কাজী মুশফিকুর রহমান বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতে প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করছেন
কাজী মুশফিকুর রহমান। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতে প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করছেন। বর্তমানে প্যাপিরাস কমিউনিকেশন্স লিমিটেড’এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন। কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতের নানা উত্থান-পতন ও পরিবর্তন।কর্মী থেকে হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি। এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতের ভেতর-বাহিরের অনেক কথাই। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফাহিম ইবনে সারওয়ার।
প্রশ্ন: নৃবিজ্ঞানে পড়ে বিজ্ঞাপনে আসা কীভাবে?
উত্তর: এই জিনিসটা আমি অনেককে বলেছি। আমি মনে করি নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের অ্যাডভার্টাইজিংয়ে আসাটা জরুরি। কেন, সেটা বলছি, তার আগে ছোট্ট করে একটু বলে নেই, আমার অ্যাডভার্টাইজিংয়ে আসাটা কিন্তু হঠাৎ করে নয়। আমার সিনিয়র বন্ধুবান্ধবরা ছিলেন অ্যাডভার্টাইজিংয়ে। সেখান থেকে আমার একটা ঝোঁক তৈরি হয়েছিল যে, আমি বিজ্ঞাপনে কাজ করবো।
আমার মাস্টার্সের গবেষণার বিষয় ছিল রিপ্রেজেন্টেশন, পরিবেশন। এখানে আমার বিষয় হিসেবে ছিল ‘বিলবোর্ডে পরিবেশন’। এই বিষয়ে কাজ করার পেছনেও একটা কারণ আছে।অ্যাডভার্টিইজিং তো আসলে সংস্কৃতিকে ধারণ করতে শেখায়। আর নৃবিজ্ঞান পড়ায় মানুষ। নৃ মানেই তো মানুষ। মোটা দাগে সংস্কৃতি নিয়েই পড়াশোনা হয় নৃবিজ্ঞানে। আর অ্যাডভার্টাইজিং হলোসংস্কৃতির উপাত্ত নিয়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। আমাকে আমার সংস্কৃতি নিয়েই কাজ করতে হয়।
এখন ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্যে প্রচুর কাজ হচ্ছে, ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে প্রচুর কাজ হচ্ছে। এই চলটা কি আগে ছিল? কয়েক বছর আগেও এটা ছিল না। এই দিবসগুলো আমার সংস্কৃতির উপাদান। আমার শহিদ মিনার আমার সংস্কৃতির প্রতীক। সেই দিক থেকে দেখলে আমি মনে করি নৃবিজ্ঞানের লোকজনের অ্যাডভার্টাইজিংয়ে আশা উচিত।
প্রশ্ন: নৃবিজ্ঞানের পড়ালেখা আপনাকে কীভাবে সাহায্য করেছে অ্যাডভার্টাইজিংয়ে?
উত্তর: অ্যাডভার্টাইজিংয়ের কাজ তো আসলে ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করা। সেক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানের পড়ালেখা আমাকে অ্যাডভার্টাইজিংয়ে অনেক সাহায্য করেছে। সেটা কেন কীভাবে তার বিস্তারিত কেউ যদি জানতে চায় তো আমি সে ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগরে আমার ডিপার্টমেন্টে ক্লাস নিতেও আগ্রহী। মোদ্দা কথা, এটা একটা বাজার। এখানে অনেকেই আসতে পারেন। হিস্ট্রি, ফিলোসফি পড়ে কি বিজ্ঞাপনে কাজ করা যাবে না? অবশ্যই যাবে। যদিও আমার প্রথম জব কিন্তু অ্যাডভার্টাইজিংয়ে ছিল না। সেটা ছিল ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংয়ে।
প্রশ্ন: প্যাপিরাসের শুরুটা কবে? কীভাবে?
উত্তর: এটার পেছনে আসলে সেরকম আলাদা কোন ভাবনা ছিল না। আমার একটা চিন্তা ছিল যে আমি নিজে কিছু করে আমার রুটি রুজি কামাই করবো। একদম সিম্পল ম্যাথ। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, ধরো আমার যদি নিজের একটা মুদি দোকান যদি থাকে, আমি চাইলে সারারাত সেটা খোলা রাখতে পারি এলাকার মানুষের জন্য। তাদের সারা রাত সার্ভিস দিতে পারি। কিন্তু অন্যের মুদি দোকানে তো সেটা পারবো না। নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই প্যাপিরাস।আর প্যাপিরাসের শুরুটা হয়েছিল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে। শুরুতে কোন টাকা পয়সা ছিল না।
প্রশ্ন: নিজে কিছু শুরু করার আগেকোথায় কোথায় চাকরি করেছেন?
উত্তর: চাকরি করেছি বেশ কয়েক বছর। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংয়ে চাকরি নিলাম,ইউটিআই পারশিপ-এ, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। খুবই শান্তির চাকরি ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টা, ৫টার পরে আমার তেমন কোন কাজ থাকতো না। আমি কাজ করতাম অ্যাডমিনে, সেই সাথে কিছুটা অ্যাকাউন্টস দেখাশোনা করতাম। ফ্যামিলির রেফারেন্সে কাজটা পাওয়া। এসি রুমে বসে অফিস করা, বাইরে কোন দৌড়াদৌড়ি নেই। ৪/৫ ঘণ্টা কাজ করলেই দিনের কাজ শেষ হয়ে যেত। কিন্তু রক্তের মধ্যে যে পাগলামি, তাই শান্তির চাকরি ছেড়ে বেঞ্চমার্কে জয়েন করলাম।
প্রশ্ন: চাকরির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর: অ্যাডভার্টাইজিংয়ের আগে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংয়েরটা বলি। সেখানে আমার বস ছিলেন চেস্টার হোয়াটসন, তিনি ছিলেন কান্ট্রি ম্যানেজার। তার কাছ থেকে আমি প্রচুর শিখেছি। ওনার কাছ থেকে যা শিখেছি, তা আজ পর্যন্ত আমার জীবনে কাজে লাগছে। উনি খুবই সময় মেনে চলতেন। সবার আগে অফিসে চলে আসতেন। ৪টায় মিটিং হবে মানে ঠিক ৪টা। আমি এখনো কোথায় গিয়ে দেখি না যে ঠিক সময়ে মিটিং শুরু হয়েছে। তিনি বলতেন, আমি যদি ঠিক সময়ে না আসি, বাকিরা আসবে না। কিন্তু যখন আমি ছুটিতে যাব, তুমি কোনভাবেই আমাকে খুঁজে পাবে না। কাজ মানে কাজ, ছুটি মানে ছুটি। দ্বিতীয় যেটা শিখেছি, সেটা হচ্ছে কোন কাজই ছোট নয়। কোন কাজ করতে আমার খারাপ লাগে না।
তৃতীয় যেটা শিখেছি, কাজটা আনন্দের সাথে করা। চতুর্থ যেটা শিখেছি, সার্ভিস কীভাবে দিতে হয়। এত চমৎকার ব্যবহার করতো সবার সাথে, যার সাথেই দেখা হতো সে মুগ্ধ হয়ে যেত। আমাদের অফিসে যেই আসতো, দেখা হলে সে নিজে গিয়ে কথা বলতো, খোঁজখবর নিতো। কে কত বড় বা ছোট পোস্টে কাজ করে সেটা দেখতো না। চেস্টার বলতো, আমার ক্লায়েন্টের পিয়নও আমার ক্লায়েন্ট। ওকেও একইভাবে সম্মান জানানো উচিত। কারণ ও ওর অফিসে গিয়ে আমাদের সম্পর্কে কথা বলবে।
প্রশ্ন: তারপর, বেঞ্চমার্কে আপনার শুরুটা কবে?
