দুইদিন ধরে মৃত মায়ের পাশে পড়ে ছিল ১৮ মাসের অভুক্ত শিশু, তবে করোনাভাইরাসের ভয়ে শিশুটিকে কেউ উদ্ধার করতে যায়নি। সম্প্রতি এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ভারতের পুণেতে।
আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, পুণের পিমরি চিঞ্চবাড় এলাকার বাসিন্দা ওই নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এমন সন্দেহ করেই তার সাহায্যের জন্য ছুটে যাননি কোনও পাড়াপড়শি।
পুলিশ জানায়, সোমবার ওই নারীর ঘর থেকে দুর্গন্ধ বার হতে দেখে শেষমেশ প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ওই মহিলার দেহ নিয়ে যায়। এসময় তান শিশুসন্তান একাই ঘরে পড়ে ছিল। তার স্বামী উত্তরপ্রদেশের কাজের খোঁজে যান বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের অনুমান, গত শনিবার ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক সময় জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, ওই মহিলা আদৌ কোভিড পজিটিভ ছিলেন কি না, তা-ও বোঝা যাবে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে প্রতিবেশীদের কেউ ওই শিশুটিকে কোলে নিতে চায়নি। যদিও মহিলার দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়েছেন মহিলা কনস্টেবল সুশীলা গোভলে এবং রেখা ওয়াজে।
সুশীলা বলেন, “আমারও তো দু’টো বাচ্চা রয়েছে। একজন ৮ আর অন্যজন ৬ বছরের। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হল যেন আমার নিজের। বাচ্চাটার এত খিদে পেয়েছিল যে চটপট দুধ খেয়ে নিয়েছে।”
সুশীলার সহকর্মী রেখা জানিয়েছেন, ওই নারীর কোভিডে মৃ্ত্যু হয়েছে সন্দেহ করা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে বাচ্চাটি প্রায় সুস্থই রয়েছে। তবে সামান্য জ্বর থাকায় সরকারি হাসপাতালে বাচ্চাটির কোভিড টেস্ট করানো হয়েছে।
রেখা বলেন, “বাচ্চাটিকে ডাক্তার দেখানোর সময় ওর একটু জ্বর ছিল। ডাক্তার ওকে ভাল করে খাওয়াতে বলেছেন। আমরা জল আর বিস্কুট খাওয়ানোর পর বাচ্চাটি ভালই রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কোভিড টেস্টও করিয়েছি।”
পুণে পুলিশের অপরাধ দমন শাখার ইনস্পেক্টর প্রকাশ যাদব জানিয়েছেন, বাচ্চাটির রিপোর্টে করোনা ধরা পড়েনি। আপাতত তাকে সরকারি ক্রেশে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। পুরো দেশই যেন মৃত্যুপুরী। অক্সিজেন না পেয়ে তিলে তিলে মৃত্যু যেন স্বাভাবিক একটি ঘটনাতে রূপান্তরিত হয়েছে। মহারাষ্ট্রের পুণের এই ঘটনায় অতিমারির ভয়াল ছবিটা ফের ফুটে উঠল।