ভারতের বারানসির জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে পাওয়া শিবলিঙ্গের জায়গাটি সিল করে দিতে হবে। একই সঙ্গে সেখানে নামাজ পড়া চলবে বলে রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
এর আগে বারানসির আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন, মসজিদ চত্বরের অজুখানা ও তহখানা সিল করে দিতে হবে। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনারকে। সুরক্ষার দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ করতে হবে সিআরপিএফের কমান্ডান্ট পর্যায়ের অফিসারকে।
আদালতের নির্দেশে জ্ঞানবাপী মসজিদে ভিডিও সমীক্ষা করা হয়েছিল। তখনই ওজুখানায় শিবলিঙ্গ পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরনো ফোয়ারার এলাকায় শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। এরপরই বারানসির আদালত পুরো এলাকা সিল করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে যায় অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ এই নিয়ে চারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন। এক- যেখানে শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে, সেই জায়গা সিল করা হবে। দুই- আগের মতোই নামাজ পড়া যাবে। তিন- বারানসির আদালত নিযুক্ত কমিশনার অজয় মিশ্রকে সরিয়ে দেওয়া হবে। চার- ভিডিওগ্রাফির রিপোর্ট পেশ করার ক্ষেত্রে আরো দুই দিন সময় দেওয়া হবে। ১৯ মে পরবর্তী শুনানি হবে।
বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের নির্দেশ, জ্ঞানবাপী মসজিদে গিয়ে কেউ যেন নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে বাধা না পায়। জেলাশাসক বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
কমিশনারকে কেন সরানো হলো?
বিচারপতিরা জানিয়েছেন, কমিশনার সহযোগিতা করেননি। তিনি তার দায়িত্ব পালন করেননি এবং তিনি একজন বেসরকারি ব্যক্তি, যিনি সমীক্ষার রিপোর্ট মিডিয়ার কাছে ফাঁস করে দেন। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
বারানসির আদালতের নির্দেশে তিনদিন ধরে জ্ঞানবাপী মসজিদ এলাকায় সমীক্ষা চালানো হয়। মঙ্গলবারের মধ্যে তিন সদস্যের সমীক্ষক দলের রিপোর্ট পেশ করার কথা ছিল।
অপসারিত কমিশনার অজয় সিং জানিয়েছেন, অর্ধেক রিপোর্ট তৈরি হয়ে গেছে। বাকিটা আইনজীবী বিশাল সিং শেষ করবেন। তার অভিযোগ, বিশালের জন্যই তাকে কমিশনারের দায়িত্ব হারাতে হলো।
প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য বলেছেন, “শিবলিঙ্গ নিচে ছিল, নাকি নিচে রাখা হয়েছিল, সেটা বলতে পারব না। ঘটনা হলো, শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। সেটাও সোমবার বাবার দিনে পাওয়া গেছে।”
এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, “জ্ঞানবাপীর মসজিদ ছিল এবং থাকবে। কেউ তার কিছু করতে পারবে না। মুসলিমরা আর কোনো মসজিদ হারাতে রাজি নন।”
মথুরায় মামলা
জ্ঞানবাপী ইস্যুর জেরে কৃষ্ণজন্মভূমি সংলগ্ন মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা চালানোর দাবি নিয়ে মামলা হয়েছে মথুরার আদালতে।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, মসজিদ চত্বরে হিন্দুদের কোনো মূর্তি বা ধর্মীয় লিপি আছে কি-না, তা দেখার জন্য এই সমীক্ষা করতে হবে। কয়েক দিন আগেই এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, মথুরায় কৃষ্ণজন্মস্থান-মসজিদ নিয়ে যত মামলা আছে, তার ফয়সালা চার মাসের মধ্যে করে ফেলতে হবে।