উত্তর: সাল তারিখ তো আমার ঠিক মনে থাকে না। ২০০০ এর শুরুর দিকে হবে মনে হয়। সেখানে আমি ছিলাম সার্ভিসিংয়ে, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। আমি সোনারগাঁ হোটেলের অ্যাকাউন্ট দেখতাম। বেঞ্চমার্ক থেকে বের হয়ে ক্রিয়েটাস নামে একটা ফার্ম করেছিলাম। সেটা টেকেনি। এরপর প্যাপিরাস। প্যাপিরাসেই জীবনটা কাটিয়ে দিলাম। ১৪ বছর তো হয়ে গেল।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে পণ্যের প্রচারণার জন্য বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তর: এক কথায় বললে অসীম। এবার ইউটিআই পারশিপ-এ আমার আরেক বসের কথা বলতে হচ্ছে সামার প্রিয়াংকা। সে একটা কথা বলতো, যে মুশফিক তুমি একটা ছাই বের করো, ‘কাজী ছাই’। আমি জিজ্ঞেস করতাম, কাজী ছাই মানে কি? ও বলতো যে, ছাই প্যাকেট করে বেঁচো। সামার বলতো যে, তোমার দেশ হচ্ছে সোনার খনি। ১৫/১৬ কোটি জনগণ। তুমি যদি ১ লাখ মানুষের কাছে ছাই বিক্রি করো আর ১ টাকা করে নাও তাহলেও তো মাসে ১ লাখ টাকা আয় করতে পারবে! তো সেটাই কথা। বিজ্ঞাপন লাগবেই। প্রচারের কোন বিকল্প আমার ধারণায় নেই। আগেও ছিলো না। ভবিষ্যতেও থাকবে না। বিজ্ঞাপন থাকবে তবে মাধ্যম হয়তো পরিবর্তন হবে।
প্রশ্ন: বিজ্ঞাপনের কাজ কি বিক্রি বাড়ানো না মানুষের কাছে বার্তা দেয়া?
উত্তর: বিক্রির সাথে বিজ্ঞাপনের কোন সম্পর্ক নাই। বিজ্ঞাপনের কাজ হচ্ছে মানুষের কাছে পৌঁছানো। মানুষের মাথায় বিষয়টাকে পৌঁছে দেয় বিজ্ঞাপন। প্রোডাক্ট নয়, বিষয়। ধরো, আমি কোন একটা প্রোডাক্টে ছাড় দিলাম। এই ছাড়ের বিষয়টাই মানুষকে জানাবো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। বিজ্ঞাপনের প্রধান কাজ হচ্ছে জানানো। আমার প্রোডাক্টটা কেন ভালো, কোথায় বাকিদের থেকে আলাদা সেটা জানানো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের জগতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। এই সময়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক পরিবর্তন কি দেখেছেন?
উত্তর: ইতিবাচক পরে বলি। নেতিবাচকটাই আগে বলি। আগে বিজ্ঞাপনের যেসব মানুষরা আমাদের উল্টো দিকের চেয়ারেবসতেন অর্থ্যাৎ যারা ব্র্যান্ডে ছিলেনতারা অনেক লার্নেড ছিলেন। তাদের অনেকেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন। অফিসে বসে আমরা যতটা না আলোচনা করতাম, তার চেয়ে চায়ের দোকানে বসে বেশি আলোচনা হতো। ফলে ব্রিফটা খুব ক্লিয়ার থাকতো। আরেকটা বিষয় ছিল তারা আমাদের পার্টনার হিসেবে ট্রিট করতো, অ্যাডভোকেট হিসেবে ট্রিট করতো। দেখা যেত, আমাদের ভাবনাটানিয়ে তারাই টপ ম্যানেজমেন্টের কাছে বিক্রি করতো। কখনো আমরা দুজন মিলে একটা টিম হয়ে যেতাম।
আর এখন অনেকক্ষেত্রে চাপিয়ে দেয়া হয়। বাচ্চাদের মত শুধু বলে, ‘করে দেন, করে দেন।’ অনেকে বোঝেই না টপ ম্যানেজমেন্ট কি চায়। ধরো, তারা ব্রিফ দিল একটা কলম বানায় দেন, আমরা কলম বানায় ম্যানেজমেন্টের কাছে গেলাম। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট বললো, আমি তো পাওয়ার ব্যাংক চাইছিলাম! তার মানে কি? ম্যানেজমেন্টের চাওয়াটাই সে বুঝে নাই। কিন্তু আমাদের তো তখন কিছু করার থাকে না। মেনে নিতে হয়।
তারপর ধরো কলমটা যে বানাবো, অনলাইন থেকে একটা ছবি নামায় বলবে, এরকম করে দেন। আগে যেটা ছিল, আমরা সরাসরি কলম না বানিয়েপ্রথমে একটা অবয়ব বানাতাম। যে জিনিসটা এরকম দেখতে হবে, এর সাথে আরো এটা সেটা আমরা যোগ করেএইরকম একটাকলম বানাবো। আমাদের ইনোভেশনের জায়গা ছিল। এখন সেটা কমে গেছে। এটা নিয়ে আমি কিছুটা হতাশ। আগে অনেক ব্র্যান্ডের লোককে দেখেছি যারা এজেন্সির হয়ে ম্যানেজমেন্টের সাথে বাহাস করতো। কারণ সে ব্রিফ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। সে তো ব্র্যান্ড কাস্টোডিয়ান। সে যেভাবে দেখতে চায় সেটা নিয়েই সে ফাইট করতো। আমাদের ফাইটটাই সে করতো। আর এখন ব্রিফ অনুযায়ী জিনিস বানিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরেও শুনতে হয়, না এটা তো হয় নাই। এভাবে তো চাই নাই। কিন্তু সে কিন্তু সেটাই চেয়েছিল। আরেকটা জিনিস হয়েছে, পার্টনার ভাবাটা বন্ধ হয়ে গেছে। সাপ্লায়ার ভাবে, এজেন্ট ভাবে, দালাল ভাবে, যে দুটো কমিশনের জন্য আসছে।
এবার ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলি। ক্লায়েন্ট এন্ডে এবং বিজ্ঞাপন জগতে নতুন ও পুরোনো দূর্দান্ত কিছু মানুষের সাথে কাজ করছি কিংবা কাজ করছি না কিন্তু যোগাযোগ আছে। যাদের সাথে বিজ্ঞাপন নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে। আলাপ করতে ভালো লাগে। আর যত আলাপ হবে, কাজটা তত ভালো হবে। বিজ্ঞাপন তো আসলে একটা বিশাল বিষয়। এটা এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের টপ ম্যানেজমেন্ট গিয়ে ডিসিশন নেয়।
