আবার টুইটার কেনার প্রক্রিয়ায় ফিরে এসেছেন ইলন মাস্ক। গত এপ্রিলে যে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে চুক্তি হয়েছিল, সেই অঙ্কের মূল্যেই আবার মাইক্রো ব্লগিং সাইটটিকে কেনার কথা ভাবছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক।
সোমবার (৩ অক্টোবর) টুইটার কেনার প্রস্তাব দিয়ে কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ইলন মাস্ক। বিষয়টি গোপনীয় হওয়ায় মাস্কের আইনজীবীরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
টুইটার কর্তৃপক্ষ মাস্কের চিঠি পেলেও তার দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করেছে কি-না জানায়নি। তবে এক মুখপাত্র জানান, মাস্কের সঙ্গে হওয়া মূল অঙ্কে অর্থাৎ ৪৪ বিলিয়ন ডলারেই চুক্তিটি সম্পন্ন করার ইচ্ছা পোষণ করেছে টুইটার।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) এক টুইটে ইলন মাস্ক জানান, টুইটার কেনার মাধ্যমে এক্স নামে তার এভরিথিং অ্যাপ বানানোর বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে।
এদিকে, ইলন মাস্কের টুইটার কেনার খবরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মূল্য আবার বেড়েছে। মঙ্গলবার টুইটারের শেয়ারমূল্য বেড়ে ৪৭.৯৩ মার্কিন ডলারে হয়, যা আগের চেয়ে ১২.৭% বেশি। শুধু টুইটারই না, বেড়েছে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার শেয়ারদরও। আগের দিনের তুলনায় টেসলার শেয়ারমূল্য ১.৫% বেড়ে যায়।
টুইটার কিনতে সম্মত হওয়ার পর মাস্ক ইতোমধ্যেই টেসলার ১৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছেন। এছাড়া, টুইটারের মালিকানা নেওয়ার বিষয়ে সমর্থনের জন্য মরগান স্ট্যানলি, ব্যাংক অব আমেরিকা কর্প, মিতসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ ইনকর্পোরেটেড এবং বার্কলেজ পিএলসিসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সাড়ে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিও সুরক্ষিত করেছেন৷
যদিও টুইটার কেনা নিয়ে ইলন মাস্ক ও টুইটার কর্তৃপক্ষের মধ্যে কয়েক দফা কাদা ছোড়াছুঁড়িও হয়েছে। গত এপ্রিলে চার হাজার চারশ কোটি ডলারে টুইটার কেনার চুক্তি করেছিলেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। পরে জুনের শেষ দিকে তিনি সেই চুক্তি বাতিল করেন। চুক্তি থেকে সরে আসায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল টুইটার কর্তৃপক্ষ।
আগামী আগামী ১৭ অক্টোবর ডেলাওয়্যার রাজ্যের কোর্ট অফ চ্যান্সারিতে ৫ দিনের বিচারকাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে আইন অফিসে ব্যক্তিগতভাবে ইলন মাস্কের জবানবন্দি নেওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই টুইটার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে মাস্ক জানালেন, ডেলাওয়্যার বিচারক কার্যধারা স্থগিত করলে তিনি মূল শর্তে চুক্তিটি চালিয়ে যেতে চান।
যদিও আইনি লড়াই থেকে মাস্কের সরে আসার কারণটি এখনও অস্পষ্ট। তবে অনেকের ধারণা, টুইটারের দায়ের করা মামলায় ইলন মাস্কের জয়ের সম্ভাবনা কম ছিল বলেই আইনি লড়াই থেকে সরে এসেছেন মাস্ক। অনেকে অবশ্য তার নির্ধারিত জবানবন্দির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন।
এ বছরের এপ্রিলে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার কেনার চুক্তি করেন টেসলা ও স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ইলন মাস্ক।
চুক্তির ঘোষণা দিয়ে মাস্ক এক বার্তায় বলেছিলেন, “গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে বাক স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। টুইটার হচ্ছে ডিজিটাল নগর স্কয়ার যেখানে মানবতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবে। আমি টুইটারকে আরও গতিশীল করতে চাই। নতুন ফিচারসের পাশাপাশি এর অ্যালগোরিদম ওপেন সোর্সে দিতে চাই। এটি আস্থা বাড়াবে, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ করবে।”
তবে গত জুলাইয়ে টুইটার কেনার চুক্তি থেকে সরে আসেন মাস্ক। ভুয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নিয়ে টুইটারের বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি কেনার চুক্তি বাতিল করেন তিনি। পরে এটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সে সময় ইলন মাস্কের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, টুইটারের কাছে একাধিকবার ভুয়া বা স্প্যাম অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ তথ্য দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এ স্বচ্ছতাই একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার মূল দিক।
যেহেতু টুইটার ইতোমধ্যেই মাস্কের কাছে বিক্রির জন্য শেয়ারহোল্ডারদের সমর্থন পেয়েছে, তাই দুই পক্ষ মূল শর্তে মীমাংসা করলে আগামী সপ্তাহে চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে।