তাসমান বলেন, ‘ফলাফলটি উদ্বেগজনক’
একটি আরামের ঘুম আমাদের প্রত্যেককেই সারাদিন সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখে। কীটপতঙ্গও এর ব্যতিক্রম নয়।
তবে সম্প্রতি দু’টি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এক ধরনের কীটনাশক মৌমাছি ও মাছিদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। যার পরিণতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
প্রথম গবেষণায় সর্বাধিক ব্যবহৃত কীটনাশক নিওনিকোটিনয়েড চিনির রসে মিশিয়ে মৌমাছিদের গতিবিধির ওপর এর কেমন প্রভাব পড়ে লক্ষ্য করেন গবেষকেরা। তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মৌমাছিদের ওপর কীটনাশকের প্রভাব ছিল মারাত্মক যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি এবং নিউরোসায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কিয়াহ তাসমান বলেন,"মনে হচ্ছে যেন মৌমাছিদের জীবনধারা পুরো উল্টে গেছে। তারা আগের তুলনায় কম খাদ্য সংগ্রহ করছে। বেশির ভাগ খাদ্যই রাতে সংগ্রহ করছে এবং আগের তুলনায় দিনে বেশি ঘুমাচ্ছে, যা তাদের স্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে মিলছে না।"
গবেষণার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে যেয়ে তাসমান বলেন, "ফলাফলটি উদ্বেগজনক। কারণ, মৌমাছিদের খাদ্য সংগ্রহ কমে গিয়েছে। মৌমাছিদের ওপর উদ্ভিদের পরাগায়ন নির্ভর করে। প্রায় ৯০ শতাংশ বন্য উদ্ভিদ এবং ৭৫ শতাংশ শস্য পরাগায়নের মাধ্যমে হয়ে থাকে, যা আমাদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে।"
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, পরাগায়নে মৌমাছিরা একটি বড় ভূমিকা রাখে। ব্যাপকহারে কীটনাশক ব্যবহার, আবাসস্থল হ্রাস, জলবায়ু সংকট এবং পরজীবীদের কারণে হুমকির মধ্যে রয়েছে মৌমাছি এবং অন্যান্য পরাগবাহকরা। এর ফলে ইউরোপ এবং আমেরিকার কঠোর পরিশ্রমী মৌমাছি আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
গবেষণার প্রধান পর্যবেক্ষক তাসমান বলেন, "মৌমাছিগুলো রাতে খাদ্য খুঁজতে বাইরে বের হচ্ছে, যখন আর ফুল পাওয়া যায় না। ফলে কলোনি বাড়াতে বা বংশবৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ খাদ্য দরকার তা তারা সংগ্রহ করতে পারছে না। এর ফলে মৌমাছির বাচ্চাদের মস্তিষ্ক গঠনও হ্রাস হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) প্রকাশিত দ্বিতীয় গবেষণায় গবেষকরা তাদের মনোযোগ দিয়েছেন মাছিদের ওপর। একইভাবে নিওনিকোটিনয়েড ব্যবহার করে ইনফ্রারেড বিমের মাধ্যমে তারা মাছিদের পর্যবেক্ষণ করেন।
ফলাফলগুলোতে দেখা যায়, কীটনাশক সরাসরি মাছিদের মস্তিষ্কের কোষগুলিতে প্রভাব ফেলছে। যার ফলে খাদ্য এবং ঘুমের সময়ের পরিবর্তন ঘটে।
তাসমান বলেন, "দেখে মনে হচ্ছে এই কীটনাশকগুলি দিনের বেলা মস্তিষ্কের কোষগুলিকে হিমায়িত করে। তাই পতঙ্গটি দিন-রাতের পার্থক্য বুঝতে পারছে না।”
এই গবেষণা পরবর্তীতে কীটপতঙ্গের ওপর নির্দিষ্ট কীটনাশকের প্রভাব কেমন হতে পারে তারও সহায়তা করবে। যা এই গুরুত্বপূর্ণ পতঙ্গদের কীটনাশকের প্রভাব থেকে রক্ষা করার কাজেও ব্যবহৃত হবে তিনি মনে করেন।
মতামত দিন