আরেকটা নেতিবাচক দিক হলো, কোন ইন্ডাস্ট্রি যে বড় হবে, সেরকম কিছু নাই। বাংলাদেশে প্রথম বুম করলো টেলকো, তারপর রড ইন্ডাস্ট্রি। এরপর আর কিছু নাই। ব্যাংকগুলো কিছুটা চেষ্টা করেছিল। যেমন, ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংকের কথা বলবো। সিটি ব্যাংক একসময় দুর্দান্ত সব কাজ করেছে। আমি একসময় ৭/৮ বছর কাজ করেছি সিটি ব্যাংকের। তখন মাসরুর আরেফিন সিএমও ছিলেন। তার মত দুর্দান্ত লোকের কথা আমি সারাজীবন স্মরণ করবো। এরকম লোক আমি খুব কম দেখেছি, অসাধারণ মানুষ।
প্রশ্ন: এখনকার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনকে কি পেশা হিসেবে নেয়া যায়? আপনার অভিজ্ঞতা কি বলে?
উত্তর: আমি নিজে একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের সাথে যুক্ত। তারপরও বলবো পেশা হিসেবে খুব দুর্বল। দুর্বল কারণ আমাদের ইন্ডাস্ট্রি দুর্বল। এর পিছনে কিছু কারণ আছে। হয়তোবা ইন্ডাস্ট্রিটাকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। একটা উদাহরণ দেই, আমি যখন ফ্রেইট ফরোয়র্ডিংয়ে ছিলাম তখন দেখেছি এয়ারপোর্টে ঢুকতে হলে গলায় আকাবের কার্ড ঝুলিয়ে ঢুকতে হতো। তাদের অ্যাসোসিয়েশনের নাম ছিল আকাব। কার্ড না থাকলে ঢোকা যাবে না। একজন অফিসারের জন্য যা, লোডার বা কুলির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।
অ্যাডভার্টাইজিংয়ে এমন কোন ব্যাপার নাই। আজকে আমার মন চাইলো মাঝরাতেআমার শালীর নামে একটা অ্যাড ফার্ম করে কাজ দিয়ে দিলাম। কারণ আমার কাজ দেয়ার ক্ষমতা আছে। এটা কেন হয়? আমাদের একটা অ্যাসোসিয়েশন আছে অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, এএএবি। এই সংগঠনকে আমার কখনোই খুব একটা অ্যাক্টিভ মনে হয়নি। আমিও সদস্য হয়েছি এই করোনাকালীন সময়ে। অথচ এই অ্যাসোসিয়েশন যারা চালায় তারা অনেক বড় মানুষ, তাদের প্রতিষ্ঠানও অনেক বড়। আলী যাকের সাহেব মারা গেছেন, আসাদুজ্জামান নূর আছেন, রামেন্দু মজুমদার, গীতি আর সাফিয়া ম্যাডামরা আছেন। এইরকম বড় মাপের মানুষ অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে কয়জন আছেন? এদের সবার কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি যোগাযোগ আছে। শাওন ভাইও (গাউসুল আলম শাওন) এখন অনেক অ্যাক্টিভ।
ওনাদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং নেতৃত্ব নিয়ে আলাপ করবার সামর্থ্য আমার নাই। আমি অতি সামান্য মানুষ। হয়তো অতি সামান্য বলেই ওনাদের দিকে তাকানো এই শিল্পের প্রসারে আরো দায়িত্বশীল ও কার্যকরী কাজে তারা এগিয়ে আসুক সেটা চাই। ওনাদের কাছে কয়েকশ প্রতিষ্ঠানের চাওয়াটা অনেক। ওনাদের নিজেদের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সেক্টরকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটা পথ দেখানো উচিত। আজ যে ছোট কাল সে বড় হবে। সে স্বপ্নটা দেখানোর জন্য ওনাদের দিকে তাকিয়ে থাকা।
কেন পত্রিকার বিজ্ঞাপন নিতে হলে অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার হতে হবে না? কেন টিভিতে বিজ্ঞাপন চালাতে গেলে অ্যাসোসিয়েশনের কার্ড লাগবে না? কেন একটা এজেন্সি মাঝরাতে তৈরি হবে? এজেন্সি অবশ্যই তৈরি হবে কিন্তু সেখানে একটা মিনিমার ক্রাইটেরিয়া তো থাকতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি তো এখনও শক্তভাবে দাঁড়ায় নাই।
আগে আইবিএর ছেলেমেয়েদের একটা চয়েস ছিল অ্যাডভার্টাইজিং। এখন কয়জন আসছে? কেন আসবে? আইবিএ বাদ দেই, নর্থসাউথের একটা ছেলেই বা কেন আসবে? জাহাঙ্গীরনগরের একটা ছেলে কেন আসবে? আসে, হয়তোবা এখান থেকে শিফট হয়ে কর্পোরেটে যাবে, এ কারণে আসে।
বেশিরভাগ এজেন্সিতে প্রোভিডেন্ট ফান্ড নাই। আমারও নাই, প্রোভিডেন্ট ফান্ড নাই, গ্র্যাচুয়িটি নাই। আমরা ছোট প্রতিষ্ঠান তবু আমরা চেষ্টা করছি এগুলো চালু করার। কিন্তু একটা তো ইন্ডাস্ট্রি সিকিউরিটি থাকবে। শ্রমিক মারা গেলে সেখানে শ্রমিক ইউনিয়ন আছে। অ্যাডভার্টাইজিংয়ে কি আছে? কিচ্ছু নাই।
আমি অনেক সিনিয়র মানুষকে দেখেছি অ্যাডভার্টাইজিংয়ে কাজ করে শূন্য হাতে ফেরত গিয়েছে। তারা ২০-২৫ বছর এই ইন্ডাস্ট্রিকে দিয়ে গেছেন। তার বদলে তারা কি পেয়েছে? লবডংকা, শুধু মাসিক বেতন। আজকে তাদেরকে চলার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে হয়।
কেন ইন্ডাস্ট্রি হলো না? এত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার সুযোগ তবু কেন হলো না? ধরো, দেশে ৫২টা ব্যাংক আছে, এমন যদি নিয়ম থাকতো যে আমি সিটি ব্যাংক করি, আমি ইবিএল করতে পারবো না। আমার বেয়াই, শালীর নামে কালকে আরেকটা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারবো না। তাহলে ৫২টা বড় এজেন্সি তৈরি হতো। দেখা যাচ্ছে একই প্রতিষ্ঠান সকালবেলা দুধের একটা কোম্পানির কাজ করছে, বিকালে আরেকটা দুধের কোম্পানির কাজ করছে। কারণ সে ভালো কাজ পারে, যোগ্যতা আছে। কিন্তু এই যোগ্যতাটা তো কোন না কোনভাবে আটকানো দরকার। তা নাহলে যোগ্যতা ডিস্ট্রিবিউট হবে কীভাবে?
