বিস্ফোরণের আঘাতে বহুতল ভবনের বিচ্ছিন্ন অংশ রাসেলের উপর এসে পড়লে সে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়
একটু সচ্ছলতার আশায় ২০১৫ সালে রাসেলকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে নিয়ে যান বড়ভাই সাদেক আলী। সেখানে রাসেল তার বড় ভাইয়ের সাথে একই পেট্রোল পাম্পে কাজ করতো। গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় রাসেল বিস্ফোরণস্থলের খুব কাছেই ওই পেট্রোল পাম্পে কাজ করছিল।
বিস্ফোরণের আঘাতে বহুতল ভবনের বিচ্ছিন্ন অংশ রাসেলের উপর এসে পড়লে সে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। অন্যদিকে, সেই সময় রাসেলের বড় ভাই সাদেক আলীও বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তার মাথায় ৩৬টি সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়। পরে আহত সাদেক আলীসহ সেখানে থাকা অবস্থানরত স্বজনেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার কাইয়ুমপুরে গ্রামের বাড়িতে খবর দিলে শুরু হয় শোকের মাতম।
নিহত রাসেলের মা পারুল আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন, মূর্ছা যাচ্ছিলেন বার বার। কখনো বা বাকরুদ্ধ হয়ে পকুর পাড়ে রাসেলের ছবি নিয়ে বসে থাকছিলেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হলে তিনি যে কোনো মূল্যে সন্তানের লাশ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন পারুল আখতার। এদিকে দেশে থাকা রাসেলের অপর ভাই লিয়াকত আলী বাকরুদ্ধ, আবার কখনো কখনো উচ্চস্বরে কেঁদে উঠছিলেন।
এদিকে, বিস্ফোরণে আহত হয়ে লেবাননের হাসপাতালের চিকিৎসা নিচ্ছেন একই উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের গাববাড়ী গ্রামের একই পরিবারের চারজন। আহতদের মধ্যে একজনের নাম কবীর হোসেন ভূইয়া।
আরও পড়ুন - বৈরুতে বিস্ফোরণ: নিহত ৩ বাংলাদেশি, আহত নৌবাহিনীর ২১ সদস্য
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থানরত তার পরিবারের সদস্যদের জানান, বিস্ফোরণের সময় তারা একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন। বিস্ফোরণে তাদের ভবন কেঁপে ওঠে। এ সময় জানালার কাঁচসহ পাশের ভবনের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে তারা আহত হন।
আহতরা হলেন- কবীর হোসেন ভূইয়ার ছোট ভাই সুমন ভূইয়া, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, শিশু কন্যা সামিরা আক্তার ও ভাগিনা শাওন ভূইয়া। তারা সবাই বৈরুতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার বিকালে বৈরুতের বন্দর এলাকার পরপর দুটি বিস্ফোরণে পুরো শহরটি ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ।
এই বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নৌবাহিনীর ২১ সদস্যসহ প্রায় ১০০ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই জনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। রাসেল ছাড়াও নিহত অপর ব্যক্তি হচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রনি।
মতামত দিন