বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছিলেন যে ভাইরাসটি ওই বাজারে বিক্রি হওয়া বন্যপ্রাণী থেকে এসেছে। তখন থেকে বাজারটি অধিকাংশ অংশ বন্ধ রয়েছে
মধ্য চীনের উহান শহরে বৃহস্পতিবার পৌঁছানো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি কোভিড-১৯ মহামারির উৎপত্তির সূত্র খুঁজে পাওয়ার আশায় রয়েছেন।
এ সফর ঘিরে রয়েছে গোপনীয়তার চাদর। দলটি আসলে কী করবে বা কোথায় যাবে তা চীন কিংবা ডব্লিউএইচও কেউ খোলাসা করেনি। মহামারির উৎপত্তিটির সন্ধানে চালানো প্রচেষ্টা বহু বছর ধরে চলতে পারে এবং তা হয়তো ভবিষ্যতের মহামারি রোধে সাহায্য করবে।
উহানে কেন?
ইয়াংজি নদীর তীরের এ শিল্প ও পরিবহন কেন্দ্রটি হলো প্রথম স্থান যেখানে বিশ্বের মাঝে প্রথম করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছিল। এটা সম্ভব যে ভাইরাসটি অশনাক্ত কোনো জায়গা থেকে উহানে এসে থাকতে পার। তবে, উৎপত্তির সন্ধান শুরু করার জন্য এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার এ শহরটি এক যৌক্তিক জায়গা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষজন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাদের অনেকেরই জীবন্ত প্রাণী বিক্রি করা এক খাবারের বড় বাজারে যাতায়াত ছিল। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকলে চীনা কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়ে ওঠে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয় অনুসন্ধানকারী দল।
গত বছরের মার্চে নিয়ন্ত্রণে আনার আগে ভাইরাসটি উহানে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায়। স্বল্প বা কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই শহরটি ২৩ জানুয়ারি অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। দীর্ঘ ৭৬ দিন পর ৮ এপ্রিল যখন অবরোধ তুলে নেয়া হয় ততদিনে শহরের বাসিন্দাদের পোহাতে হয় কঠিন পরিস্থিতি আর প্রাণ যায় অনেকের। তবে সফলভাবে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ তাদের জন্য বয়ে আনে গর্বের উপলক্ষও।
গবেষক দলের কর্মসূচি কী?
প্রথমে তারা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এ সময়ে তারা চীনা সহকর্মীদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজ করবেন। কোয়ারেন্টাইন শেষে তাদের সম্ভাব্য সফরের জায়গা হবে হোয়ানান সিফুড মার্কেট (২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এখানেই গুচ্ছ সংক্রমণ দেখা দেয়) এবং উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।
বিজ্ঞানীরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছিলেন যে ভাইরাসটি ওই বাজারে বিক্রি হওয়া বন্যপ্রাণী থেকে এসেছে। তখন থেকে বাজারটি অধিকাংশ অংশ বন্ধ রয়েছে। তবে এ থেকে সূত্র পাওয়া যেতে পারে যে ভাইরাসটি কীভাবে এত দ্রুত ছড়িয়েছে। বাজারটিতে হয়ত এখনও নমুনা পাওয়া যাবে। সেই সাথে ঘটনার শুরুর দিকে যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের বক্তব্যও মিলবে।
উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে বাদুরের করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের এক বিশাল আর্কাইভ রয়েছে। এ আর্কাইভটি ২০০৩ সালে চীন থেকে বহু দেশে ছড়িয়ে পড়া সার্স মহামারির সময় গড়ে তোলা হয়েছিল। ডব্লিউএইচও গবেষক দলের সদস্যদের আশা রয়েছে যে তারা সেখানকার পরীক্ষাগারে প্রবেশ এবং নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের নিরাপত্তা বিধি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
গোপনীয়তা কেন?
বাইরের স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। বিশেষজ্ঞ দলের সফরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চীনের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে সম্প্রতি ধৈর্যচ্যুতি প্রকাশ করেন ডব্লিউএইচও প্রধান।
ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি দৃঢ়ভাবে তথ্যগুলো ধরে রেখেছে বিশেষ করে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত তথ্যের সম্ভাব্য উদ্ঘাটন নিয়ে যা দেশটিকে আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবির মুখে ফেলতে পারে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে স্বতন্ত্র প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ না করা ছাড়াও করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে নিজেদের অনুসন্ধান সম্পর্কেও বেশি তথ্য প্রকাশ করেনি চীন।
এপি’র এক তদন্তে দেখা গেছে, চীন সরকার প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত সকল বৈজ্ঞানিক গবেষণা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং গণমাধ্যমের সাথে গবেষকদের কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
তবে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হচ্ছে, ভাইরাসটি বিশ্বের অন্য কোথাও উৎপন্ন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের চীন সফরের ঘোষণা দেয়ার সময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, “ভাইরাসের উৎস শনাক্তকরণে সম্ভবত একাধিক দেশ বা এলাকা জড়িত থাকবে।”
মতামত দিন