প্রশ্ন: এটাকে কি মনোপলি বলতে চাচ্ছেন?
উত্তর: হ্যা। একটা মনোপলি আছে। আমি কাউকে হেয় করার জন্য বলছি না। তারা অনেক জ্ঞানী গুণী সজ্জন ব্যক্তি। তাদেরকে হেয় করার যোগ্যতাও আমার নেই। আজকে আপনি ১০ জন সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করেন তো আলী যাকের কে? বলবে, একজন অভিনেতা। রামেন্দু মজুমদার সাহেব কে? উত্তরে বলবে, একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। গীতি আরা ম্যাডামকে বলবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির লোকজন ছাড়া কেউ তাদেরকে অ্যাডভার্টাইজিংয়ের লোক হিসেবে জানে না।
ওনাদের নেম-ফেম সব আছে এবং ছিল, ওনারা এই শিল্পের কিংবদন্তী মানুষ; এই শিল্পটাকে বিশাল একটা চেহারা দেবার দিকে আরেকটু মনোযোগী হলে মনে হয় পুরো শিল্পের জন্য এবং দেশের জন্য একটা বড় কাজ হতো।
অন্যদিকে আনিসুল হককে দেখেন। তিনি মেয়র ছিলেন, কিন্তু তারও আগে তিনি বিজিএমই এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে মানুষ তাকে চিনতো। আমি যাদের কথা বললাম, অ্যাডভার্টাইজিংকে একটা ইন্ডাস্ট্রি বানানোর সামর্থ্য তাদের ছিল। কেন হয়নি সেটা আমি জানি না।
আর ইন্ডাস্ট্রি হয় নাই দেখেই নতুনদের আসাটা ঝুঁকিপূর্ণ। ভালো ছেলেপেলে আসতে চায় না। আসলেও থাকে না। কেউ কেউ আসে, একটু শিখে চলে যায়। আর আসবেই বা কেন? ভালো বেতন দিতে পারি না। দিন দিন বিজ্ঞাপনের রেট কমছে, সব জায়গায় রেট বাড়ে, অ্যাডভার্টাইজিংয়ের রেট কমে। অথচ এটা আরো বাড়ার কথা ছিল, অনেক বাড়ার কথা ছিল। সেই সক্ষমতা আমাদের ছিল।
প্রশ্ন: করোনা পরিস্থিতিতে বিজ্ঞাপন খাত কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
উত্তর: বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। যতদূর জানি আমাদের অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য চেষ্টা করছে সরকারি সাহায়তার জন্য। যদিও জানা নাই কেউ তা পেয়েছে কিনা।
প্রশ্ন: এ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোয় আপনাদের পরিকল্পনা কি? যে ক্ষতি হয়েছে সেটা কি পুষিয়ে নেয়া যাবে?
উত্তর: না। সেই ক্ষতি পোষাবে না। ইভেন্ট অ্যাক্টিভেশন সেক্টরটা একদম ধসে গেছে। অনেক ছেলেপেলের চাকরি গেছে। এখানে আমার নিজেরও একটা প্রশ্ন আছে। অনেক কোম্পানি তো অনেক প্রফিট করেছে। চাইলে এসব ছেলেপেলেকে রাখতে পারতো। আমার ইভেন্টস অ্যাক্টিভেশন টিম পুরো বসেছিল। এটা বিশাল ক্ষতি। আবার টিভিতে কমিউনিকেশন বেশি চলেছে, সেটাও ঠিক।
প্রশ্ন: ডিজিটাল তো এই সময়ে বেশ এগিয়েছে…
উত্তর: বাংলাদেশে ডিজিটাল এখনও আঁতুর ঘরে। পৃথিবীতেই এখনও আঁতুর ঘরে। অনেক এক্সপার্ট আছেন যদিও আমাদের দেশে, আমার মনে হয় সবই বকা বাদ্যি করছে। সবার ডিজিটাল এজেন্সি আছে। আমরাও করেছি বাধ্য হয়ে। আমার মনে হয় ডিজিটাল এজেন্সি থাকবে না একসময়। সমস্যা যেটা হচ্ছে নতুন এজেন্সিগুলো রেট অনেক কমিয়ে ফেলেছে। উদ্যোক্তাদের অনেকেই স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান, আমাদের মত তাদের ঘরের বাজার করার চিন্তা নেই। এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব ক্ষতিকারক। কারণ রেট বাড়ার কথা, উল্টো কমছে।
প্রশ্ন: দুটোই তো ক্ষতিকারক। একদিকে মনোপলি ব্যবসা অন্যদিকে রেট কমছে।
উত্তর: ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই ক্ষতিকারক। খুবই ক্ষতিকারক।
প্রশ্ন: প্যাপিরাসের বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত?
উত্তর: এখন ৫০ এর বেশি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অন্যান্য বিজ্ঞাপনী সংস্থার থেকে প্যাপিরাস কি নিজের কোন আলাদা জায়গা তৈরি করতে পেরেছে?
