ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকায় একটি শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ শিশুসহ কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সরকারি ও চিকিৎসা সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানায়, বৃহস্পতিবার গাজা শহরের উত্তরে একটি বাড়িতে জ্বালানি সঞ্চয় করা হচ্ছিল সেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ইসরায়েল-অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি নিয়ন্ত্রণকারী হামাস ইসলামপন্থীরা বলেছেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জাবালিয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন। বাহিনীটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এতে কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন।
উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের জরুরি সেবা বিভাগের পরিচালক ডা. সালাহ আবু লায়লা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
স্থানীয় এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, এক রান্নাঘরের গ্যাস লিক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পাওয়া গেছে।
গাজার আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া একটি।
আগুনটিকে “বিশাল” বলে বর্ণনা করেছেন ডা. লায়লা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, পুরো ভবনজুড়ে আগুন জ্বলছে। পুড়তে থাকা ভবনের সামনে লোকজনকে চিৎকার করতে দেখা গেছে আর রাস্তায় থাকা হতাহতদের আত্মীয়-স্বজনরা কাঁদছে ও দোয়া-দরুদ পড়ছে।
ঘটনাস্থলে ছুটে আসা এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, জেনারেটর চালানোর জন্য শরণার্থী শিবিরের ওই বিল্ডিংটিতে পেট্রোল সংরক্ষণ করা হয়েছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, “এটা খুবই কঠিন, শিশু ও নারীরা আগুনে জ্বলছেন এবং তাদের বাঁচানোর সম্ভাবনা কম।”
নিরাপত্তা কর্মকর্তার মতে, নিহতদের পরিবারটি বিদেশ থেকে তাদের এক আত্মীয়ের ফিরে আসার ঘটনায় আনন্দ উদযাপন করছিল।
পশ্চিম তীর-ভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এটিকে জাতীয় ট্র্যাজেডি বলে অভিহিত করেছেন এবং শুক্রবার দিনকে শোক দিবস ঘোষণা করেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ টুইট করে বলেছেন, “তার কর্মীরা ‘আহতদের (ইসরায়েল) হাসপাতালে মানবিকভাবে সরিয়ে নিতে' সহায়তা করবে।”
বিবিসি বলছে, বিদ্যুতের ভয়াবহ ঘাটতির ফলে গাজায়- প্রায়শই মোমবাতির কারণে মারাত্মক আগুন লেগে যাওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই উপত্যাকায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের একটি।
জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৬ লাখ শরণার্থী আটটি জনাকীর্ণ শিবিরে বসবাস করছে। সেই হিসেবে গড়ে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোক রয়েছে যা লন্ডনে জনসংখ্যার ঘনত্বের সমান। তবে গাজা সিটিতে এই সংখ্যা ৯ হাজার জনেরও বেশি।