জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে রক্ষায় বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় “মিডনাইট সার্ভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট” শীর্ষক ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের (জিসিএ) সভাপতি বান-কি মুন এবং সিভিএফের সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জনগণের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় “মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা” নামে একটি নতুন কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন,“আমাদের এটাও নিশ্চিত করা উচিত যে, উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রশমন, অভিযোজন এবং দুর্যোগ সামাল ও পুনরুদ্ধারের জন্য বছরে অন্তত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যেন পেতে পারে।”
বিশ্বেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষায় শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের জন্য চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বর্তমান হারকে হ্রাস করার একমাত্র উপায়।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির আওতায় সরকারগুলোকে তাদের জাতীয় অবদানকেই কেবল সম্মান জানানো উচিত নয়, তাদের আকাঙ্ক্ষাও যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার। জলবায়ু ন্যায়বিচারের ধারণাটি জলবায়ু এবং পৃথিবীর স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি এমডিবি এবং আইএফআই-সহ বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে (উন্নত দেশগুলো) অর্থের আরও জোরদার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিকে চিহ্নিত ও মূলধারায় আনতে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড এটাই প্রকাশ করে যে, আমরা সচেতনভাবে জরুরি সহযোগিতার মাধ্যমগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছি যা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। কাজেই পৃথিবীকে বাঁচাতে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় আজই, আগামীকাল নয়।”
বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরামের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হওয়াটা সম্মানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিভিএফ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
শেখ হাসিনা বলেন, “সভাপতি হিসাবে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে, অর্থায়ন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করা এবং জলবায়ু সহনশীলতার আখ্যানগুলো এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে জাতিসংঘে বিশেষ ‘র্যাপোটিয়ার’ নিয়োগ এবং একটি সিভিএফ এবং ভি২০ যৌথ মাল্টি-ডোনার তহবিল গঠনের ওপরও গুরুত্ব দেব।”
জার্মান ওয়াচের জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি সূচক ২০১৯ অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে।
এই তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার দেশ এই বর্ষায় বারবার বন্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি এবং বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করেছে। গত মে মাসে সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাব এবং বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার নিয়েছে।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনি বলেন, “মিয়ানমার থেকে আগত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ায় তারাও মারাত্মক সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির কারণ হচ্ছে।”