ভূগোল ও ইংরেজিতে পৃথকভাবে মাস্টার্স পাস করা শবনম খের ছিলেন নিজ গ্রামের একটি কলেজের শিক্ষক। তার আপন চাচার ভাষায় অত্যন্ত নম্র, বিনয়ী ও পিতামাতার বাধ্যগত সন্তান শবনম।
কিন্ত এই শান্ত মানুষটির প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় ২০০৮ সালে নিজ পরিবারের ৭ সদস্যকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন করেন এবং তাদেরকে গলা কেটে হত্যা করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন তার বাবা, মা, দুই ভাই, ভাইদের স্ত্রী এবং ৯ মাস বয়সী ভাতিজা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শবনম ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন শবনম।
পুলিশের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ৭ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা শবনম প্রথমে ঘুমের ঔষধ মেশানো দুধ পান করিয়ে পরিবারের সদস্যদের অচেতন করেন। এরপর তার প্রেমিক সেলিমকে ডেকে আনেন এবং দুজনে মিলে কুড়াল দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন পরিবারের ৬ সদস্যকে।
কাজ শেষে সেলিম বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর হঠাৎ ৯ মাসের ভাতিজার কান্না শুনে চমকে উঠেন শবনম। উপায় না দেখে অন্ধকার ঘরে দু’পায়ের ফাঁকে টর্চ আটকে, ৯ মাসের শিশুটির মুখ চেপে ধরে ছুরির আঘাতে হত্যা করেন তিনি।
শবনমের পরিবারের অপরাধ, ষষ্ঠ শ্রেণি পাস দিনমজুরের কাছে তাদের দুই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি।
হত্যার ভয়াবহতায় শিউরে উঠেছিল উত্তরপ্রদেশের আমরোহার বাওয়ানখেড়ি গ্রাম। সেই ঘটনার প্রভাব এতটাই ভয়ংকর যে আজও ওই গ্রামে কোনও শিশুর নাম শবনম রাখা হয় না।
বর্তমানে শবনমের বাড়িতে থাকেন তার চাচা সাত্তার আলি ও চাচী ফাতিমা। শবনমের ফাঁসির প্রসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, ভাইঝির বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই।
শবনমের চাচী ফতিমা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘সৌদি আরবে এ ধরনের অপরাধীদের সঙ্গে যেমন নৃশংস শাস্তি দেওয়া হয়, ওদেরও তা-ই হওয়া উচিত।’’
তবে এ বিষয়ে সেলিমের মায়ের কোনো বক্তব্য নেই বলে জানিয়েছেন। জেলে জন্ম নেয়া শবনম-সেলিমের একমাত্র ছেলে বর্তমানে শবনমের সাবেক সহপাঠীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
২০১০ সালে শবনম এবং সেলিম, দু’জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রদান করেন আমরোহার দায়রা আদালত। সাজা মওকুফের গত ১১ বছরে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন শবনম।
কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় উচ্চ আদালত। বিচারবিভাগীয় কমিটির কাছে আবেদনটি পুনর্বিবেচনা করে দেখা এবং কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করার উপায় এখনও শবনমের হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সব আইনি দরজা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত শবনমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না।
অপরদিকে শবনমের ফাঁসি কার্যকর করার দিন ক্ষণ এবং সময় ঠিক করতে আমরোহা দায়রা আদালতে ইতোমধ্যেই আবেদন জমা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৫০ বছর আগে তৈরি ভারতে শুধুমাত্র মথুরার জেলেই নারীদের ফাঁসি দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম ভারতে কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে।
মথুরা জেলের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট শৈলেন্দ্র মৈত্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ফাঁসিকাষ্ঠের মঞ্চে কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে। বিহারের বক্সার জেল থেকে ফাঁসির দড়ি চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
জেল জল্লাদ পবন সবকিছু পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর পরোয়ানা তাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন শবনমের আইনজীবীরা।