ভারতের হলদি নদীর ধারে মেরিন ড্রাইভে টোটোস্ট্যান্ডে মাত্রই টোটো রেখেছেন রাজু বেরা। হঠাৎই খেয়াল করলেন একটি বড় প্যাঁচাকে তাড়া করছে কাকের দল। প্রাণভয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ওড়ার পর আর না পেরে প্যাঁচাটি মাঝনদীতেই গেল পড়ে। কী হল দেখতে টোটো ফেলেই নদীর পাড়ে ছুট লাগালেন রাজু, ভুলু, চন্দন ও গণেশ। নদীতে পড়ে প্যাঁচাটি তখন হাবুডুবু খাচ্ছে।
সাথে সাথেই নৌকায় চেপে বসেন রাজু ও তার সঙ্গীরা। মাঝনদীতে প্যাঁচাটির প্রাণ তখন যায়যায়! নৌকা কাছাকাছি পৌঁছতেই বরফ শীতল পানি উপেক্ষা করেই নদীতে ঝাঁপ দিলেন রাজু। কোনোরকমে প্যাঁচাটিকে উদ্ধার করলেও ঘটে গেল অন্য বিপদ। ভাটার টানে তলিয়েই যাচ্ছিলেন তিনি। বন্ধুকে বাঁচাতে নৌকা থেকে নদীতে কাছি ফেলে দেন সঙ্গীরা। কাছি ধরে নিজেকে রক্ষার পাশাপাশি প্যাঁচাটিকেও বাঁচিয়েছেন রাজু।
নৌকা পাড়ে আনার পরে একই সঙ্গে প্যাঁচা ও বন্ধু রক্ষা পাওয়ায় আনন্দ তখন সঙ্গীদের চোখেমুখে। সকালে মেরিন ড্রাইভে হাঁটতে বের হওয়া মানুষজনের ভিড় তখন নদীর পাড়ে। একটা প্যাঁচাকে বাঁচাতে এ ভাবে জীবন বিপন্ন করায় সকলেই তখন তাদের প্রশংসায় ব্যস্ত।
তবে প্রশংসায় নয়, রাজু ও তার দল তখন ব্যস্ত প্যাঁচাটির সেবা-শুশ্রূ়ষায়। আগুনে কাপড় গরম করে তা দিয়ে প্যাঁচাটির গায়ে সেঁক দিয়ে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা চলছিল। সাহায্য করেছেন নৌকার মাঝিও। এমন কি প্যাঁচাটিকে বাঁচানোর এমন মানবিক চেষ্টায় মুগ্ধ মাঝি ভাড়া নিতে অসম্মতি জানালেন।
এটা প্রথমবার নয়, পাখি বাঁচাতে এর আগেও একাধিকবার এগিয়ে এসেছেন রাজুরা। পড়াশোনা খুব বেশি দূর না করে থাকলেও পরিবেশ রক্ষায় পাখি গুরুত্ব তারা ঠিকই বোঝেন। গোটা হলদিয়া মহকুমায় পাখি বাঁচাতে এদের চেষ্টা সম্পর্কে প্রায় সবাই'ই। কাঁপা কাঁপা হরফে নদীর তীরে কাগজে লিখে টাঙিয়েছেন নিজেরাই —‘পাখি মারবেন না, পাখি ধরবেন না’। শুধু কাগজেই নয়, পাখি শিকারিদের হাত থেকে পাখি বাঁচাতে টোটো চালানোর ফাঁকে কড়া নজরদারিও রাখেন রাজু, গণেশ, চন্দনরা।
এদিকে প্যাঁচাটি একটু সুস্থ হতেই স্বস্তির হাসি দেখা যায় রাজু, চন্দন, গণেশ, ভুলুর মুখে।
রাজুদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, এ ভাবে বিপদ মাথায় নিয়ে মাঝনদীতে ঝাঁপ দেওয়ায় তারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে স্থানীয় পরিবেশবিদ শিশির আলির মতো স্থানীয়দের অনেকেরই মত, এমন কাজের জন্য রাজুদের পুরস্কৃত করা উচিৎ।