বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে “সুপারবাগ ইনফেকশন”। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী এই সুপারবাগ ২০১৯ সালে ১২ লাখের বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া তার বিরুদ্ধে কার্যকর সব ওষুধ প্রতিরোধে সক্ষম হয়ে ওঠে তখন সেটিকে সুপারবাগ বলা হয়।
ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপারবাগ সংক্রমণে ২০১৯ সালে যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন তাদের শরীরে সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলেও তা কাজে আসেনি।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান সুপারবাগ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ, পানি ও বায়ু দূষণ রোধ করা জরুরি। এই মহামারির ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে এক কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
এছাড়া বায়ু ও বিষাক্ত বর্জ্যের দূষণে পরিবেশ দূষিত হয়ে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ৯০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পিওর আর্থ নামে দূষণ নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক সংগঠনের প্রধান বলছেন, “আমরা একটি গরম পাত্রে বসে আছি এবং ধীরে ধীরে জ্বলছি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, ম্যালেরিয়া ও এইচআইভির মতো পরিবেশ দূষণে অত গুরুত্ব দিচ্ছি না। ২০১৭ সালে একই গবেষণার একটি প্রাথমিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, দূষণে প্রতিবছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। অর্থাৎ ছয়জনে একজনের মৃত্যুর কারণ দূষণ। এতে করে প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে।
মঙ্গলবার “সুপারবাগ”র বিষয়ে জাতিসংঘ বলেছে, “ক্রমবর্ধমান দূষণের উত্সগুলোর ব্যবস্থাপনার অভাবের সঙ্গে ক্লিনিকাল বজ্র ও কৃষির রাসায়নিক এই মহামারির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। প্রধান অর্থনৈতিক খাত পরিবেশ দূষণের সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের অব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে প্রধানতম দায়ী।
বড় ধরনের সংকটে পরিণত হওয়ার আগেই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) ঠেকাতে এখনই টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সহজলভ্যতার কারণে বিশ্বব্যাপী অণুজীব-বিরোধী প্রতিরোধ্যতার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সংক্রমিত হয় যার ফলে কমপক্ষে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ মারা যায়।
অব্যবস্থাপনার ফলে এএমআর একবার পরিবেশে প্রবেশ করলে তারা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে মাছ ও গবাদি পশুতেও এর উপাদান ছড়িয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধী জিনগুলো ভারতের গঙ্গা নদী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যের ক্যাশে লা পাউড্রে নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।
যুক্তরাজ্যের অ্যাস্টন ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জোনাথন কক্স এএফপিকে বলেছেন, “এটি একটি বাস্তব সমস্যা। নদীগুলো আমাদের পানীয় জলের প্রধানতম উৎস। এটি ইতিমধ্যে নিরব মহামারি।”
জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে পয়ঃনিষ্কাশন, শহরের বর্জ্য, স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ, ওষুধ উত্পাদন ও নিবিড় শস্যখাতসহ প্রধান দূষণের উত্সগুলো নিয়ন্ত্রণে আহ্বান জানিয়েছে।