বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ, শোষণ, নির্যাতন আর নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার প্রতিবাদে দেশের মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানি বর্বরতার বিপরীতে জন্ম নিয়েছিল একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ।
সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান।
তিনি বললেন, “আজ আমাদের বুঝতে হবে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সঙ্গে কত বড় অত্যাচার হয়েছে। তাদের যে পার্টি নির্বাচন জিতেছিল, যার প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল, তার বিরুদ্ধে মিলিটারি অ্যাকশন নিলো।”
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে শনিবার (১৩ মে) জাতির উদ্দেশে ভার্চ্যুয়ালি দেওয়া এক ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। ভাষণটি ইউটিউবে প্রচারিত হয়।
একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তান। তবে, এখন পর্যন্ত পাকিস্তান এই হত্যাকাণ্ডের ও নৃশংসতার জন্য ক্ষমা চায়নি। পাকিস্তানি নৃশংসতার কথা দেশটির অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদিও বারবার স্বীকার করেছেন।
গত ৯ মে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১১ মে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এই গ্রেপ্তারকে “বেআইনি” ঘোষণা করেন। ১২ মে এ মামলায় তাকে দুই সপ্তাহের জামিন দেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়।
ইমরান খান তার ভাষণে বলেন, “আজ আমি আবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, পূর্ব পাকিস্তানের কথা। আমার জীবনেই হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান। মার্চ ১৯৭১ সালে আমি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম পূর্ব পাকিস্তান অনূর্ধ্ব উনিশের বিরুদ্ধে। আমাদের যে জাহাজ ফেরত এসেছিল, তা ছিল শেষ জাহাজ। আমার এখনো মনে আছে, কী ঘৃণা ছিল তাদের (পূর্ব) পাকিস্তানের (পশ্চিম) বিরুদ্ধে। আমাদের তো তা জানাই ছিল না।”
সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, “এই যেমন আজ মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তখনো সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। তফাত এই যে আজ সোশ্যাল মিডিয়া আছে। এরা (পাকিস্তানের বর্তমান সরকার) সোশ্যাল মিডিয়াও বন্ধ করে দিল। এরা নিজেদের ভাষ্য শোনাতে চায়। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব সব বন্ধ করে দিল। দেশের কত ক্ষতি হলো, শুধু এ জন্য যে ইমরান খানকে ধরতে হবে। এই প্রতিক্রিয়া তারা দেখালেন।”
ইমরান খান বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানেও এই হয়েছিল। আমাদের ছিল নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া, পাকিস্তান টাইমস। আমরা কোনো খবরই পেতাম না। শুধু পিটিভি ছিল। সে তো ইংল্যান্ড গেলাম পড়তে, সেখানে জানলাম কী হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সঙ্গে কত বড় অত্যাচার হয়েছে।”
“পূর্ব পাকিস্তানের যে পার্টি নির্বাচনে জিতেছিল যাকে তারা প্রধানমন্ত্রী বানাতে চেয়েছিল, বানানো উচিত ছিল। তার বিরুদ্ধে মিলিটারি অ্যাকশন নিয়ে নিল! দেশের বিভাজন উস্কে দিল। ৯০ হাজার সৈন্য আমাদের কয়েদি হয়ে গেল, আত্মসমর্পন করল। কী পরিমাণ ক্ষতি হলো আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “কারণ বন্ধ কামরায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কয়েকজন মিলে বসে পড়েন সিদ্ধান্ত নিতে, যারা জানেই না বাকি পৃথিবী কীভাবে চলে। বন্ধ কামরায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। এসব সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতি হলো কি-না সেটাও তারা কাউকে জানতে দেয় না।”
তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সেনাবাহিনী দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি তাদের বলেছিলাম আমাকে ওয়ারেন্ট দেখাতে। আমি তাদের সঙ্গে যেতে প্রস্তুত ছিলাম। আমরা সেখানে শান্তভাবে বসে ছিলাম, কিন্তু তারা জানালার কাঁচ ভেঙে এমনভাবে আক্রমণ করেছে যেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সেখানে বসে আছে। সেনাবাহিনী সেখানে যা করেছে… রেঞ্জাররা সেনাবাহিনীরই অংশ, কাউকে গ্রেপ্তার করা তো পুলিশের কাজ। রেঞ্জাররা সেখানে কী করছিল?”
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাকে হত্যার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমি জানি আমাকে গত বছর হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনায় শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত জড়িত সবার নাম আমি জানি। আমি জানি সবুজ বাতি কে দিয়েছে, তাদের সবুজ বাতি কে দিয়েছে সেটিও আমি জানি। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল দুই বেসামরিক ব্যক্তি-শেহবাজ শরিফ (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী) ও রানা সানাউল্লাহর (পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)।”
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামা আসা সমর্থক, বিশেষ করে নারী সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা “নির্লজ্জের মতো” দমন- নিপীড়ন করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।