উত্তর: হ্যা, প্যাপিরাসের একটা আলাদা জায়গা আছে। বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রির জন্য আলাদা কিছু করেছি সেটা বলবো না। কিন্তু প্যাপিরাসের একটা জায়গা আছে, আমরা একটা পরিবার দাঁড় করাতে পেরেছি।
প্যাপিরাস সার্ভিস নিয়ে খুব মাথা ঘামায়। এখানে অ্যারোগেন্সির কোন জায়গা নেই, ক্লায়েন্টের সাথে না, কলিগদের সাথেও না। এখানের কাজের পরিবেশ খুব সুন্দর। করোনার এই সময়ে বাংলাদেশের কয়টা এজেন্সি এআরএম (অ্যানুয়াল রিভিউ মিটিং) করতে পেরেছে জানিনা। আমরা বেশ আয়োজন করে এআরএম করেছি। গত কয়েক বছরের চেয়ে বড় আকারে করেছি।
কারণটা কি? আমরা দু:সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছি। এই দু:সময়ে আমরা একে অপরের পাশে ছিলাম। করোনার কারণে কারো চাকরি যায়নি। দু’চারজন চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, অন্য কোথাও গিয়েছে, আবার নতুন অনেকে জয়েন করেছে। করোনায় আমাদের লোকবল ৩০% বেড়েছে। কি করে? কারণ প্যাপিরাস এই সময়ে নতুন নতুন ক্লায়েন্টের কাজ শুরু করেছে। করোনায় একদিনের জন্যও আমার থেমে থাকিনি।
করোনার শুরুতে কর্মীরাই এসে বলেছে, যেভাবেই হোক আমাদের অফিসটাকে বাঁচাতে হবে। কারণ তারা মনে করেছে প্যাপিরাস বাঁচলে তারা বাঁচবে। আমাদের অফিস সহকারীরা নিজেদের উদ্যোগে কাজ ভাগ করে নিয়ে সবার বাসায় ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় যা কিছু আছে পৌঁছে দিয়েছে। আমি নিজে ডিজিটালি খুব দুর্বল। কিন্তু সবাই মিলে দু’দিনের মধ্যে বাসায় বসে কাজ করার একটা প্ল্যাটফর্ম বের করে ফেললো। ক্লায়েন্টের সাথে তো প্রতিনিয়ত ফোনে কথা হচ্ছেই। বাসায় বসে কীভাবে কাজ হবে সেটাও ঠিক করে ফেললো। এখন যদি বলি, ‘আমার সব পূর্বপ্রস্তুতি ছিল’- সেটা বলাটা শুধুই বকাবাজি হবে।
তবে হ্যা, আমরা লড়বো এই সাহসটা দিয়েছি এবং আমি খুব কৃতজ্ঞ আমরা কলিগরা আমাকে এই বছর সেই সম্মাননা দিয়েছেন। একটা বক্সিং গ্লভস উপহার দিয়েছেন আর একটা ক্রেস্ট। যেটা আমি আগে কখনো পাইনি। তারা মনে করেছে যে যোদ্ধা হিসেবে আমি তাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।
আমরা ৪/৫ বস্তা চাল কিনেছি, আলু, ডাল কিনেছি। কলিগদের কারো যদি কিছু লাগে তার জন্য কিনে রেখেছি। কারো কারো স্যালারি কম, তাদের তো চলতে হবে। স্যানিটাইজার দেয়া হয়েছে সবাইকে, পুরো অফিস নিজেরা মিলে স্যানিটাইজ করেছি। এই যে এখন অফিস চালু হচ্ছে এটাও কলিগদের উদ্যোগে।
আমাদের সাবেক সহকর্মীদের সাথেও কিন্তু আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। আমি জানি আজকে যদি আমি কোন বিপদে পড়ি আমার বর্তমান সহকর্মীরা যেভাবে পাশে এসে দাঁড়াবে, সাবেক কয়েকজন সহকর্মীও সেভাবেই পাশে এসে দাঁড়াবে।
একটা ভালো কাজ করার জন্য কারো চেষ্টার কোন শেষ নাই। একজনের কাজে আরেকজন এসে সাহায্য করছে, রাত ১১/১২ টা পর্যন্ত কাজ করছে। এই যে ভালোবাসা কলিগদের প্রতি এখানেই প্যাপিরাস আলাদা।
প্রশ্ন: আপনাদের পোর্টফোলিওতে উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডস কি কি আছে?
উত্তর: আমরা অনেকগুলো ব্র্যান্ডের কাজ করি। বসুন্ধরা আটা, ময়দা, সুজির কাজ করছি। বসুন্ধরা এলপি গ্যাস, সস এবং রিয়েল এস্টেটের কাজ করছি। শান্তা হোল্ডিংস, মীনা বাজার, ইউল্যাব এর কাজ করছি। আকিজ প্লাস্টিকস আমাদের বড় ক্লায়েন্ট। আকিজ পাইপস আছে। সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্ট বলতে পারি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, কাজী এন্টারপ্রাইজকে।
এছাড়া ইভেন্টস করি অনেকের জন্য। তবে আমরা খুব লো প্রোফাইল মেইনটেইন করি,অলওয়েজ ডাউন টু আর্থ। আমরা আজকে দুইটা ফ্লোর নিয়ে অফিস করেছি, বিশাল অফিস। যারা আসে তারাই বলে, সুন্দর অফিস, বারান্দাগুলো খুব সুন্দর। প্যাপিরাস যদি কোনদিন ২০ তলা অফিসও হয়, তখন আমি থাকবো কিনা জানি না, হয়তো থাকবো বা থাকবো না কিন্তু এই ডাউন টু আর্থ অ্যাটিচুডটা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। বিনয়ের সাথে মাথা নিচু করে সামনে এগোনেতে আমরা বিশ্বাসী। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, প্যাপিরাসে কোন পলিটিক্স নেই, গ্রুপিং নেই, একটাই গ্রুপ, প্যাপিরাস।
প্রশ্ন: আপনাদের পোর্টফোলিও-তে দেখা যাচ্ছে একটা কোম্পানির অনেকগুলো ব্র্যান্ডস আছে। এটা কি কোন সমস্যা তৈরি করে?
