গারদ ভেঙে বেরিয়ে আসছে একজন ব্যক্তি। নীচে লেখা, “আমাদের একটি দেশ চাই, কারাগার নয়।” আর একটা ছবি একদল বিক্ষোভকারীর। “ভি” চিহ্ন দেখাচ্ছেন তারা। ছবির নীচে লেখা— “বিপ্লবের বীজ পুঁতে দাও, রাষ্ট্রের জন্ম হবে।” একটা দেওয়াল-লিখনের বার্তা আরও স্পষ্ট, “দেখো আমেরিকা, তোমাদের জন্যই আমাদের এই হাল।”
বাগদাদের সাদুন টানেল ও তার চারপাশ। টাইগ্রিস নদীর ধারে এই এলাকাটি এখন বিক্ষোভকারীদের দখলে। অক্টোবর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পর্যন্ত শতাধিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত কয়েক হাজার। বিক্ষোভ আগেও দেখেছে দেশটি। তবে সেই বিক্ষোভের থেকে এবারের প্রতিবাদের চেহারাটি আলাদা।
এবার বিক্ষোভকারীরা কোনও রাজনৈতিক নেতার পদত্যাগ বা রাজনৈতিক দলের গদি ছাড়ার দাবি তুলছে না। তারা চাইছে, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো এবং শাসন ব্যবস্থাতেই আমূল পরিবর্তন আসুক। ২০০৩ সালে মার্কিন হামলা ও সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর থেকে যেভাবে সরকার চলছে, তা নিয়েই প্রবল আপত্তি রয়েছে বিক্ষোভকারীদের। এখন সরকারি আধিকারিকদের সব পদ-ই শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের জন্য সংরক্ষিত। এবং এই সব আধিকারিকের অধিকাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত। গত বছর ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি আশ্বাস দিয়েছিলেন, দুর্নীতি রুখতে কড়া পদক্ষেপ করবেন তিনি। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোও ঢেলে সাজানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন, অতি ধনীদের সঙ্গে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের এই আকাশ-পাতাল তফাত থাকবে না।
যদিও সেসব আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। আর তারই ফলে অসন্তোষ দানা বাঁধতে বাঁধতে বিশাল বিক্ষোভের আকার ধারণ করেছে। সেই বিক্ষোভের নতুন প্রকাশ, সাদুন টানেলের গা-জোড়া গ্রাফিটি। এই টানেলটি আসলে বিশাল এক আন্ডারপাস। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখান দিয়ে যাতায়াত করেন। সেই প্রাচীরের গায়েই অসংখ্য ছবি ও গ্রাফিটি এঁকেছেন ছাত্রছাত্রীরা, যাদের অধিকাংশই মেডিকেল পড়ুয়া। হায়দার মহম্মদ নামে এক ছাত্রের কথায়, ‘‘আমরা হয় তো পথে নেমে বিক্ষোভে অংশ নিতে পারছি না। কিন্তু এই ছবি এঁকে আমাদের আন্দোলনকারী ভাইদের বার্তা দিতে চাই যে, আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি। আমরাও পরিবর্তন চাই।’’