা গুলি করছে। এক একবার গুলির শব্দ হয় আর উল্লাস করতে থাকে জনতা। যে গুলির শব্দে এতদিন ভীত, আতঙ্কিত হতো মানুষ সেই গুলির শব্দেই আজ তারা উল্লসিত। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য।
সেই সন্ধ্যায় ছোট আমি আরও অনেকের সাথে সেই দোতলা বাসার ছাদে বসে আমাদের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেলাম। শেষ বিকেলের নরম আলোয় দোতলা বাসার ছাদ থেকে আমি আমাদের বিজয় দেখলাম। তখন বুঝিনি আমি কী দেখছি, এখন বুঝি, শিহরিত হই। আমি বিশাল ভাগ্যবান, আমি আমাদের বিজয় দেখেছি, আমাদের বিজয় আমি নিজ চোখে দেখেছি।” (পৃষ্ঠা ৫৫- ৫৬)।
যুদ্ধ শেষ হয়। বইয়ের পাতাও প্রায় শেষ হয়ে আসে। কিন্তু ঘটনাগুলোর রেশ পাঠককে থামতে বাধ্য করে, ভাবায়, নিয়ে যায় একাত্তরে। বইজুড়ে ছোট ছোট স্মৃতিতে উঠে আসা ঘটনাগুলোর তাৎপর্য কত বড় তা বুঝতে আরও কয়েকটি লাইন না তুলে দিলেই নয়। যুদ্ধ শেষে শিশু এজাজ যখন আবারও নানা বাড়িতে যায়, ঘটনাটি তখনকার। অবশ্য এটিকে দর্শন না বলে ঘটনা বললে তার তাৎপর্যকে খাঁটো করা হয়। পুরো বিষয়টি নানা বাড়ির বাঁশঝাড়ের নিচে ঢাকার জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ও ডা. এজাজের খালাতো ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার গোলাম মোস্তাফা হিল্লোলের কবরকে ঘিরে। ডা. এজাজের ভাষায়, “আমি সারাদিন খেলাধুলা করি। প্রায় প্রত্যেকদিন আমি একা আবার কখনও অন্য কারও সাথে গভীর বেদনা ও বিস্ময় নিয়ে সেই কবরের কাছে যেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। বাঁশঝাড় হেলে পড়েছে, ছায় দিয়ে রেখেছে কবরকে। বাতাসে ঝিরঝির শব্দে দোল খাচ্ছে কবরকে সযত্নে ঢেকে রাখা লম্বা লম্বা সবুজ ঘাস, যেন পরম মমতায় ঢেকে রেখেছে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। এদেশের মাটিতে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরও নাম না জানা লাখো শহীদ। যাঁদের আত্মত্যাগে আমাদের এই স্বাধীন দেশ। তাঁদের অনেকেরই এরকম কবর হয়নি, প্রিয়জন আজও পায়নি তাঁদের খোঁজ। এই দেশের মাটি তাঁদের পরম মমতায় আগলে রেখেছে, ভরা পূর্ণিমায় চাঁদ সেই মাটিতে কোমল আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। যুদ্ধ বড়ই নির্মম, অকালে ঝড়ে পড়ে সহস্র লক্ষ জীবন।” (পৃষ্ঠা ৬০)।
পুরো বইটি প্রকৃতপক্ষে স্মৃতিচারণা, যার শুরু বাবা-মেয়ের কথপোকথনে। ডা. এজাজ যেন শিশু হয়েই গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবহুল দিনগুলোকে তুলে ধরেছেন নিজের শিশু সন্তানদের কাছে, মেয়েদের কাছে। এভাবেই জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে বাবা-মেয়ের কথোপকথনের ভেতরেই শিশুমনে দেশপ্রেমের বীজ বপণ করেছেন তিনি। সেই বীজ কতটা সফলভাবে অঙ্কুরোদগম হয়েছে, তা প্রমাণিত হয়েছে দুই মেয়ের অনুপ্রেরণায় বই প্রকাশের মাধ্যমে। মেয়েরাও চান, বাবার চোখে দেখা মু্ক্তিযুদ্ধের দিনগুলোকে দেখুক আগামীর প্রজন্ম, ভবিষ্যত বাংলাদেশ।
মতামত দিন