ইয়েমেনের প্রধান বন্দরনগরী হোদায়দহে আক্রমণ করেছে সৌদি জোট। তিন দিনের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ইয়েমেনের ঐ বন্দরটির নিয়ন্ত্রণ না ছাড়ায়, ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বুধবার (১৩ জুন) ‘গোল্ডেন ভিক্টরি’ নামে অভিযান শুরু করে এই জোট।
লোহিত সাগরে অবস্থিত হোদায়দহ বন্দরটি ইয়েমেনের যোগাযোগের প্রধান পথ। এ বন্দর নগরীটিতে আনুমানিক ৬ লাখ মানুষ বাস করেন। এখন সেখানে বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ বেঁধে গেলে মৃত্যু হতে পারে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। সে সঙ্গে লাখো মানুষের খাবার থেকে শুরু করে অন্যান্য সহায়তাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই বন্দরের মাধ্যমেই ইয়েমেনের ৮০ শতাংশ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইয়েমেনে সবচেয়ে বেশি মানবিক সংকট চলছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দেশটির ৮৪ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ-পূর্ব অবস্থায় বসবাস করছেন।
ইতোমধ্যেই হুথি নেতা মোহাম্মদ আলী আল হুথি লোহিত সাগর দিয়ে যাতায়াতকারী তেলবাহী জাহাজে হামলার হুমকি দিয়েছেন। বন্দর দখলের চেষ্টা না করার ব্যাপারে সৌদি জোটকেও সতর্ক করেছে।
এদিকে হোদায়দহ বন্দরে হামলা না চালানোর জন্য বিবাদমান দলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, বন্দর আক্রান্ত হলে ইয়েমেনিদের জন্য খাবার, জ্বালানী ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে দেশটিতে মহামরী আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে।
২০১৫ সালের পর এটিই সৌদি জোটের সঙ্গে হুথিদের সবচেয়ে বড় লড়াই। হুথিদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যেই মূলত যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ নিয়ে হামলা চালিয়েছে সৌদি জোট। শুধু সেীদি জোটই নয়, আরব আমিরাত সমর্থিত উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় দলের পাশাপাশি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ্’র ভাতিজার নেতৃত্বে থাকা একটি ব্যাটালিয়নও এই আক্রমনে সৌদি জোটের পক্ষ নিয়ে অভিযানে অংশ নিয়েছে।
অন্যদিকে কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বুধবার সকালে আক্রমণের শুরুতেই শহরে ৩০টির মতো বিমান হামলা হয়েছে। এ ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানিয়েছে, “আক্রমণ শুরু হওয়ার পর সেখানকার বাসিন্দারা শহরের উত্তর এবং পশ্চিমের রাস্তা ধরে পালিয়েছে।” দেশটিতে অবস্থানরত কেয়ার-এর ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জোলিন ভ্যালউইচেক জানিয়েছেন, “এখনও অনেক সাধারন নাগরিক নিজেদের ঘরে আটকা পড়ে আছেন, আবার অনেককে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম অবস্থা বেশি খারাপ হবে না। দূর্ভাগ্যবশত, এখন দেখা যাচ্ছে আমরা ভুল ভেবেছিলাম।”