ইন্দোনেশিয়ার নারী পুলিশ নিয়োগে কিছু অদ্ভুত অবমাননাকর শর্ত জুড়ে দিয়েছে দেশটির সরকার। পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে নারী প্রার্থীদের কুমারীত্ব পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এমন শর্ত পুরুষতান্ত্রিক আচরণের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে অনেকেই নিন্দা জানিয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগের জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে যে, পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করতে হলে নারী প্রার্থীদের অবশ্যই কুমারী হতে হবে। কেবল কুমারীত্ব পরীক্ষায় উতরালেই শেষ নয়, প্রার্থীকে হতে হবে ‘দৃষ্টিনন্দন’।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পরপরই তা ভাইরাল হয়েছে ইন্টারনেটে। তারপর থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এধরনের পরীক্ষাকে নৈতিকতাবিরোধী শারীরিক পরীক্ষাও বলা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীতে যোগদানে আগ্রহী নারীদের ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নামের একটি মধ্যযুগীয় বর্বর ও অপমানজনক এই পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। যার মাধ্যমে নারীটির কুমারীত্ব যাচাই করা হবে।
ইন্দোনেশিয়ায় এমন আপত্তিকর শর্ত আরোপের পর থেকে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মুখপাত্র আন্দ্রে হারসোন জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ বাহিনীর মতে যৌন জীবনে স্বক্রিয় নারীদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। এটা নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় বড় প্রতিবন্ধকতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্দোনেশিয়ান এক নারী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, এ বছরের শুরুতে পুলিশের নারী অফিসার হিসেবে যোগদান করতে এই পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন, তার "টু ফিঙ্গার টেস্ট" টি রেজিস্টার্ড কোনো চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত হয়নি। অভিযোগকারী নারীটি বলেন, "এই পরীক্ষাটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক ছিল। আমি কাঁদছিলাম ... পুরো মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো যে এর থেকে মৃত্যুও সহজ।"
আদিমযুগীয় "টু ফিঙ্গার টেস্ট" নিয়ে এর আগেও বিশ্বজুড়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। অনেকের মতেই এই পরীক্ষাটি অবৈজ্ঞানিক ও অশোভনীয়।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এধরনের পরীক্ষা নারীর জন্য যৌন হয়রানির সমার্থক।
পুলিশ বাহিনীর মতো ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীতেও নারী সদস্য নিয়োগে এমন পরীক্ষা করা হয়। আর এ পরীক্ষাকারীদের ৭০% চিকিৎসকই পুরুষ।