তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে। দেশটির নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট অর্জন পেয়েছেন এরদোয়ান। এর মধ্য দিয়ে তুরস্কের ১৩তম প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন এরদোয়ান। সংসদীয় ব্যবস্থা বাতিল করে প্রেসিডেন্টশাসিত ব্যবস্থার দিকে যাওয়ায় এখন আগের চেয়ে আরও বেশি ক্ষমতা পাচ্ছেন এরদোয়ান।
এর আগে রবিবার (২৪ জুন) বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, এরদোয়ান ৫২.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
গত বছর অনুষ্ঠিত গণভোটে সাংবিধানিক পরিবর্তনের পক্ষে রায় আসার পর রবিবার (২৪ জুন) প্রথমবারের মতো একযোগে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয় তুর্কি জনগণ। ওই গণভোটে দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে নির্বাহী প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থায় পরিণত করার পক্ষে রায় এসেছিল। নতুন ব্যবস্থা অনুযায়ী, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট উল্লেখযোগ্য নির্বাহী ক্ষমতা পাবেন। পাশাপাশি প্রধান মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত করতে পারবেন তিনি। পার্লামেন্টের মনিটরিং করার ভূমিকাও বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন নতুন নির্বাহী প্রেসিডেন্ট।
তুরস্কের সর্বোচ্চ নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ (ওয়াইএসকে)-এর প্রধান সাদি গুভেন আঙ্কারায় সাংবাদিকদের জানান, রবিবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ৯৭.৭ শতাংশ ব্যালট গণনা শেষে এরদোয়ান ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়। কোনও প্রার্থী যদি প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট না পান, তবে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হয়। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দ্বিতীয় দফায়। প্রথম দফা নির্বাচনের পনের দিন পর অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় দফা নির্বাচন। যদিও ইতোমধ্যেই পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে গেছেন এরদোয়ান। তাই দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনও প্রয়োজন হবে না।
২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এরদোয়ান। ২০১৪ সালেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। তার প্রধান সমর্থক হচ্ছেন রক্ষণশীল এবং ধার্মিক অপেক্ষাকৃত বয়স্ক তুর্কিরা। ২০১৬ সালের এক 'ব্যর্থ গণঅভ্যুত্থানের' পর ২০১৭ সালে এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেন এরদোয়ান। এতে তিনি দেশটিকে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্টশাসিত ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে জনরায় পান। এরদোয়ান এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করায় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, ভাইস প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন এবং যেকোনো সময় সংসদ ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন।
রবিবার বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণার পর পরই সাংবাদিকদের এরদোয়ান বলেন, "শাসক নয়,বরং সবসময় জনগণের সেবক হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার জনগণ এ ব্যাপারে সজাগ। ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের ভালোবাসার জানান দিয়েছেন।"
তিনি বলেন, "প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে তুরস্ক দুনিয়াকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়েছে। এ নির্বাচনে তুরস্কের জনগণ,এ অঞ্চল এবং দুনিয়ার সব নিপীড়িত মানুষের বিজয় অর্জিত হয়েছে।"
এদিকে এরদোয়ানের বিজয়ের খবরে রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তার সমর্থকরা। আঙ্কারায় সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র জিতে গেছে, জনগণের ইচ্ছার জয় হয়েছে। তুরস্ক জিতে গেছে।’
বিশ্বনেতারও ইতোমধ্যেই এরদোয়ানকে অভিনন্দন বার্তা পাঠাতে শুরু করেছেন। এদের মধ্যে আছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, টার্কিশ রিপাবলিক অব নর্দার্ন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা আকিঞ্চি, বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসোভ প্রমুখ।
রবিবার একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পার্লামেন্ট নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্স। ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছে এরদোয়ানের জোট। সিএইচপি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স পেয়েছে ৩৪ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট।
৬০০ আসনের পার্লামেন্টে এরদোয়ানের দল একেপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৩ জন এমপি। জোট শরিক এমএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৫০ জন। কামাল আতাতুর্কের দল সিএইচপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৬ জন এমপি। তাদের জোট শরিক ইয়ি পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৪ জন।