উত্তর: না সমস্যা তো করেই না উল্টো সুবিধা হয়। কারণ একেকটা কোম্পানির তো একেকটা ফিলোসফি থাকে, ম্যানেজমেন্টের একটা টেস্ট থাকে। সেগুলা বোঝা সহজ হয়।
প্রশ্ন: বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজটি করে প্রোডাকশন হাউজ। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রোডাকশন হাউজগুলো কি, যে কোন ধরণের বিজ্ঞাপন নির্মাণে দক্ষ নাকি এখনও আগের মত ভারত নির্ভরতা রয়েছে?
উত্তর: না, না, এখন শুধু ভিএফএক্স ছাড়া আমাদের আর ভারত নির্ভরতা নেই। প্রোডাকশন হাউজের ক্ষেত্রে বলবো বাংলাদেশে এজেন্সি যতটা না এগিয়েছে, প্রোডাকশন হাউজ তার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়েছে। দারুণ সব ছেলেদের সাথে কাজ করছি। হ্যাঁ, আবার অনেকেই আছে অল্প বয়সে বেশি বোঝে! তবে সব মিলিয়ে অনেক ভালো ভালো ডিরেক্টর কাজ করছে এখন।
কিন্তু মডেল ইন্ডাস্ট্রি আগায় নাই। আমাদের কোন মডেল ইন্ডাস্ট্রি নাই, প্রোফেশনাল মডেল ট্রেনিং নাই, যা আছে তা রদ্দি মারা। মডেলের আসবে এক্সপ্রেশন, মডেল মানে দেখতে সুন্দর… এই কনসেপ্ট যে আমাদের দেশে কোত্থেকে আসলো, আমি জানি না।
আজকে অমিতাভ রেজার কয়েকটা ভালো কাজ আমরা দেখি, কয়টা ফর্সা মেয়ে তার বিজ্ঞাপনে আছে? ফারুকির বানানো সেই বিখ্যাত অ্যাড, নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমা, সেখানে মডেল কে ছিল? সিক্স প্যাকওয়ালা কোন ছেলে না একজন বয়স্ক মানুষ? সেই মডেলটাকে তো তৈরি করতে হয়েছে। অনেকেই জানে না কোন মডেল দিয়ে কাজ করাতে হবে।
প্রশ্ন: নব্বইয়ের দশকেও একটা প্রবণতা ছিল যে, একটু বেশি বাজেটের বিজ্ঞাপন হলেই ভারতীয় ডিরেক্টর দিয়ে বানাতে হবে, এখনও কি সেই প্রবণতা আছে?
উত্তর: না, সে তো কবেই উড়ে গেছে! আমাদের কিছু টেকনিক্যাল জায়গায় ভারতের উপর নির্ভর করতে হয়। যেমন, আমাদের কাছে হাইস্পিড ক্যামেরা নাই। ভিএফএক্স এর বড় কাজ আমরা বাংলাদেশে করতে পারি না। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, এগুলো আসলে অনেক এক্সপেনসিভ। ইনভেস্ট যদি কেউ করেও সেটার রিটার্ন নিয়ে তো ভাবতে হবে।
প্রশ্ন: অ্যাকাডেমিকভাবে বিজ্ঞাপনে পড়ালেখার সুযোগ তো আমাদের দেশে নেই। তাহলে তারা তৈরি হচ্ছে কীভাবে?
উত্তর: দুনিয়াতে কোথায় আছে বিজ্ঞাপনের পড়ালেখা? এখন কিছু কিছু জায়গায় হচ্ছে সেটা ঠিক। খুব যে দরকার আছে তা আমি মনে করি না। তবে হ্যাঁ, পড়াশোনার, চর্চার দরকার আছে। আমি একটা দু:খের কাহিনী বলি, কয়েক বছর আগে আমরা একটা ব্যাংকের নতুন শাখা খোলা হবে, সেটার বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করছি। ব্রাঞ্চটা হবে কিশোরগঞ্জে, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মস্থানে। তো লিখতে হয় না যে, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কিশোরগঞ্জে আমাদের এততম শাখা চালু হচ্ছে। আমাদের আর্ট ডিরেক্টর জয়নুল আবেদিনের ছবি দেখিয়ে ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞেস করলেন যে বলো, উনি কে? কেউ বলতে পারে না। আর্ট ডিরেক্টর তো ক্ষেপে গেলেন।
দেখা যায় যে, এই জেনারেশনের অনেকেই জয়নুল আবেদিন, এসএম সুলতানকে চেনে না। দোষটা ওদের না। বাবা-মা শেখায়নি। যেমন, আমার মেয়েকে আমি গতকাল জিজ্ঞেস করেছিলাম আজম খান কে? সে জানে না! পিংক ফ্লয়েড কে সে জানে না। কবির সুমন, হ্যারি বেলাফন্টের নাম শুনে নাই। কিন্তু সে বিটিএস চেনে। আমার ছোট মেয়ের পছন্দ ব্ল্যাক পিঙ্ক। বিটিএস এর জামার মাপ বলতে পারে, কয়টা বোতাম খুলে রাখে সেটা বলতে পারে।
এই দোষটা তো আমার মেয়ের না, আমার। আমি তাকে আজম খান চেনাই নাই। তো আমার মেয়েকে আমি একটা অফার দিলাম যে, তোর পছন্দের ৫টা গান আমি শুনবো। আমার পছন্দের দুইটা গান তুই শুনবি। দেখলাম, আমার পছন্দের দুইটা গান সে শুনেছে এবং আগ্রহীও হচ্ছে। আমি কিন্তু বিটিএসকে খারাপ বলছি না, বিটিএস অবশ্যই শুনবে, শুনবে না কেন?
কালকে যেমন শুক্রবার ছিল আমার দুই মেয়েকে আমি দুইটা লাইন শিখিয়েছি, ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি/সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?’ বিষয়টা হচ্ছে যদি লালনের গান না শোনে, তাহলে এদেশের মানুষের মনে যে লালন আছে সেটা কীভাবে বুঝবে?
অ্যাডভার্টিইজিংয়ে কাজ করতে হলে দরজা জানালা খোলা রাখতে হবে। কৃষক যে সার ব্যবহার করে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করি না? শ্রমিকের জন্য একটা প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে গেলে তার পরিভাষা তো আমার জানতে হবে। বাংলাদেশে কোন নায়িকা সবচেয়ে পপুলার সেটা তো জানতে হবে। বাচ্চাদের জন্য একটা ক্যান্ডির কাজ করতে গেলে তো এই বিটিএস আমাকে শুনতে হবে। আমার দরজা জানালা খোলা রাখতে হবে। সবকিছু সম্পর্কেই ধারণা থাকতে হবে। নানা জিনিসের পড়াশোনাটা দরকার। জ্যাক অব অল ট্রেড. মাস্টার অব নান। আমার শিল্প একটু জানতে হবে, সংস্কৃতি একটু জানতে হবে, খেলাধুলা একটু জানতে হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে বেশ কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিদেশি বিজ্ঞাপনী সংস্থার সাথে অ্যাফিলিয়েটেড হয়ে কাজ করে? এটা কি বড় কোন প্রভাব বিস্তার করে?
