বীভৎস রূপ ধারণা করেছে ভারতের দিল্লির সহিংসতা। দেশটির সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধীতাকারীদের বিক্ষোভ এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। দিল্লির চলমান সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংঘর্ষ চলাকালে দিল্লির ভজনপুরা এলাকায় একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এএফপি
সিএএ'র বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিনবাগে টানা দুই মাস ধরে বিক্ষোভ চলছিলো। স্থানীয় প্রশাসন ওই অবস্থানের জের ধরে বন্ধ হওয়া সড়ক খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। পরে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে জাফরাবাদ মেট্রোস্টেশনে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় আগুনে ঘি ঢালেন দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। তিনি পরদিন রবিবার দুপুর ৩টায় শহরের মৌজপুর চকে সিএএ সমর্থকদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানালে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। তাণ্ডব চালানো হয় মসজিদসহ মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাগুলোতে।
নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ চলাকালে একটি মসজিদে আগুন দেওয়া হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা কুরআনের পৃষ্ঠাগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এএফপি
দুষ্কৃতকারীদের তাণ্ডব ঠেকাতে সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এর জের ধরে মঙ্গলবার মধ্যরাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনের বাইরে জড়ো হন বহু মানুষ, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিক্ষার্থী।
সিএএ নিয়ে সহিংসতার জের ধরে এক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়। রয়টার্স
তাদের দাবি, উত্তর-পূর্ব দিল্লির যে যে এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়েছে, অবিলম্বে সেখানে যেতে হবে কেজরিওয়ালকে। স্থানীয় বিধায়কদের শান্তি মিছিল বার করতে নির্দেশ দিতে হবে, যাতে দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এ সময় রাজধানীতে সহংসতায় ইন্ধনকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে বলেও দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।
মুসলিমদের একটি মাজারের দিকে পেট্রোল বোমা ছুড়ছেন একজন সিএএ সমর্থক। রয়টার্স
সহিংসতায় আক্রান্তরা সঠিক চিকিৎসা পরিসেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। উদ্ধারকাজ চালাতে তাই সরকারকে পদক্ষেপ করার আবেদনও জানানো হয়। পাশাপাশি শান্তি ফেরাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা-ও সাধারণ মানুষকে জানানোর দাবি ওঠে।
পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন সিএএ বিরোধী এক নারী। রয়টার্স
বুধবার ভোররাত পর্যন্ত কেজরিওয়ালের বাসভাবনের সামনে বিক্ষোভ চলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের বিশাল বাহিনী নামানো হয়। আলোচনার মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। শেষমেশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। তাতে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংঘর্ষের জের ধরে একটি টায়ার মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রয়টার্স
এই বিক্ষোভ নিয়ে কেজরিওয়ালের কার্যালয় থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। তবে মঙ্গলবারই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে একদফা বৈঠক করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। শান্তি ফেরাতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। তার আগে অমিত শাহের ডাকা বৈঠকেও যোগ দেন কেজরিওয়াল।