ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৮ সালে কয়েকজন মার্কিন কূটনীতিককে চীনের ওই গবেষণাকেন্দ্রে সফরে পাঠানো হয়েছিলো। তারা ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে ওই গবেষণাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়
করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীন যেভাবে মোকাবেলা করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
চীনে মৃতের সংখ্যা নিয়ে এবং চীন কত দ্রুত তা মোকাবেলা করেছে বা অন্য দেশগুলোকে কত দ্রুত এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করেছে সন্দেহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনও।
তবে অন্যদিকে, চীনের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ফিনানসিয়াল টাইমস পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ বলেন, চীন এই সঙ্কট অন্যদের থেকে ভালভাবে মোকাবেলা করেছে এটা বলা "অজ্ঞতা" হবে। তিনি বলেছেন, "কী ঘটেছে তা আমরা আসলে জানি না।"
চীন থেকে এই ভাইরাস ছড়ালেও চীনের চেয়েও বেশি মানুষ মারা গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে।বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষের এবং মারা গেছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার। সবেচয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনের জনগণ।
চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কী?
যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেন চীনের দেওয়া পরিসংখ্যান ও তাদের ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে দাবি তোলায় সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চীন থেকে এই ভাইরাস কীভাবে বাইরে এভাবে ছড়ালো তা "গভীরভাবে অনুসন্ধান" করতে হবে এবং এই সঙ্কটের পর "সব লেনদেন আগের মতই" চালানো যাবে না।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
বুধবার ট্রাম্পকে সংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এত মানুষের মৃত্যুর কী ব্যাখ্যা তিনি দেবেন? তিনি উত্তরে চীনের নাম করে বলেন, "অন্য দেশের পরিসংখ্যান কি আসলেই মানুষ বিশ্বাস করে?"
এদিকে, ফক্স নিউজ অজ্ঞাত কিছু সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে উহানের একটি গবেষণাকেন্দ্র থেকে এই ভাইরাস দুর্ঘটনাবশত বাইরে বেরিয়ে গেছে, কারণ ওই কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বলতা ছিল।
ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্র কূটনৈতিক তারবার্তা থেকে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হচ্ছে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু কূটনীতিককে চীনের ওই গবেষণাকেন্দ্রে কয়েকবার সফরে পাঠানো হয়েছিল। ওই কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনকে দু’বার হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল যে ওই গবেষণাগারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহী ছিল বলে মঙ্গলবার জানান আমেরিকার যৌথ স্টাফ প্রধানদের একজন জেনারেল মার্ক মিলি।
তিনি বলেন, "আমরা এবিষয়ে অনেক গোয়েন্দাতথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। আপাতত এটু্কুই বলতে চাই যে তার থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছন যায়নি। যদিও প্রাপ্ত তথ্য ইঙ্গিত দিয়েছিল সেখানে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে না। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।"
চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘাত কেন?
ফ্রান্সে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার। আর উহান শহরে শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) আরও ১,২৯০ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করায় চীনে এখন মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪,৬৩২ জন। উহানেই এই মহামারির শুরু এবং অতি সম্প্রতি সেখানে জারি করা কঠোর লকডাউনও তুলে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন তাদের পরিসংখ্যান আসতে সময় লেগেছে এবং আগের পরিসংখ্যান সঠিক ছিল না। মৃতের সংখ্যা গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ক্ষোভের কারণ এই ভাইরাস মোকাবেলায় পশ্চিমা সরকারগুলোর ভূমিকা নিয়ে চীনের এক নিবন্ধ।
চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে লেখা হয়েছে, পশ্চিমের দেশগুলোতে যেসব বৃদ্ধনিবাস রয়েছে সেখানে বয়স্কদের মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে দিচ্ছে এবং তাদের সেখানেই মরতে দিচ্ছে।
এই নিবন্ধ প্রকাশের পর এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্যারিসে চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ফ্রান্সে এসব বৃদ্ধনিবাস বা কেয়ার হোমে কোভিড নাইনটিনে যারা মারা গেছেন তাদের সংখ্যা বিশাল। দেশটিতে মোট মৃতের এক-তৃতীয়াংশই কেয়ার হোমের বৃদ্ধ বাসিন্দা।
ব্রিটেনেও কেয়ারহোমে যেসব বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে মারা যাচ্ছেন তাদের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত না করায় সরকারকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে।
চীন অবশ্য এই বিতর্ককে "ভুল বোঝাবুঝি" বলে নাকচ করে দিয়েছে। সরকারি মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন ফ্রান্স কীভাবে এই মহামারির মোকাবেলা করছে সেবিষয়ে চীন কখনই কোনও নেতিবাচক মন্তব্য করেনি।
ম্যাক্রোঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল চীন ভাইরাস ঠেকাতে যে কঠোর কর্তৃত্বমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল তা পশ্চিমা দেশগুলোর গণতন্ত্রের দুর্বলতাকে সামনে এনে দিয়েছে কিনা। উত্তরে তিনি বলেছেন, মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা আর অন্যদিকে যে সমাজ ব্যবস্থায় সত্য চাপা দেওয়া হয়, এই দু’য়ের মধ্যে কোনও তুলনা চলে না।
মতামত দিন