গত ২০ বছরের মধ্যে চলতি বছর প্রথমবারের মতো যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সংস্থাটি বলছে, বছরের পর বছর কমে যাওয়ার পর যক্ষ্মা রোগ ফিরে এসেছে। ২০২১ সালে এই রোগে ১.৬ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। দুই বছরে এই সংখ্যা ১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংক্রামক ঘাতক হিসাবে কোভিড-১৯ মহামারী যখন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে একইসময়ে যক্ষ্মায় ১.৫ মিলিয়ন ও ২০১৯ সালে এই রোগে প্রাণ হারিয়েছেন ১.৪ মিলিয়ন মানুষ।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর তেরেজা কাসায়েভা বলেন, এখন আসলে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুহূর্ত চলছে।
তিনি বলেন, প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ডব্লিউএইচও যক্ষ্মা ও ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি টিবি সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিবেদন করছে।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে অন্তত ১০.৬ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। যা ২০২০ সালের তুলনায় ৪.৫% বেশি।
গত বছর যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (৪৫%), আফ্রিকা (২৩%) ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (১৮%)।
কোভিড প্রভাব
ডব্লুিউএইচও এই রোগের পুনরুত্থানের জন্য কোভিডকে দায়ী করেছে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, এই প্রতিবেদনের অন্যতম বিষয় হল কোভিড-১৯ মহামারী টিবি নির্ণয় ও চিকিত্সা করতে গিয়ে যক্ষ্মার ওপর নজর দেওয়া হয়নি।
২০১৯ সাল পর্যন্ত যক্ষ্মার অগ্রগতি ধীর, স্থবির বা কমেছে।
গত দুই দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে বছরে প্রায় ২% করে যক্ষ্মা কমে আসার পর ২০২০-২০২১ সালে এটি ৩.৬% বেড়েছে।
যক্ষ্মা একটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এটিতে ফুসফুস ব্যাপক প্রভাবিত হয়। কোভিডের মতো, এটি সংক্রামিত ব্যক্তিদের দ্বারা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। উদাহরণস্বরূপ কাশির মাধ্যমে। এটি প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য।
ডব্লিউএইচও বলেছে, বিশ্বজুড়ে সংঘাত, বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট ও খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি পরিস্থিতির কারণে এই অবস্থার আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হল যক্ষ্মার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও বৃদ্ধির হারকে ২০১৯ সালের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা।
যক্ষ্মায় বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা আটটি দেশে বেশি। এগুলো হল- ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।
দীর্ঘদিনের খুনি
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবেদনে বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে ২০২০-২১ সালে এই প্রবণতাটি বিপরীত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মায় মৃত্যুর আনুমানিক বৃদ্ধির বেশিরভাগই চারটি দেশে ঘটেছে। সেগুলো হল- ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার ও ফিলিপাইন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর পরিবর্তে এটি একটি একক সংক্রামক হয়ে উঠবে যেটি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠবে।
যক্ষ্মা বিষয়ক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রধান মেল স্পিগেলম্যান বলেন, ইতোমধ্যে যক্ষ্মা একটি খারাপ পরিস্থিতিতে চলে গেছে।
ডব্লিউএইচও প্রধান প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস, মহামারী যদি আমাদের কিছু শিখিয়ে থাকে, তা হল সংহতি, সংকল্প, উদ্ভাবন ও সরঞ্জামের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার। আসুন সেই শিক্ষাগুলো যক্ষ্মায় প্রয়োগ করি। এই দীর্ঘকালীন হত্যাকারীকে থামানোর সময় এসেছে।