উত্তর: বাংলাদেশে এটা খুব একটা প্রভাব ফেলে না। বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েশন আছে অনেক এজেন্সির, আবার অনেকের নাই। এককালে এটা অনেক বড় বিষয় ছিল। এখন আমাদের স্থানীয়ভাবেই এখন অনেক বড় বড় এজেন্সি তৈরি হয়ে গেছে। অ্যাফিলিয়েশনের একটা ভালো জিনিস হচ্ছে মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড পাওয়া যায়। ওএনএম এর মত দুনিয়াজোড়া এজেন্সি সরাসরি এসেছিল, কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বড় বড় গ্লোবাল অ্যাফিলিয়েশন নিয়ে কিছু কিছু এজেন্সি আছে যারা আমাদের চেয়েও ছোট। অ্যাফিলিয়েশন কাজে লাগাতে পারেনি। আমি নাম ধরে বলতে পারি। সবার সম্মান রাখি, কারো নাম না বলি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি পুরস্কার বা সম্মাননা দেয়া হয়। যেমন সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বিজ্ঞাপনের জন্য এমন কিছু থাকা উচিত বলে মনে করেন কি?
উত্তর: ব্র্যান্ড ফোরাম দিচ্ছে তো।
প্রশ্ন: সেটা তো বেসরকারিভাবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন পুরস্কার তো নেই।
উত্তর: ওই যে এখানেই তো আমার হতাশা। ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে তো আমরা দাঁড়াতে পারিনি। ইন্ডাস্ট্রি থাকলে হতো। আমি আজকে ব্র্যান্ড ফোরাম থেকে অ্যাওয়ার্ড নিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু আমার ট্রেডে তো একটা ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড থাকবে, নিজস্ব কিছু থাকবে।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে দেখা বাংলাদেশের কয়েকটি ভালো বিজ্ঞাপন যা আপনার ভালো লেগেছে, সেটা আপনাদের নিজেদের কাজও হতে পারে।
উত্তর: নিজেদেরটা বলা উচিত না। বিজ্ঞাপনে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। আমি স্পেসিফিক কারোটা বলবো না। অনেক ভালো কাজ হচ্ছে, অনেক মাঝারি মানের কাজ হচ্ছে। সংখ্যায় অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। ধরো, ১০০ টা ভালো কাজ হচ্ছে, কিন্তু ১০০০টা কাজের মধ্যে ১০০ ভালো কাজ হচ্ছে, অর্থ্যাৎ ১০%। আগে ১০০টা কাজ হতো, সেখানে হয়তো বা ৩০টা ভালো কাজ হতো, মানে ৩০%। সংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু অনুপাত কম এবং একই ধরণের কাজ হচ্ছে প্রচুর। এটা এক ধরণের মানসিকতা হয়ে গেছে। তবে প্রচুর ভালো কাজ হচ্ছে, মনে রাখার মত কাজ হচ্ছে।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে আমি বিজ্ঞাপন বানাই, দিনশেষে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে। মানে যিনি বানাচ্ছেন, টাকা দিচ্ছেন, তার উদ্দেশ্যটা তো সফল হতে হবে। আরেকটা জিনিস আমি বলতে চাই, আমি ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পেতে চাই না। আমাদের কাজের প্রচুর সমালোচনা আছে। অনেকের অনেক কিছু ভালো নাই লাগতে পারে। আমি কাজ করি মানুষের জন্য। ধরো, আমি এখন প্রচার করতে চাই রিকশাওয়ালাদের মাঝে। সেটা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপক অথবা একজন ব্র্যান্ড ম্যানেজার কি বললো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। রিকশাওয়ালা জিনিসটা বুঝেছে কিনা সেটাই প্রধান বিষয়। এটাই হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: আগে দেখা যেত জিঙ্গেল বেজড বিজ্ঞাপন অনেক বেশি হতো…
উত্তর: এখনও হয়।
প্রশ্ন: সেগুলো অনেক পপুলার হতো। দেখা যেত সিনেমার গানের চেয়ে বেশি হিট বিজ্ঞাপনের গান।
উত্তর: সেটার আলাদা কারণ আছে। তখন টিভি ছিল একটা। তারপর হলো কয়েকটা। একটা বিজ্ঞাপন বারবার প্রচার হতো। শুনতে শুনতে মানুষের মুখস্থ হয়ে যেত। এখন তো খরচে পোষানো যায় না। এটা একটা বড় কারণ যে এখনকার জিঙ্গেলগুলো ওভাবে মানুষের কাছে পৌঁছায় না। ল্যাব এইডের ‘সুখে অসুখে’, সুন্দরী প্রিন্ট শাড়ির ‘প্রিয় প্রিয় প্রিয়’…এগুলো এখনও মনে আছে আমার। এখনও দুর্দান্ত সব জিঙ্গেল হচ্ছে। আমার নিজের টিমে একজন অসাধারণ জিঙ্গেল রাইটার আছে। ওদের লেখা পড়ে আমি নিজেই ভাবতে বসি যে কীভাবে পারে এইরকম লিখতে!
প্রশ্ন: ভালো বিজ্ঞাপনের জন্য ভালো বাজেট কি গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: বাজেট কোন অর্থে? নির্মাণের জন্য না প্রচারের জন্য? বাজেট তো লাগবেই। কিন্তু একটা বিজ্ঞাপন বানাতে যে সবসময় ভালো বাজেট লাগে তা নয়। কিন্তু প্রচার করতে তো বাজেট লাগবে। আমি যদি টিভিতে স্পট চালাতে না পারি, তাহলে তো কাজ হবে না। অনেক ভালো ভালো বিজ্ঞাপন আছে, কিন্তু কারো চোখে পড়ে নাই, কারণ টিভিতে স্পট পায় নাই। তাহলে কি লাভ আছে? আমার যেখানে যা প্রয়োজন সেটা তো লাগবে।
প্রশ্ন: বিজ্ঞাপনের আলাপ মোটামুটি শেষ। এবার আপনার ব্যক্তিগত জীবন। আপনার বেড়ে ওঠা কোথায়?
উত্তর: আমার বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার। কিন্তু আমাদের খুবই অর্থকষ্ট ছিল। এখনকার মত সরকারি চাকরির বাজার তখন ছিল না যে সরকারি চাকরি মানেই খুব আমোদের চাকরি। এখন গর্বের সাথে বলি আমার বাবা ‘সৎ’ ছিলেন। আগে রাগ হতো, বাবার উপর প্রচণ্ড অভিমান হতো। বন্ধুরা যখন দামি দামি টিফিন খেতো তখন আমার টিফিনের টাকা জোগাড় করতে আমার বাবা-মা’র কষ্ট হতো।
এটা নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই এখন। সেই কষ্টটাকে আমি সম্মান করি। আমার জুতাটা ছেড়া ছিল, আমার শার্টটা মলিন ছিল, কোন আফসোস নাই। এখন মনে করি যে, আমি আমার বাবার জন্য গর্বিত। আজকে আমি যা করে খাচ্ছি বা যতদিন বেঁচে থাকবো শুধুমাত্র আমার বাবার এই সততার জন্য।
আমি আমার বাবার মত সৎ হতে পারিনি। আমার মেয়ে তো আসলেই চিনবে না, সুমনের গান তো আমার মেয়ের ভালো লাগবে না, কারণ আমি তো আমার বাবার মত সৎ না। আমার কাছে আমার নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন আছে কিন্তু আমার বাবাকে নিয়ে কোন প্রশ্ন নাই। অনেক কষ্ট করে মানুষ হয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, কিন্তু চারপাশের মানুষ বুঝতে পারতো না। ভাবতো যে সরকারি কর্মকর্তার ছেলে। আমার একজন খালা আমাকে কিছু টাকা পয়সা দিতেন, তা দিয়ে চলতাম। বাবা অবসর নেয়ার পর অল্প কিছু টাকা পয়সা দিতে পারতো। শেষ দিকে আর পারছিলো না, তখন টিউশনি করিয়েছি।
কোন আফসোস নেই, একদমই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাইনি। কিন্তু আমার বাবার আনন্দ ছিল। আমি মনে করি না যে সুখী হওয়ার জন্য একজন মানুষের অনেক বিত্ত বৈভব থাকতে হবে। যদিও আমি নিজে সেটা পারছি না, আমার বাচ্চাদের বৈভবের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছি। যদিও অনেস্টলি আমি চিৎকার করে বলতে পারি যে, আমি এটা চাই না, যে যা চাবে তাই পাবে। ঈদে একটা শার্ট পাবো সে আনন্দে আমাদের বুক ভেসে যেত। সেই জামাটা এখনও প্রিয়, সেই জামার গন্ধটা এখনও প্রিয়।
প্রশ্ন: আপনার বড় হওয়া তো ঢাকাতেই?
উত্তর: আমার শৈশব কেটেছে কয়েকটি জেলায় বাবার চাকরি সূত্রে। বরিশাল, যশোর এবং কুমিল্লায়। আমার জন্ম ফরিদপুরে। ঢাকায় আসা আমার ১৯৮৯ সালে। তারপর থেকে ঢাকাতেই।
প্রশ্ন: বিজ্ঞাপনে নতুন যারা কাজ করতে আসতে চায় তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?
উত্তর: আমার অনেক পরামর্শ আছে। নতুনদের আমি খুব পছন্দ করি। ওদের সাথে আমার খুব তাড়াতাড়ি পিরিত জমে যায়। অনেক মানুষ আসে গল্প করতে তবে আমি ওয়ান টু ওয়ান গল্প করতে পছন্দ করি, দলবদ্ধ গল্প করতে পারি না।
আমার একটা পরামর্শ থাকবে যারা অ্যাডভার্টাইজিংয়ে আসতে চায় যেন দু’চার পাতা পড়াশোনা করে আসে। পড়াশোনা বলতে বোঝাচ্ছি নিয়মিত পড়ার চর্চা, পাঠাভ্যাস। সেই সাথে নিজের চারপাশটাকে জানতে হবে। আমি খুব হতাশ হই যে, বাংলাদেশের বড় বড় মানুষ এখনও জানে না এদেশের কৃষক কেমন আছে, রিকশাওয়ালা কেমন আছে, তারা গাড়ির জানালা দিয়ে দেখে, আসল খবরটা জানে না।
আমি নেতিবাচক অর্থে বলছি না। আমি যদি উচ্চবিত্তের জন্য কোন ব্র্যান্ড লঞ্চ করতে যাই, তাহলে তো উচ্চবিত্তের টাচপয়েন্ট সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে, তাকে কোথায় পাওয়া যাবে সেটা জানতে হবে। এই জানাশোনাটা জরুরি। একটা জিনিসের আমি খুব ভক্ত সেটা হচ্ছে পাঠাভ্যাস। উপন্যাস পড়তে হবে। না পড়লে, না জানলে কোন বাঙ্গি-ই ফাটানো যাবে না। আর এটা নিয়মিত চর্চা। আজকে পড়তে হবে, কালকে পড়তে হবে, পরশু পড়তে হবে…পড়াটা চলবে। পড়ার কোন শেষ নাই।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন! একটা বিজ্ঞাপনকে আপনি কখন ভালো বলেন? ভালো গল্প না ভালো নির্মাণ? ভালো বিজ্ঞাপনকে আপনি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?
উত্তর: আমার কাছে ভালো বিজ্ঞাপনের সংজ্ঞা দুইরকম। একটা হচ্ছে এফেক্টিভ বিজ্ঞাপন আরেকটা হচ্ছে ভালো বিজ্ঞাপন। আমি যাদের জন্য বিজ্ঞাপন করছি, আমার টিজি অর্থ্যাৎ টার্গেট গ্রুপের কাছে পৌঁছালে সেটাকে আমি এফেক্টিভ বিজ্ঞাপন বলি। যেমন: আমি একটা ক্যান্ডির বিজ্ঞাপন করেছি ৭ থেকে ১৪ বছরের শিশু কিশোররা। জ্ঞানী গুনী বোদ্ধারা বলছে এটা কিছু হয় নাই কিন্তু আমার টিজি খুব মজা পাচ্ছে। এটাকে আমি বলবো এফেক্টিভ বিজ্ঞাপন, কার্যকরী বিজ্ঞাপন। আরেকটা হচ্ছে ভালো বিজ্ঞাপন। যেটা থেকে আমিও শিখতে পারি। যে এই ভাবনাটা আমার মাথায় কেন আসলো না, ও কীভাবে ভাবলো?
প্রশ্ন: অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক সময় নিয়ে নিলাম!
উত্তর: অনেক কথা বলে ফেললাম!
মতামত দিন