সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি গণমাধ্যমে প্রচারিত ‘গোপন ধারণকৃত’ একটি তথ্যচিত্রে এ বিষয়টি উঠে আসে
চীনের উহানে করোনাভাইরাস যখন মহামারিতে রূপ নিয়েছে তখন থেকেই এ ভাইরাসটি সারা বিশ্বের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা জানতেন চীনের চিকিৎসকরা। তবে তাদেরকে এ বিষয়টি গোপন রেখে মিথ্যা বলার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১৯ জানুুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম আইটিভিতে প্রচারিত তথ্যচিত্রে এ বিষয়টি উঠে আসে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অপর এক ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল। চীনের এক সাংবাদিক গোপনে ভিডিওটি করেন বলেও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
ভিডিওটি দেখা গেছে, উহানের চিকিৎসা পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বার মাস থেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রাণহানির কথা জানতেন তারা, তবে চীন জানুয়ারির মাঝামাঝি প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (WHO) এ ব্যাপারে অবগত করে।
ভিডিওটিতে আরও দেখা যায়, তারা বুঝতে পেরেছিলেন ভাইরাসটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করেছে কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে “সত্য গোপন” রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এমন পরিস্থিতে চীনা নববর্ষ উৎযাপন বাতিলের আহ্বান জানালেও তা নাকচ করে দেওয়া হয় কারণ চীন চেয়েছিল বিশ্বের কাছে “ঐকিক ও সমৃদ্ধশালী দেশ” হিসেবে উপস্থাপন করতে।
উহানের ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি প্রকাশের কয়েকদিনের মাঝেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সমর্থিত একটি প্যানেল করোনাভাইরাস ও মহামারি বিষয়ে বেইজিংক এর ধীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
চীন করোনাভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ সম্পর্কে বিশ্বকে মিথ্যে বলেছে এবং তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে, ভিডিওটি এমন অভিযোগকে আরও জোরদার করে তুলেছে।
উল্লেখ্য, চীন ৩১ ডিসেম্বার, ২০১৯ সালে প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে একটি “অজানা রোগ” সম্পর্কে অবগত করে এবং জানুয়ারি মাঝামাঝি কোন প্রাণহানি হয়নি এমন রিপোর্ট দেয়।
২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল যে মানবদেহে মানুষ থেকে মানুষের সংক্রামণের কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই । কিন্তু একজন চীনা স্বাস্থ্যকর্মী জানান যে ভাইরাসটি যে মানুষের মধ্যে মানুষে সংক্রমণ ঘটিয়েছে এ ব্যাপারটি তারা অনুভব করেছে এবং এ সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে কারও মনে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আরেকজন স্বাস্থ্যকর্মী জানান তারা জানতেন ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিল তবে হাসপাতালে একটি মিটিং এর মাধ্যমে এ ব্যপারে কথা বলতে নিষেধ করেছিল দেশটির প্রাদেশিক নেতাবৃন্দ।
চীনের স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন বিবৃতিকে সমর্থন জানিয়েছেন তাইওয়ানের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের উপ-মহাপরিচাল্ক ডা. ই-চুন লো সহ শীর্ষস্থানীয় ভাইরাওলজিস্টরা। ডা. ই-চুন লো বলেন ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিক থেকেই তা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে ব্যবস্থাপনা ছিল নড়বড়ে। তিনি মনে করেন, শুরু থেকেই ভাইরাসটির সংক্রমণরোধ সম্ভব ছিল যদি চীন স্বচ্ছতার সাথে পুরো বিশ্বকে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিত।
ডকুমেন্টারিটিতে তাইওয়ানের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও চিকিত্সা নেটওয়ার্কের সদশ্য ডা. ইয়িন-চিং চুয়াং বলেন, “তিনি এবং তার দলটি মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে কিনা তা জানার জন্য মরিয়া চেষ্টা করেছিল। তিনি আরও বলেন সংক্রমণের মাত্রা ও আক্রান্তদের সংখ্যা সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মীরা জানতেন না। এটি কেবলই তারা জানত।”
চীন সরকার এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও বেইজিং বারবার এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন চীনের বিরুদ্ধে একটি সুষ্ঠ তদন্তের আহ্বান জানায়। উভয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনার ভিত্তিতে ডাব্লুএইচও বিশেষজ্ঞদের একটি দল এই রোগের উদ্ভবের তদন্ত করতে চীনে একটি পৃথক, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মিশন পরিচালনা করেছে।
গত শুক্রবার, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট দাবি করেছে যে ইনস্টিটিউটের কিছু গবেষকদের মধ্যে প্রকোপটি প্রকাশের আগে কয়েক সপ্তাহপুর্বে কোভিড -১৯ লক্ষণ দেখা দিয়েছিল।
চীন, তার পক্ষ থেকে, এই ধারণাটি প্রচার করেছে যে ভাইরাসটি এর সীমান্তের মধ্যে একেবারেই উদ্ভব হয়নি তবে অন্য কোথাও থেকে দূষিত সামুদ্রিক খাবারের মাধ্যমে এসেছে।
মতামত দিন